মলয় দে নদীয়া:- গত বছর ১৮ই ফেব্রুয়ারি নদীয়ার কৃষ্ণনগর ঘূর্ণীতে প্রয়াত জননেতা বঙ্গবিভূষণ শান্তিপুরের কাশীকান্ত মৈত্রের জন্ম শতবর্ষের সূচনা হয়েছিল মহাসড়ম্বরে। এ বাদেও নানান সময়ে নানান রকম সামাজিক দায়িত্ব পালন এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করে থাকেন তার অনুগামীরা তবে তা
কৃষ্ণনগর ঘূর্ণীতে অবস্থিত পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্র স্মৃতি সমাজ কল্যাণ কেন্দ্রের নিজস্ব ভবনে এবং তাদেরই তত্ত্বাবধানে।পশ্চিমবঙ্গের ৬ বারের প্রাক্তন বিধায়ক,রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী,ও বর্ষীয়ান আইনজীবী কাশীকান্ত মৈত্র।
লকডাউন শুরুর আগে পর্যন্তও কলকাতা হাইকোর্টে নিয়মিত যাতায়াত করেছেন ৬৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে এই পেশায় থাকা কাশীকান্তবাবু।
১৯৬২ সালে তিনি প্রথম বার প্রজা সোশ্যালিস্ট পার্টির (পিএসপি) হয়ে কৃষ্ণনগর পূর্ব কেন্দ্র থেকে বিধানসভা নির্বাচনে নির্বাচিত হন। পর পর দু’বার ১৯৬৭ ও ১৯৬৯ সালে সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির (এসএসপি) টিকিটে বিধায়ক হন তিনি। তবে ১৯৭১ সালে তিনি জয়লাভ করেন কংগ্রেসের সমর্থনে। পরের বছর কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে খাদ্য ও পশুপালনমন্ত্রীর দায়িত্ব পান কাশীকান্তবাবু। সে সময় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়। কিন্তু এক আর্থিক কেলেঙ্কারির ঘটনায় তাঁর আপ্ত সহায়ক জড়িয়ে পড়লে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করেন কাশীকান্তবাবু।
শান্তিপুরে তার জন্ম এবং বসবাস হলেও সেখানে তাঁর পৈত্রিক বাড়িতে বর্তমানে বসবাসকারী আত্মীয়-স্বজনদের তাঁর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ছাড়া আর কোন বিশেষ অনুষ্ঠান খুব বেশি লক্ষ্য করা যায়নি অতীতের মতন এ বছর শতবর্ষেও।
তবে এবছর নানান কর্মসূচির মধ্যে দিয়ে পালিত হলো শান্তিপুর বন্ধুসভা পরিচালন কমিটি এবং নদীয়ার যুগবার্তা পরিবারের পক্ষ থেকে ।
আজ তার পৈত্রিক ভিটে শান্তিপুরের বাসভূমিতে জন্ম শতবর্ষ পালনের সূচনা হিসেবে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন কলকাতা প্রেস ক্লাবের দায়িত্বে থাকা কিংশুক প্রামানিক, শান্তিপুরের বিভিন্ন লেখকের বিভিন্ন লেখনী পুনঃ মুদ্রণ করানো এবং কর্নিয়া সংগ্রহকারী সংস্থা মরমীর সদস্যবৃন্দ,
বন্ধুসভা পরিচালন কমিটি এবং নদীয়ার যুগ বার্তা পরিবারের সদস্যবৃন্দ, এবং মৈত্রের বহু শুভাকাঙ্ক্ষী ও অনুগামীরা শ্রদ্ধা জানান।
এরপর বিকেলে শান্তিপুর বন্ধু সভা হলে একটি আলোচনা সভা আয়োজিত হয়
জনাকীর্ণ পরিবেশে শ্রদ্ধেয় কাশীকান্ত মৈত্রের আপামর জীবন ও রাজনৈতিক আদর্শ সম্পর্কে ,তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক ও কর্মজীবনে কাশীকান্ত মৈত্রের প্রভাব, সমাজের আর্ত পীড়িত মানুষের সাহায্য ও সহযোগীতার বিবরণ দেন বক্তারা। আলোচিত হয় ছাত্রজীবনে ইংরেজ আমলে বিপ্লবীদের অতুলনীয় আত্মত্যাগ ও বিশেষত নেতাজী সুভাষচন্দ্রের আদর্শে অনুপ্রাণিত ভাবাদর্শে গঠিত ‘সারাভারত ছাত্র ব্যুরো’-র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের কথা। কৃষ্ণনগর সরকারি মহাবিদ্যালয়ে শতবর্ষ বয়কট আন্দোলনে নেতৃত্ব কথা এবং তিনি বহু মূল্যবান পণ্ডিত লক্ষ্মীকান্ত মৈত্রের লেখা চিঠি ও কাশীকান্ত মৈত্রের ছাত্রজীবনে লেখা বহু গ্রন্থ সকলের সামনে তুলে ধরেন। কাশীকান্ত মৈত্র শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা সুবক্তাই ছিলেন না, ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখকও। তাঁর লেখা সকল গ্রন্থ রাজনীতি ও ইতিহাসের ছাত্র এবং গবেষকদের কাছে একটি সম্পদ।স্বরচিত কাশীকান্ত মৈত্রের শ্রদ্ধার্থগীত পরিবেশন করা হয়।
এছাড়াও কাশীকান্ত মৈত্র স্মৃতিফলক তুলে দেওয়া হয় শান্তিপুরের বিশিষ্ট সাহিত্যিক চন্দ্রশেখর রায়ের পরিবারের হাতে।