মলয় দে নদীয়া:-বাংলাদেশের কেরো এন্ড কোম্পানির সুগার মিলের বজ্রপদার্থ মিশ্রিত জলে দূষিত করছে ভারতীয় মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণী নদী। নদী পাড়ের বাসিন্দারা দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ ।নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের এর থেকে রেহায় পেতে চাই। প্রতিনিয়ত ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমির। দূষিত জলে মারা যাচ্ছে নদীর মাছ, এহেন পরিস্থিতিতে প্রশাসনের অবিলম্বে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন বলে দাবি করছেন স্থানীয় নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বাসিন্দারা। নদীয়ার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাথাভাঙ্গা নদী। এই নদীটি বাংলাদেশ থেকে ভারত ভূখণ্ডে প্রবেশ করার পর চূর্ণী নদীতে মিশছে । যা কৃষ্ণগঞ্জ, হাঁসখালি রানাঘাটের ভিতর দিয়ে পায়রাডাঙ্গায় গঙ্গায় গিয়ে মিশছে । এই মাথাভাঙ্গা নদীতেই জল ছাড়া হয় বাংলাদেশের দর্শনার সুগার মিলের । জানা যায় বাংলাদেশের দর্শনায় রয়েছে সুগার মিল, সেই মিলের কালো দূষিত জল এই চূর্ণী নদীতে বাহিত হচ্ছে,, এক প্রকার ইচ্ছাকৃতভাবেই সুগার মিলের দূষিত জল ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে ভারতের চূর্ণী নদী দিয়ে, যার কারণে নদী হারাচ্ছে তার স্বচ্ছতা। বর্তমান পরিস্থিতিতে ভয়ংকর আকার ধারণ করেছে মাথাভাঙ্গা ও চূর্ণী নদী। পচা দুর্গন্ধ জল নিয়ে নদী পারাপারকারী রঞ্জিত দাস বলেন দুর্গন্ধে এলাকা ছেয়ে গেছে আমরা বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছি, হাতের আঙ্গুল দিয়ে নাক ধরে যাতে দূরগন্ধ না যায় শরীরে সেজন্য হাত দিয়ে নাক ধরেছি । সারা বছর এই নদীর উপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবী শিবনিবাসের বাসিন্দা গোকুল বালা বলেন আমরা প্রতিদিন এই নদী থেকে মাছ ধরে সুখে ,স্বাচ্ছন্দে সংসার চালাতাম । বাংলাদেশ থেকে সুগার মিল ের দূষণ যুক্ত কালো জল ছাড়াই সমস্ত মাছ মরে গিয়েছে নদীতে এখন কোন মাছ নেই । এমনকি নদীতে বসবাসকারী পোকামাকড, যেমন ঝিনুক গুগলি সেগুলোও মারা গিয়েছে। নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা রূপ কুমার ঘোষের দাবি বেশ কয়েক বছর যাবত তারা এই জল যন্ত্রণায় ভুগছেন। কেউ স্নান করতে নামছে না জলে, কারণ স্নান করলে হচ্ছে চর্মরোগ । চর্মরোগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ভয় নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা সহ মৎস্যজীবীরা । অন্যদিকে মাছ মারা যাচ্ছে নদীর জল দূষিত হওয়ার কারণে, বিঘা বিঘা চাষের জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে, এমত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সুগার মিলের কালো দূষিত জল যদি না আটকানো সম্ভব হয় তাহলে এই চূর্ণী নদীর জল আরো ভয়ংকর দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগামী দিনে। চূর্ণী মাথাভাঙ্গা নদী বাঁচাও কমিটির সম্পাদক স্বপন কুমার ভৌমিক বলেন নদীর দূষণ বন্ধ করতে ও নদীকে বাঁচাতে টাইবোনাল কোটে মামলা দায়ের করা হয়েছে । আদালত এ ব্যাপারে ভারত সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে অবিলম্বে দূষণ বন্ধ করবার জন্য প্রয়োজনে বাংলাদেশ সরকারকে চাপ দিয়ে ফিল্টার বসানো হোক । যাতে দূষিত জল ফিল্টার হয়ে ভারতের মাথাভাঙা অর্জুন এই নদীতে প্রবেশ করে । স্বপ্ন ও দুঃখের সঙ্গে বলেন কোর্টের রায় থাকা সত্বেও এখনো পর্যন্ত না রাজ্য সরকার, না কেন্দ্র সরকার কোন পদক্ষেপই নেয়নি ।স্থানীয় মানুষ চাইছেন প্রশাসন অবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক। এই চূর্ণী নদীর সাথে জড়িয়ে রয়েছে অনেক ইতিহাস, একটা সময় এই নদীর উপর নির্ভরশীল ছিল বহু মৎস্যজীবীদের জীবন জীবিকা । নদীর সৌন্দর্যতা আকর্ষণ করত মানুষের মধ্যে । কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার সন্নিকটে পাবাখালি তে রয়েছে তিনটি নদীর মিলনস্থল মাথাভাঙ্গা, চূর্ণী ও ইছামতি।এমনকি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মাজদিয়া স্টেশন থেকে নেমে মাথাভাঙ্গা নদীর দিয়ে বাংলাদেশের শিলাইদহ পৈত্রিক বাড়িতে যেতেন । এমনকি তিনি চূর্ণী মাথাভাঙ্গা ইছামতি নদীর উৎসমুখে কবিতাও লেখেন ।, কিন্তু বাংলাদেশের সুগার মিলের দূষিত জল প্রতিনিয়ত এই নদীতে বাহিত হওয়ার কারণে নদী হারিয়েছে তার ঐতিহ্য। সামনেই বর্ষাকাল, নদীর জল যদি এইভাবে দূষিত হতে থাকে তাহলে আগামী দিনে কৃষি জমির ক্ষেত্রে আরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে দাবি এক শ্রেনীর কৃষকদের। নদীয়া জেলার বিজেপি নেতা অমিত প্রামাণিক বলেন এই সমস্যাটা দীর্ঘদিনের । আমরা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন জানাবো যাতে অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে বজ্র পদার্থ জল ছাড়ার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যেহেতু মিলটা বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত । তৃণমূল পরিচালিত কৃষ্ণগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি অনুপ দাস বলেন নদী দুটির অবস্থা খুবই খারাপ । যেহেতু মিলটি বাংলাদেশে অবস্থিত সেই জন্য রাজ্য সরকারের কোন কিছুই করার নেই । আমরা ভারত সরকারকে অনুরোধ করব অবিলম্বে বিধিনিষেধ আরোপ করে বাংলাদেশ সরকার যাতে দূষিত জল ছাড়তে না পারে তার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবেদন জানান । মাথাভাঙ্গা এবং চূর্ণী নদীতে যে দূষণ হচ্ছে বাংলাদেশের দর্শনা সুগার মিলের জন্য একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছেন সমস্ত দলই ।এখন দেখার বাংলাদেশের দর্শনার সুগার মিলের দূষিত বজ্র পদার্থ থেকে মাথাভাঙ্গা , চূর্ণী নদীকে বাঁচাতে কি পদক্ষেপ নেয় প্রশাসন।
