আমতায় মৌন পদযাত্রা,অমর একুশে ফেব্রুয়ারী স্মারক গ্ৰন্থ প্রকাশ, আলোচনা চক্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একুশের প্রদশর্নী

Social

 ‌অভিজিৎ হাজরা, আমতা, হাওড়া :- ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, মাতৃভাষা রক্ষার্থের আন্দোলনে যে সমস্ত বীর আত্নবলীদান দিয়েছিলেন তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেতে উঠলো আমতাবাসী। এদিনের আমতায় প্রথম অনুষ্ঠানটি হলো আমতা থানার প্রবেশ পথের পাশে। ভাষার টানে, জীবন বাংলা গানে। বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আমতা থানার পাশে পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ভাষা শহিদদের স্মরণে স্মৃতি স্তম্ভ স্থাপন হয়েছিল আমতায়।

আমতা ১ নং ব্লকের রসপুর গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত কলিকাতা গ্ৰামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ অগ্ৰগতি ‘ – র উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় এই স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয় ১৯৯০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি।এর তিন বছর পর ১৯৯৩ সালে কলকাতার কার্জন পার্কে স্থাপিত হয় ভাষা স্মৃতি ফলক।২০১১ সালে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কে স্থাপিত হয় আর ও এক স্মৃতি ফলক।২০১১ সালে ২০ শে ফেব্রুয়ারি আমতা -র কানপুর গ্ৰামে পুরাশ সারঙ্গ – র আয়োজনে একুশে স্মারক স্মৃতি স্তম্ভ নির্মিত হয়। ভাষার টানে, জীবন বাংলা গানে। বাংলা ভাষা মর্যাদা রক্ষায় যাঁরা শহিদ হয়েছেন তাঁদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা তর্পনে আমতা থানার প্রবেশ পথের পাশে ‘ অগ্ৰগতি ‘ উদ্যোগে ও ব্যবস্থাপনায় পশ্চিমবঙ্গে প্রথম ভাষা শহিদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতি স্তম্ভে ৪৮ তম বর্ষে পালিত হল অমর একুশে ফেব্রুয়ারী – অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠান ডালিতে ছিল শহিদ স্মৃতি স্তম্ভে মাল্যদান, কবি – সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন গণ সংগঠনের সভ্য -সভ্যা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতিতে মৌন পদযাত্রা,অমর একুশে ফেব্রুয়ারী স্মারক গ্ৰন্থ প্রকাশ, আলোচনা চক্র, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, একুশের প্রদশর্নী। মৌন পদযাত্রা আমতা শহর পরিক্রমা করে।শহিদ স্মৃতি স্তম্ভে মাল্যদান করেন আমতা থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ অজয় সিং, আমতা মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক নির্মল কুমার বাগানী, আমতা মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অমৃতা চক্রবর্তী সহ উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। এই অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে ‘ অগ্ৰগতি ‘ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার সমাজসেবী তপন মন্ডল বলেন, ” বাংলা মাধ্যমে পড়ার মানসিকতা আজ তলানিতে ঠেকেছে। এরজন্য দায়ী ছাত্র -ছাত্রীরা একদমই নয়। অভিভাবক – অভিভাবিকারা এর জন্য দায়ী। পুরানো দিনে আমাদের মা – বাবা, আমাদের অতি যত্নে ছোটবেলা থেকেই নানা ঐতিহ্য মেনে মানুষ করেছেন। মাঠে – ঘাটে,ঝড় – বৃষ্টি মাথায় নিয়ে পুকুর – নদীতে সাঁতার কাটা,কাদা পায়ে হাঁটা,জল – কাদায় খেলাধুলা করা কোনটাতেই বাধা দেয় নি। আবার শৈশব থেকেই আমরা গল্পের ছলে রামায়ণ – মহাভারত, ঠাকুরমার ঝুলি, সমাজ সংস্কারের গল্প শুনে এসেছি। শৈশবেই শিশুর মস্তিষ্কে নৈতিকতা, মানবিক – সামাজিক মূল্যবোধের কথা, প্রকৃত মানুষ হওয়ার কথা প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হতো। যেমন মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা, কাউকে কখনো আঘাত না দেওয়া, অন্যায় না করা, অন্যায় কাজের সাথে নিজেকে যুক্ত না করা ও নিজে অন্যায় কাজে লিপ্ত না হওয়া, কোনো অশালীন আচরণ না করা, কাউকে কখনো অসম্মান না করা, কাউকে ছোট -বড় কথা না বলা ইত্যাদি। বয়স্কদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের শিক্ষা আগে ছোট থেকেই দেওয়া হোতো।