মলয় দে নদীয়া :-দুর্গাপুজোর শেষ হলেই আসে দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ উৎসব দীপাবলি। দীপাবলি মানেই আলোর উৎসব। গোটা দেশ আলোকিত হয়ে ওঠে ওই দিনে। ধনী কিংবা দরিদ্র প্রত্যেকের বাড়িতেই অন্তত একটি হলেও মোমবাতি কিংবা প্রদীপ জ্বালানো হয় দীপাবলির এই আলোর উৎসবে। আর সেই কারণেই দীপাবলীর আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় প্রদীপ ও মোমবাতি কেনার হিড়িক সাধারণ মানুষের মধ্যে। ইতিমধ্যেই কুমোর পাড়ায় ঠাকুর বানানোর পাশাপাশি জোর কদমে তৈরি হচ্ছে প্রদীপ বানানোর কাজ। শুধু প্রদীপ নয় তার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণে চাহিদা থাকে মোমবাতিরও। তবে ইদানিং সাধারণ প্রদীপ ও মোমবাতির বদলে রকমারি ডিজাইনের মোমবাতি ও প্রদীপ জ্বালানোর চল উঠেছে।
আর সেই ট্রেন্ডকেই কাজে লাগিয়ে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারে এখন রকমারি ডিজাইনের সুগন্ধি মোমবাতি ও সুন্দর কারুকার্য করা প্রদীপ বানিয়ে রোজগার করছেন নদিয়ার শান্তিপুর নিবাসী ইতি সাধূখা। ২০২২ সালে রানাঘাট কলেজ থেকে সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে স্নাতক পাস করে ইতি। এরপর ইন্টারভিউ দিয়ে একটি বেসরকারি টু হুইলার কোম্পানিতে সেলস ডিপার্টমেন্টে চাকরি করেন তিনি। পাশাপাশি ছাত্র ছাত্রী পড়ানোর টিউশনিও করে সে ।বাবা তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও বর্তমানে তাদের অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে বাড়ির পাশেই তিনি একটি চায়ের দোকান চালান যেখানে তার মা সর্বত্রই তাকে সাহায্য করেন। চাকরি করার পাশাপাশি ইতির বরাবর ইচ্ছা ছিল নিজের ছোটখাটো কিছু একটা ব্যবসা শুরু করার। ছেলেবেলায় হাতে-কলমে আকার প্রশিক্ষণ না নিলেও টুকটাক কাজ করেছে সে, আর তার ওপর ভিত্তি করেই এবার নিজের হাতে তৈরি রকমারি সমস্ত নকশার প্রদীপ ও সুগন্ধি মোমবাতি তৈরি করে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে তা বিক্রি করে সাবলম্বী হচ্ছে সে। তবে এ বিষয়ে বর্তমানে কর্মরত সংস্থার কর্তৃপক্ষ তাকে অনেকটাই সহযোগিতা করে বলে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করে ইতি।
ইতিমধ্যেই বিভিন্ন জায়গায় অনলাইনে বায়না করে সেগুলি কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠিয়েছে ইতি। তার এই কাজে সর্বত্রই পাশে রয়েছেন তার বাবা-মা সহ বর্তমানে কর্মরত কোম্পানির ম্যানেজার থেকে শুরু করে অন্যান্যরা। ইতি জানায়, কালীপুজো কিংবা দীপাবলীর দিন ১৪ প্রদীপ জ্বালানোর জল রয়েছে সব জায়গাতেই। সেই কারণে সে রকমারি নকশা করা ১৪ প্রদীপ বানিয়ে তো অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করছে। সোশ্যাল মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়েই টুকটাক আপাতত বিক্রি করছে সে। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো ইতিমধ্যেই ব্যবসা করে ফেলেছে সে।
তবে শুধু পুজোপার্বণ নয় বর্তমানে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানেও এই সমস্ত প্রতিভা মোমবাতির প্রচলন বেড়েছে। সে জানায়, ইতিমধ্যেই একটি বিয়ে বাড়ি থেকে পাইকারি হিসেবে মোমবাতির অর্ডার পেয়েছে সে। যেগুলিকে বলা হয় গ্লাস মোমবাতি এক নাগাড়ে জ্বলতে পারে তিন থেকে চার ঘন্টা। এবং সেই মোমবাতি জালালে ঘরে সুগন্ধ ছড়ায় বিভিন্ন রকমের।
চাকরির পাশাপাশি আপাতত এই ব্যবসা করেই বাবা-মায়ের পাশে দাড়াচ্ছে ইতি। যদিও তার দুই দিদি বিয়ের আগে টিউশন পরিয়ে তারাও এভাবে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। পুত্র সন্তান না থাকলেও তিন কন্যা কোন অংশেই বাবা-মার সে ইচ্ছা অপূর্ণ রাখেনি তার কারণেই খুশি তার পরিবার থেকে শুরু করে আত্মীয় স্বজন সকলেই।