মলয় দে নদীয়া:-বিভিন্ন মঠ মন্দির মসজিদ কিংবা পুজো মন্ডপের উপরে ঝাড়বাতির লণ্ঠন বহু কাল ধরেই প্রচলন হয়ে আসছে। আজকার দিনে জলসা ঘরেও বেলওয়ারি ঝাড়ের ব্যবহার ছিল।
ঝাড়বাতির সুসজ্জিত আলো মণ্ডপকে আরো সুন্দর করে তোলে। মন্ডপে ঢুকেই সাধারণ মানুষ একটি বার হলেও মণ্ডপের উপরে তাকায় সুসজ্জিত ঝার লন্ঠন দেখার জন্য। আজকের যুগে এই ছাড় লন্ঠনের ভেতরে বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হলেও আগেকার দিনে ব্যবহার করা হতো বড় বড় আকারের মোমবাতি। মোমবাতির আলো ঝাড় লন্ঠনের কাঁচের মধ্যে পড়ে সেই আলোতেই স্বভাবে তো বিভিন্ন মণ্ডপ। আর সেই ঝাড়বাতি কে বলা হয় বেলওয়ারি এক একটি অংশকে ফানুস আর এই কাঁচ আগে বেশিরভাগ আসতো ইউরোপ থেকে বর্তমানে বেলজিয়াম কাঁচ সকলেরই পরিচিত।
প্রাগৈতিহাসিক যুগে তখনো বেলজিয়াম বলে আলাদা দেশ হয়ে ওঠেনি। ইউরোপের ভেনিস শহরে বেলজিয়াম বলে একটি জায়গা ছিল সেই জায়গাতে এই ধরনের ঝাড়ের ফানুস তৈরি করা হতো বলে জানা যায়। অত্যন্ত সুদক্ষ পারদর্শী শ্রমিকের দ্বারা আগুনে কাজ গুলিয়ে নিজেদের দক্ষতার বলে এই বেলজিয়াম ফানুস তৈরি করা হতো। আর তার মধ্যেই বড় বড় আকারের মোমবাতি জ্বালিয়ে তৈরি করা হতো এই বেলজিয়াম ঝাড়।
নদীয়ার শান্তিপুরের রাধারমন জিউ মঠবাড়ি , কালাচাঁদ ঠাকুর বাড়ি এবং ডক্টর দীনদয়াল প্রামানিকের বাড়ি যেটি বর্তমানে বাবুদের বাড়ি নামে পরিচিত, এই দুই বাড়িতেই আজও রাস যাত্রা উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয় বেলজিয়াম ঝাড় । তবে সম্প্রতি আশানন্দ বিগ্রহ বাড়িতেও নতুনভাবে এই সাবেকি প্রথা ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে।
যেখানে আগামীকাল সন্ধ্যার সময় পুজোর সময় থেকে দর্শনার্থীদের দেখার জন্য রাত দেড়টা দুটো পর্যন্ত কাঁচের ফানুষের মধ্যে এক বিশেষ ধরনের মোমবাতির আলোতে এক অসাধারণ স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি হয়। এখানে কোন বৈদ্যুতিক আলো ব্যবহার করা হয় না। পুজোর পরের দিন অর্থাৎ মাঝের রসের দিনেও মধ্যরাত্রি পর্যন্ত দর্শনার্থীরা ভিড় করেন এই অপরূপ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করার জন্য।
এই সমস্ত বেলজিয়াম কাছের দাম বর্তমানে প্রচুর বেশি। সেই কারণে আগের মত এখন আর কিনে উঠতে পারেন না শান্তিপুরের মঠবাড়ির সদস্যরা। তবুও পুরনো দিনের দের দুশ বেলজিয়াম মানুষের মধ্যে আজ রয়েছে ৫০ টির মত তবে নতুন সংযোজন হয়েছে আরো কুড়িটি সেগুলিকেই সুন্দরভাবে মেরামত করে সযত্নে রেখে দিয়েছেন তারা। একসময় এই সমস্ত বেলজিয়াম কাঁচ অথবা ফানুস কিনে নিয়ে আসতেন কলকাতার বড় বাজার থেকে। বর্তমানে এই বেলজিয়াম কাজ মেলে কলকাতার নাখোদা মসজিদ এবং পার্ক স্ট্রিটের দু-একটি ক দোকানে।
উল্লেখ্য বর্তমানে সমস্ত ঝাড় লন্ঠনে বৈদ্যুতিক বাতি ব্যবহার করলেও আগেকার দিনে ঝাড় লন্ঠন তৈরি করা হতো এই বেলজিয়াম কাছে মানুষের মধ্যে বড় বড় আকারের মোমবাতি জ্বালিয়েই। আজও শান্তিপুরের বেশ কিছু পুরনো মসজিদ এবং দু একটি মন্দিরে বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি দেখা যায়। তাছাড়াও আসন্ন রাস পূর্ণিমায় এই বেলজিয়াম কাছে ঝাড়বাতি দেখা যাবে শান্তিপুর মঠবাড়ীতেও। সুতরাং বলা যেতে পারে আধুনিকতার হাওয়াতেও আজও তারা সযত্নে ধরে রেখেছেন তাদের আভিজাত্য এবং পরম্পরা।