প্রথা ভেঙে মুখাগ্নি থেকে মস্তকমুন্ডন ১৩ দিনের যাবতীয় পরলৌকিক ক্রিয়া করল মেয়ে

Social

মলয় দে নদীয়া:-সমস্ত সামাজিক বাধা পেরিয়ে চলতি প্রথা ভেঙে মাথা কামিয়ে বাবার শেষ অন্তষ্ঠির কাজ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলো মেয়ে নিবেদিতা ঘোষ দাস। শান্তিপুর শরৎকুমারী স্কুল লেলিন সরণীর বাসিন্দা ৬০ বছর বয়সী নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ গত ২৪ এপ্রিল হৃদযন্ত্রের সমস্যা জনিত কারণে মৃত্যু হয়। নারায়ণ বাবুর কোন পুত্র সন্তান নেই দুই কন্যা। নবনীতা বড় নিবেদিতা ছোট দুজনেরই বিবাহ হয়ে গেছে তবে ছোট মেয়ে নিবেদিতা থাকে এই বাড়িতেই। বাবার ইচ্ছা অনুযায়ী এবং দিদি নবনীতার সম্মতিতে মুখাগ্নি থেকে শুরু করে মস্তক মুন্ডন যাবতীয় পরলৌকিক ক্রিয়াকর্মাদি করে ছোট মেয়ে নিবেদিতা। এ বিষয়ে অবশ্য স্বামী সুদীপ দাস এ সিদ্ধান্তে গর্ব অনুভব করেছেন, তিনি বলেন মা-বাবার কাছে পুত্র হোক বা কন্যা আলাদা কিছু নয়।

মা সংঘমিত্রা ঘোষ বলেন, বাড়িতে দেওর ভাসুরের ছেলেরা থাকলেও ওর বাবার শেষ ইচ্ছার মান্যতা দিয়েছে সকলে। বোনের এই কাজে ভাই-বোনের সমগ্র মান্যতা দিতে পেরে খুশি তারাও।
তবে এখানেই শেষ নয় আরো এক নদীরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে নিবেদিতা, আজ মৃত্যুর ১২ দিনে ছিল ঘাট কামান সেখানেও নির্দ্বিধায় নিবেদিতা তার মস্তক মুন্ডন করে। এবং সেই চুল ক্যান্সার আক্রান্ত দের দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্থানীয় সমাজসেবী মোহর দে বিশ্বাসের হাতে তুলে দেয় সে।
এ বিষয়ে মোহর দে অত্যন্ত আপ্লুত হয়ে বলেন, শান্তিপুরে এর আগে বেশ কয়েকজন মেয়ে তাদের চুল কেটে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। তবে সেক্ষেত্রে ১২ ইঞ্চি চুল কাজে লাগতো তবে এই প্রথম সম্পূর্ণ চুল পাওয়া গেল যা অত্যন্ত লম্বা।
কর্নিয়া সংগ্রহকারী সংস্থা মরমীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, ধর্ম হোক বা সামাজিক দায়িত্ব পূরণ শান্তিপুরের মাটি অত্যন্ত উৎকর্ষ তাই চিরকালই দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ধর্মীয় দিক থেকেও প্রশংসার সাথে নারী শক্তির অতীত সম্পর্কে জানানো হয়েছে। ধর্মপ্রচারক শচীনন্দন দাস মহারাজ বলেন , পুত্র হোক বা পুত্রী সনাতন হিন্দু ধর্মে সমান গুরুত্ব। তবে এক্ষেত্রে একদিকে যেমন ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে অন্যদিকে করনিয়া প্রদান করে অন্ধত্ব দূরীকরণ করেছে সেক্ষেত্রে জীব সেবার মধ্য দিয়েই শিব সেবা হয়েছে।
তবে নজির বিহীন এই সিদ্ধান্তে শান্তিপুরের সকল শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষজন এবং বিভিন্ন সংস্থার সকলেই তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তাদের মতে সাময়িক রূপের কিছু পরিবর্তন এত বড় চিন্তা ভাবনার কাছে নগণ্য মাত্র।
যদিও সামাজিকভাবে বাবার মৃত্যুর পরে কন্যা সন্তানদের এ হেন কাজ করতে সচরাচর দেখা যায় না, প্রথা ভেঙে এই ধরনের ব্যতিক্রমী কাজ করার জন্য কোন বাধার মুখে পড়তে হয়েছে কিনা জানতে চাওয়া হলে নিবেদিতা জানায়, “এটা আমার বাবা বলে গিয়েছিলেন আমি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছি আমার কন্যা সন্তানই মুখাগ্নি সহ যাবতীয় কাজকর্ম করবে। সারা জীবন বাবা বহু কিছু ত্যাগ করে আমাকে বড় করে তুলেছেন তাই তার জন্য যা কিছু করি সবই নগণ্য।

Leave a Reply