সন্তান লাভের আশায়, গণেশ কোলে নিয়ে পুজো দিতে এবারেও মায়েদের ভিড়

Social

মলয় দে নদীয়া:-ধর্মপ্রাণ নদীয়ার পুজোর শহর শান্তিপুর। একদিকে যেমন শাক্ত অন্যদিকে বৈষ্ণবদের বিভিন্ন ধর্মীয় আচরণ অনুষ্ঠান। বারো মাসে তেরো পার্বন লেগেই রয়েছে।

এমন বেশ কিছু পুজো আছে যা অন্যত্র খুব একটা লক্ষ্য করা যায় না, শান্তিপুরে সেই পুজোর খুব জাঁক। যার মধ্যে অন্যতম গণেশ জননী পূজা।
শান্তিপুর কাঁসারী পাড়া সংলগ্ন এলাকায় এই পুজোর ষষ্ঠ দিনে অর্থাৎ আজ বিসর্জন।
এখানে দেবী দুর্গা মাতৃরূপে, ছোটো গনেশ কে কোলে নিয়ে, এক পাশে সন্তান বাৎসল্য সংসারী দেবাধিদেব মহাদেব, অপর পাশে সাক্ষী হিসেবে নারদ।
পাঁচ দিন ভোগ আরতির , পুজো পাঠের পর , বিসর্জনের দিন অর্থাৎ আজ দেবী দুর্গার কোলে থাকা মাটির গণেশ খুলে, নতুন বিবাহিত অথবা সন্তান সম্ভাবা মায়েরা, কিংবা সদ্যোজাত সন্তানের মায়েদের কোলে দিয়ে মঙ্গলকামনা করে থাকেন।
গনেশ জননী মন্দিরের পার্শ্ববর্তী বাসিন্দা এবং পুজোর সহযোগিতা করা মীনাক্ষী ভকত, জানান এবারেও জেলার বিভিন্ন প্রান্ত এমনকি জেলা পেরিয়ে সুদূর মেদিনীপুর থেকেও পর্যন্ত সম্ভাব্য মা এবং সদ্যোজাত শিশুদের মায়েরা এসেছিলেন, গণেশ কোলে নিতে। এলাকার বাসিন্দা এবং অনেক জননী মায়ের ভক্তদের মাধ্যমে এই প্রচার হওয়ার ফলেই তাদের পরিচিত আত্মীয়-স্বজন অনেক দূর থেকেই আসেন। মায়েদের আগের দিন উপোস করে , পরের দিন সকালে গঙ্গাস্নান করে নতুন বস্ত্র পড়ে তবেই মন্দিরের গণেশ কলে নেওয়ার সুযোগ পান। গণেশের জন্য আনা মিষ্টান্ন এবং দক্ষিণা প্রদান করে, মনস্কামনা জানাতে পারেন একান্তে। ৬৯ বছর আগে ঠাকুর দালানে মূর্তি নির্মাণের সময় থেকেই, মাটির তৈরি গণেশ জননী প্রতিমার কোলে নিরাপদে মাটির তৈরি গণেশ থাকার বিশেষ ব্যবস্থা করে থাকেন মৃৎশিল্পী। সদ্যোজাত শিশুর মা এবং সম্ভাব্য মায়েদের বিশেষ ধরনের এক প্রসাদ দেওয়া হয়, যা মন্দিরে বসেই গ্রহণ করতে হয়। তবে মিনাক্ষী দেবীর মতে, মায়েদের মনস্কামনা নিশ্চয়ই পূরণ হয় আর সেই কারণে ক্রমাগত ভিড় বাড়ছে আজকের দিনে।
পূজারী রঘুনাথ ভট্টাচার্য বলেন, তিনি ১৫ বছর ধরে পূজা করছেন এই মন্দিরে, সে সময়ে বিশেষ আশীর্বাদ পেতে সে সময়ের থেকে এখন মায়েদের আগমনের সংখ্যা অনেক বেশি।

এলাকা সূত্রে জানা যায় সে সময় পাঁচ দিনব্যাপী এই পুজো উপলক্ষে তরজা গান, কবিগান, যাত্রা নাটক অনুষ্ঠিত হতো উন্মুক্ত সমস্ত জায়গায় বসতো মেলা। সমগ্র বড়বাজার অঞ্চল জুড়ে ভিড় লেগে থাকত সারা শান্তিপুর সহ নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষজনের কারণে। তবে এখন পরিবর্তিত হয়েছে সাংস্কৃতিক বিভিন্ন ধরনের ঘরোয়া অনুষ্ঠানে, যা এলাকার মহিলা এবং শিশুরা উপভোগ করে থাকে এই ছয় দিন। বহিরাগত ভক্তবৃন্দরাও আসেন। তবে এবার সে সমস্ত বাতিল হয়েছে এলাকার ২ খুদে সদস্য র জলে ডুবে মৃত্যুর কারণে । তবে পুজোর রীতিনীতি মণ্ডপসজ্জা সমস্ত কিছু অব্যাহত ছিল এ বছরেরও।
গতবছর গণেশ জননী কমিটির, তারা ভগ্ন প্রায় মন্দিরটি সংস্কার করে নতুন রূপ দিয়েছেন।
তবে ভক্তবৃন্দদের কাঁধে চেপে প্রতিমার বিসর্জনের শোভাযাত্রাও শান্তিপুর বাসীর কাছে একা আবেগ।

Leave a Reply