দেবু সিংহ, মালদা:- জন্ম থেকেই দুচোখে দৃষ্টিহীন। পিতৃহীন আনসারুল এর সংসারে চরম দারিদ্র্য। দারিদ্র্যের বাধা কাটিয়ে এবার রাইটার এর সাহায্য নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে বসেছে আনসারুল হক। আনসারুল এর বাড়ি মালদা জেলার রতুয়া থানার বলদিপুকুর গ্রামে। সে জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন। ২০১১ সালে বাবা ইউসুফ কে হারিয়েছে। তখন থেকেই মা জরিনা বিবি হাজারো কষ্টের মধ্যে তাদের তিন ভাইবোনকে মানুষ করেছে। আর এক বড় ভাই কলিমুদ্দিন এখন ভিন রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিক।বাবা ইউসুফ তিনিও ভিন রাজ্যের শ্রমিকের কাজ করতেন। শ্রমিকের কাজ করতে করতেই অজানা জ্বরে ২০১১ সালে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তারপর থেকেই সংসারের কর্মক্ষম একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে তারা অথৈ জলে পড়ে। তার বোন রোশন আরা খাতুন এখন স্কুলের। বিভিন্ন অভাব দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করে আজ জন্ম থেকেই দৃষ্টিহীন আনসারুল উচ্চমাধ্যমিকে র পরীক্ষার্থী।সে দশম শ্রেণী পর্যন্ত চান্দুয়া দামাই পুর হাই মাদ্রাসা ছাত্র ছিল কিন্তু পরে মিলনগড় সাজ্জাদ মাদ্রাসায় ভর্তি হয়। এবার তার উচ্চ মাধ্যমিকের সিট পড়েছে মিটনা হাই স্কুলে। সে রাইটার ইজাজ আহমেদ এর সাহায্য নিয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে আনসারুল হক জানায় প্রচুর দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করে আসছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারছে। শুনে তার দাদা ও মায়ের ভূমিকা অপরিসীম। বাবা মারা যাওয়ার পরে মা অনেক কষ্ট করে তাকে মানুষ করেছে। কোনদিনও দৃষ্টি না থাকার অভাব বুঝতে দেননি। পরিবার-পরিজন থেকে শুরু করে স্কুলের বন্ধুবান্ধব ও বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে সাহায্য করেছে। তাই আছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতে পারছে। আগামীতে সে চাই ভালো কোন চাকরি করে সংসারের অভাব মেটাতে। তার রাইটার হিসাবে খুব সাহায্য করেছে ইজাজ আহমেদ। আনসারুল আশা করছে আগামী পরীক্ষাগুলো সে খুব ভালো ভাবে দেবে। বিদ্যালয় থেকে দুবার স্কলারশিপ পেয়েছে। আশা করবে ভবিষ্যতে সরকার তার পাশে দাঁড়াক যাতে সে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
এ প্রসঙ্গে তার রাইটার ইজাজ আহমেদ জানালেন রাইটার হিসেবে সাহায্য করা ছাড়াও পড়াশোনা তো আনসারুল কি যথাসাধ্য সাহায্য করে।
আনসারুল রুমমেট শফিকুল আলম জানালেন আমরা আনসারুল এর পাশে সবসময় রয়েছি। সারাদিনে আমরা আনসারুল কে বিভিন্নভাবে সাহায্য করি। জন্য আমাদের কখনো বিরক্ত মনে হয় না। দরিদ্র কিন্তু খুব মেধাবী। আশা করব আনসারুল বড় হয়ে ভালো চাকরি পাবে এবং তার সংসারের মুখে হাসি ফোটাবে।
আনসারুল হক এর মা জরিনা বিবি জানালেন ছোট থেকে খুব দরিদ্র কষ্টের মধ্যে দিয়ে তার তিন ছেলে মাকে তিনি মানুষ। দৃষ্টিহীন ছেলেকে নিয়ে তার খুব চিন্তা। দূরে পরীক্ষা দিতে গেছে এ নিয়ে সব সময় চিন্তা হয়। আনসারুল পড়াশোনা শেষ করে তাড়াতাড়ি একটা কাজ করুক যাতে সংসারের অভাব দূর হয়।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানা উচ্চ মাধ্যমিক সেন্টারের সম্পাদক মফিজ উদ্দিন আহমেদ জানালেন আনসারুল হক দৃষ্টিহীন মেধাবী ছাত্র।আর জন্য বোর্ড থেকে রাইটারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরাও সেন্টারের পক্ষ থেকে তার পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আলাদা ঘরের ব্যবস্থা করেছি।সে যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে সব সময় তার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে স্কুল সেন্টারের পক্ষ থেকে।