চার হাতের দেবী দুর্গা গন্ধেশ্বরী পুজোর কথা শুনেছেন? বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছে দাঁড়িপাল্লা পুজোর প্রচলন!

Social

মলয় দে নদীয়া:-জানেন কি বুদ্ধপূর্ণিমার দিন গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা পুজো করেন তাদের ব্যবসায়িক ওজনের দাঁড়িপাল্লা। এমনই রীতি প্রচলিত রয়েছে বহু বছর ধরে। গন্ধবনিক সম্প্রদায় মূলত মুদি ব্যবসায়ী হয়ে থাকেন। বুদ্ধ পূর্ণিমার দিনে তারা দেবী গন্ধেশ্বরীর পুজো করে থাকেন। তবে এই সম্প্রদায়ের যে সব ব্যক্তিরা দেবী মূর্তি ব্যয়ভার বহন করতে পারেন না তারা পুজো করেন তাদের দাড়িপাল্লার। এই দিনে সেই সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষেরা নিজেদের দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা বন্ধ রাখেন। কেউ পূজা করেন তাদের দাঁড়িপাল্লা কে কেউবা মূর্তি গড়ে পুজো করেন দেবী গন্ধেশ্বরীর।

গন্ধেশ্বরী হলেন হিন্দু দেবী দুর্গার একটি রূপভেদ তথা বাঙালি গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের উপাস্য দেবী। বৈশাখ মাসের পূর্ণিমা (বুদ্ধপূর্ণিমা) তিথিতে তাঁর বাৎসরিক পুজো আয়োজিত হয়। কথিত আছে, তিনি গন্ধাসুরের হাত থেকে গন্ধবতীকে রক্ষা করেছিলেন। দেবী গন্ধেশ্বরী চতুর্ভূজা, শঙ্খ-চক্র-ধনুর্বাণধারিণী এবং সিংহবাহিনী। চাঁদ সওদাগরের উত্তরসূরী গন্ধবণিক সম্প্রদায় ব্যবসার উন্নতি প্রার্থনায় তাঁর পুজো করে থাকেন।

পুরান মতে জানা যায়, দেবী গন্ধেশ্বরী মা দুর্গারই আরেক রূপ। তবে এক্ষেত্রে দেবী দুর্গার মত তার থাকে না দশ হাত, চার হাত অধিষ্ঠিত দেবীর থাকে না কোন ছেলে মেয়ে। সিংহের ওপর দন্ডায়মান দেবী একাই পুজিত হন। দুদিন ব্যাপী এই পুজো করা হয় বলে জানা যায়। বৈশাখ মাসের বুদ্ধ পূর্ণিমায় দেবীর পুজো শুরু হয়। সন্ধ্যেবেলা সন্ধিপূজো ও পরের দিন দধিকর্মা হয়ে বিকেলে যান দেবী নিরঞ্জনের পথে।

কলকাতা শহরতলীতে একাধিক গন্ধবণিক সম্প্রদায়ের মানুষেরা দেবী গন্ধেশ্বরী পুজো করলেও নদিয়া জেলাতেও বেশ কয়েক জায়গায় এই পুজো করার রীতি রয়েছে। তেমনি নদীয়ার শান্তিপুরের কাঁসারী পাড়া এবং সূত্রাগড় অঞ্চলের একমাত্র মল্লিক বাড়িতে গত ৬০ বছর ধরে এই পুজোর রীতি চলে আসছে। ঈশ্বর কার্তিক চন্দ্র মল্লিক প্রথম এই পুজো স্থাপন করেন প্রায় ৬০ বছর পূর্বে, প্রথমদিকে দেবী মূর্তির পুজো শুরু করা হলেও পরে বেশ কয়েক বছর অভাব অনটনের কারণে মূর্তি নির্মাণ না করতে পেরে নিজেদের দাঁড়িপাল্লাকেই তারা পুজো করে এসেছেন। তবে এ প্রজন্মের পরিবারের সদস্য রামকৃষ্ণ মল্লিক পুনরায় দেবী মূর্তির পুজো চালু করেন।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, শূদ্র বংশের হওয়ায় দেবীকে কোন ভোগ রান্না করে দেওয়া হয় না। ফল প্রসাদই দেবীর প্রধান ভোগ হিসেবে নিবেদন করা হয়। বাড়ির শালোগ্রাম শীলাকে পুজো করার কারণে এই পূজার অন্যতম ভোগ হিসেবে দেওয়া হয় শিন্নি।

পুজোর এই দুই দিন নদীয়ার শান্তিপুরের সূত্রাগড় কদ বেলতলা মল্লিক বাড়ির সমস্ত সদস্যেরা একত্রিত হয়ে ভক্তি সহকারে পূজার্চনা করেন। তারা জানাচ্ছেন আজ সকাল থেকে প্রায় চার ঘন্টা ধরে পুজো হয়েছে সন্ধ্যেবেলায় চলবে আরতি আগামীকাল বিসর্জনের পুজো হওয়ার পর প্রতিমা নিরঞ্জনে যাবেন। এই দুইদিন পরিবারের সকল সদস্যরা একত্রিত হয়ে দুর্গাপূজার সাদ অনুভব করেন, প্রতিবেশী বিভিন্ন পাড়া থেকে ভক্তরা আসেন প্রতিমা দর্শন করতে তারাও নিয়ে যান প্রসাদ।

Leave a Reply