মলয় দে, নদীয়া:-বৈদিক যুগ থেকেই জামাইষষ্ঠী পালন হয়ে আসছে মাটির প্রতিমা কিংবা আঁকা ছবিতে, অনেকে আবার ঘটেও পুজো করে থাকেন। তবে মা ষষ্ঠীর বাহন কিন্তু বিড়াল।
কথিত রয়েছে, একবার এক গৃহবধূ স্বামীর ঘরে নিজে মাছ চুরি করে খেয়ে দোষ দিয়েছিলেন বিড়ালের উপর। ফলে তাঁর সন্তান হারিয়ে যায়। তাঁর পাপের ফলেই এই ঘটনা ঘটে বলে মনে করা হয়। তখন সেই মহিলা বনে গিয়ে ষষ্ঠীদেবীর আরাধনা শুরু করেন৷ দেবী তুষ্ট হন৷ ফলে বনেই তিনি নিজের সন্তানকে ফিরে পান। এই জন্যই ষষ্ঠীদেবীর অপর নাম অরণ্যষষ্ঠী।এদিকে মাছ চুরি করে খাওয়ার জন্য শ্বশুর-শাশুড়ি ওই বধূর পিতৃগৃহে যাওয়া বন্ধ করে দেন। এই অবস্থায় মেয়েকে দেখার জন্য ব্যাকুল মা-বাবা একবার ষষ্ঠীপুজোর দিন জামাইকে সাদরে নিমন্ত্রণ জানান। জামাইষষ্ঠী পুজোর দিনে সস্ত্রীক উপস্থিত হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় বাড়িতে।ষষ্ঠীপুজো রূপান্তরিত হয় জামাইষষ্ঠীতে।
প্রতিবছর জৈষ্ঠ মাসের শুক্লা ষষ্ঠীতে প্রথম প্রহরে সন্তানাদির দেবী বিন্ধ্যবাসিনী স্কন্দ ষষ্ঠী মাতা কে সন্তুষ্ট করতে হয়। যাতে তিনি তার কন্যাকে সন্তানবতী করতে পারেন, বংশ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সন্তান ধারণে সক্ষম হয় সেই কারণেই, সদ্য বিবাহিত মেয়ে জামাইকে বাপের বাড়িতে তার নিজ গৃহে যত্ন-আত্তি করে, দেবীর কাছে বর প্রার্থনা করে থাকেন। তবে সন্তান হয়ে যাওয়ার পরও, নাতিনাতনীর মঙ্গলকামনায় প্রতি বছর এই দিনে ব্রতী হন দিদিমা। আরও একটি কারণ হচ্ছে, আগেকার দিনে বিবাহ দেওয়ার পর, সন্তান না হওয়া পর্যন্ত বাপের বাড়ি আসতে পারতো না মেয়েরা! এমনকি কন্যা দান করা পিতা বা পিতৃস্থানীয় কেউ জল স্পর্শ করতে পারতো না সন্তানাদি না হওয়া পর্যন্ত! তাই অন্তঃপুরবাসিনী মেয়ের মুখদর্শনের উদ্দেশ্যে এই দিনটি যথার্থ।
তারমানে মূল পুজোটা, মেয়ে কেন্দ্রিক, তবে পুরুষ প্রধান সমাজে, জামাই কে হলুদ সুতো বেঁধে সম্মান দেয়ার জন্য পরবর্তীতে জামাইষষ্ঠী রূপ ধারণ করেছে। এক কথায় বলতে গেলে জামাইরা মূল অনুষ্ঠানটিকে হাইজ্যাক করেছে।
এই মরশুমের নানান ফল, মিষ্টি এবং নতুন বস্ত্র নিয়ে স্বস্ত্রিক জামাই এসে পৌঁছান তার শ্বশুরবাড়িতে। অন্যদিকে শাশুড়ি উপোস থেকে ষষ্ঠী ব্রত করে, সারাদিন দই চিড়া ফল মিষ্টান্ন এবং নিরামিষ পঞ্চ ব্যঞ্জন আহারে মগ্ন রাখেন শাশুড়ি মাতা। তবে তালের পাতা বাতাস করে জামাতার মাথা ঠান্ডা রাখার সুকৌশলে মেয়ের বাপের বাড়ির থাকার দিন বাড়াতে । পরের দিন অবশ্য, মাংস মাছ বাজার থেকে নিয়ে আসার রীতি জামাইদের। তবে কথায় আছে “যম জামাই ভাগনা, তিন নয় আপনা”।