কলকাতার কাছাকাছি অরণ্যের নির্জনতা উপভোগ করতে হলে,গন্তব্য হতে পারে বেথুয়াডহরী অভয়ারণ্য।
শিয়ালদহ-লালগোলা শাখার যেকোনো ট্রেনে বেথুয়াডহরী স্টেশনে নেমে টোটো/অটো/বাসে করে পৌছোনো যায় এই অভয়ারণ্যে।তবে গাড়ী করেও যেতে পারেন।সময় লাগবে বেথুয়াডহরী স্টেশন থেকে মাত্র ১০মিনিট।
এখানে রাত্রিযাপন করতে হলে আগে থেকেই বুকিং করে আসতে হবে। জঙ্গলের ভিতরে দু’ধরনের থাকার ব্যবস্থা আছে। সরকারী বিশ্রামালয়, যেখানে রুম বুক করা আমাদের মতো আমজনতার পক্ষে অসম্ভব। আর আছে, দুটো সরকারী কটেজ (ময়ূর ও ময়ূরী), যেটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন বিভাগের- https://wbsfda.org সাইট থেকে বুক করতে পারবেন। (৫০০.০০ টাকা রাত্রি পিছু,ডাবল বেডের রুম )সরকারী কটেজে একরাতের জন্য বুকিং করে, আমরা দুই বন্ধু বেড়িয়ে পড়েছিলাম বেথুয়াডহরীর উদ্দেশ্যে।অনেকেই বলেন বেথুয়াডহরীতে দেখার কিছু নেই। কিন্তু যা আছে সেটাও কম না, সবুজ বনানী, পাখির কলতান, ঝিঝিঁর কোরাস, আর অখন্ড নির্জনতা।
তবে আপনি যদি কয়েকঘন্টার জন্য জঙ্গল ঘুরতে যান, তাহলে আপনার পক্ষে বেথুয়াডহরীকে উপভোগ করা সম্ভব হবে না। মনে হবে,”না আসলেই ভালো হত”।
এখানের জঙ্গলে ঘোরার উপযুক্ত সময় হল বিকেলবেলা অথবা সকালবেলা। তখন মানুষের কোলাহল কমে আসে। হরিণের দল বাইরে বেরিয়ে আসে। জঙ্গলের ভেতরে অনেকগুলো জলাশয় আছে, কোনো একটা জলাশয়ের ধারে দেখতে পাবেন, হরিণের পাল জল খেতে এসেছে। কখনো বা দেখতে পাবেন, পায়ে চলা রাস্তায় দাড়িয়ে আছে হরিণের দল।
তাছাড়া, সকালবেলায় হরিণকে খেতে দেওয়া হয়। এইসময় বাইরের লোকজন ভেতরে ঢুকতে পারেন না। একমাত্র যারা ভেতরে থাকেন, তারাই এই দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন।
এছাড়া, এখানে দেখতে পাবেন ঘড়িয়াল, ময়াল, ময়ূর, শিয়াল তাছাড়াও আছে নানাজাতের পাখি আর প্রজাপতি। প্রজাপতি আর পাখি দেখার জন্য কিন্ত দেখার চোখ চাই।
আগে, বোটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। এখন নেই। আরেকটা কথা, বনদপ্তরের কর্মীরা কিন্তু আপনাকে বেশীরভাগ জায়গাতেই ঢুকতে দেবে না। তবে, আপনি যদি কোনোভাবে ঢুকে যেতে পারেন, তাহলে এই অরণ্যকে আরো নিবিড়ভাবে উপভোগ করতে পারবেন, পাবেন বুনোফুলের মাদক গন্ধ। দেখবেন, কোনো কোনো পায়ে হাটার রাস্তা মাকড়সার জালে ভর্তি হয়ে আছে। কোথাও বা রাস্তার মাঝেই তালগাছ দাড়িয়ে আছে।
সবমিলিয়ে একদিনের জন্য খারাপ নয়, এই অরণ্য। খাওয়া-দাওয়ারও বেশ ভালো বন্দোবস্ত আছে। এখানকার, একজন বনদপ্তরের কর্মী, নন্দবাবু’কে ফোন (০৭০৪৭৯৩৮৫৭৮) করে দিলে, তিনি তিন বেলার খাবারের ব্যবস্থা করে দেবেন। আমাদেরকে দুপুরে কাতলা মাছ, রাতে দেশী মুরগী খাইয়েছিলেন।
মুর্শিদাবাদের দিকে “ছানাবড়া” মিষ্টি বিখ্যাত। এখানেও, ছানাবড়া পাবেন। বেশ খেতে।
তাহলে পরবর্তী দু’দিনের ছুটিতে আপনার গন্থব্য হোক বেথুয়াডহরী l