অসৎ সঙ্গ ত্যাগ করার কথা বলা হোতো।একশোটি অসৎ ছেলের চেয়ে দশজন সৎ ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করা অনেক ভালো এই পরামর্শ দেওয়া হোতো শৈশব থেকেই। পিতামাতা, শিক্ষক – শিক্ষিকা গুরুজন। তাদের প্রতি সব সময়ই শ্রদ্ধা ভক্তির করার কথা বলা হোতো। আগে সব বাংলা মাধ্যম বিদ্যালয় ছিল।এত মিশনারী স্কুল ছিল না। আগে সংস্কৃত ই ছিল প্রধান ভাষা। বিভিন্ন স্থানে সংস্কৃতের টোল বসতো। গাছের তলায় দিব্যি পড়াশোনা হোতো। ব্রিটিশ আসার পরেই ইংরেজি শিক্ষার এত রমরমা হয়। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে মিশনারী স্কুল। মিশনারী স্কুলের ইংরেজি শিক্ষার দরকার। ইংরেজি অবশ্যই শিখতে হবে বা জানতে হবে। কিন্তু নিজের মাতৃভাষাকে বিসর্জন দিয়ে কেন? সবাই মাতৃ ভাষায় শিক্ষা গ্ৰহণ করুক। কিন্তু শুধু ইংরেজি বা হিন্দি ভাষা কেন? আজকাল বাবা – মায়েরা আদর করে তাদের সন্তান – সন্ততিদের স্কুলে নিয়ে যান। আবার স্কুল থেকে নিয়ে আসেন। সবখানে স্কুল বাস, স্কুলের অন্যান্য যানবাহনের ছড়াছড়ি। তখন এতো অল্প বয়সের সুগারের রোগী ছিল? তখন অল্প বয়সের এতো হার্টের রোগী ছিল? একুশে ফেব্রুয়ারী মাতৃভাষা দিবসে সকল সন্তান – সন্ততির মা – বাবাদের কাছে আমার আবেদন আপনাদের সন্তান – সন্ততিদের ইংরেজি আপনারা শেখান , কিন্তু মাতৃভাষা কে বাদ দিয়ে নয়। আমাদের মাতৃভাষা বাংলা তথা বিশ্বের গর্বের ভাষা। এই বাংলা ভাষাতেই বিশ্বকবি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। এই বাংলা ভাষা শেখা এই বাংলা থেকেই আমরা অনেক মনিষী কে পেয়েছি।কাজেই মাতৃভাষা কে অবহেলা করা মানে সর্বনাশ করা নিজেদের।যে বাবা -মা কষ্ট করে ছেলে মেয়েদের ইংরেজি স্কুলে পড়াচ্ছেন সেই ছেলে মেয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছে বা ভিন রাজ্যে চলে যাচ্ছে। ফলে বৃদ্ধ বাবা -মা একা একা অনেক কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন এমন ছবি অনেক ধরা পড়ছে। এই কি ইংরেজি শিক্ষার নমুনা? বাংলা মাধ্যমে পড়া ছেলে – মেয়েরা কিন্তু জীবনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বাবা – মা কে ভুলে যায় না ” । ‘ অগ্ৰগতি ‘ সংগঠনের কম্পিউটার সমাজসেবী মুস্তাক আলি মন্ডল এবং সংগঠনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কর্মী সমাজসেবী অতনু মন্ডল বলেন, ‘ বর্তমান প্রজন্ম মাতৃভাষার প্রতি উদাসীন।তারা ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করতে বেশি আগ্ৰহী। বাংলা ভাষা তাদের কাছে ‘ দুয়োরানী ‘ । অবশ্য এক্ষেত্রে এখনকার অভিভাবক – অভিভাবিকারা অনেকাংশেই দায়ী। তাঁরা তাঁদের সন্তান -সন্ততিদের প্রাথমিক স্তর থেকেই অর্থকরী অর্থাৎ বেশি অর্থ উপার্জন করার এমন শিক্ষা মাধ্যমকেই বেছে নিচ্ছেন, প্রকৃত শিক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মানুষ,সুনাগরিক হওয়াকে নয়। ফলে বর্তমান প্রজন্মের ছাত্র -ছাত্রীরা শৈশব কাল থেকেই মাতৃভাষার প্রতিটান অনুভব করে না। আজকের দিনে আমাদের শপথ হোক বাংলা ভাষা উচ্চারিত হোক বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে।

Leave a Reply