মলয় দে নদীয়া;- শীত পড়তেই উৎসব মুখর হয়ে ওঠে গোটা বাংলা । শীতকাল মানেই নতুন চাল আর গুড়ের পিঠে পায়েস , কমলালেবু আর হ্যাঁ অবশ্যই চড়ুইভাতি। তবে এত মানুষের কথা কিন্তু দেবদেবীরাও এর বাইরে নয়। বিশেষত গোপাল তাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এবং গৃহস্থ বাড়ির সন্তান সম। তাই তার বায়না আবদার সবকিছুই খেয়াল রাখে ভক্তরা। এমনও বহু ভক্তদের বাড়ি আছে যেখানে তারা কোথাও গেলেও সাথে করে নিয়ে যান ধাতব গোপালকে। কখনোই তালা বন্দী অবস্থায় তাকে রাখেন না। শিশু অবস্থায় অন্য শিশুদের সঙ্গে মেলামেশা একান্তই প্রয়োজন । সেই কথা ভেবেই প্রতিবছর শীতকালে নৃসিংহপুর পাম্পের ঘাট কলাবাগানে সমগ্র শান্তিপুরের সীতানাথ অর্থাৎ অদ্বৈত আচার্যের ভক্তবৃন্দ এই আয়োজন করে থাকেন। যেখানে আশেপাশের এলাকার সমস্ত গোপাল সেবাইতরা তাদের গোপালকে নিয়ে উপস্থিত হন বনভোজনে। সংখ্যাটা প্রায় দুই শতাধিকেরও বেশি। সাথে অবশ্যই তাদের সেবাইত এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও আছেন। তাদের সকলের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে অন্ন অর্থাৎ সাদা ভাত, মুগের ডাল, শীতকালীন সবরকম আনাজ দিয়ে একটি তরকারি, পায়েস নতুন গুড়ের রসগোল্লা।
তবে যাদের জন্য মূল আয়োজন অর্থাৎ আরাধ্য দেবতা গোপাল তাদের জন্য থাকছে কমলালেবু সহ শীতকালীন সব রকম ফলমূল, শীতকালীন সকল রবিশস্য এবং আনাজের প্রায় ১৭ টি নানান রকম পদ ,পুষ্পান্ন পরমান্ন সহ পিঠে পায়েস সহ নানা প্রকারের মিষ্টান্ন, সবমিলে ৫৬ ভোগ।
ভক্তরা শীতবস্ত্র পরিয়ে গোপালকে সাথে নিয়ে কাটাবেন সারাদিন। তাদের পরিচয় জানতে চাইলে কেউ বললেন গোপালের দিদা কেউবা মা কেউ গোপালের বোন কিংবা দিদি। তারা জানাচ্ছেন গোপালকে ভোগ নিবেদনের আগে এবং পরে তারা নিজেদের মধ্যে খেলাধুলা করার জন্য চারিদিকে কাপড় টাঙিয়ে রেখে দেন বেশ কিছুক্ষণ সে সময় সে সময় প্রতীক্ষারত অভিভাবকরা ধর্মকথা আলোচনা করেন নিজেদের মধ্যে।
উদ্যোক্তারা অবশ্য শুধু ধর্মীয় বিষয় নয় পরিবেশ রক্ষায় নানান রকম সামাজিক বার্তা দিয়েছেন মেলা প্রবেশের মাঠে প্রবেশের প্রধান পথে।
উপস্থিত ছিলেন এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান বীরেন মাহাতো এবং বর্তমান জেলা পরিষদের সদস্য, প্রাক্তন সভাধিপতি রিক্তা কুন্ডু। তিনি বলেন দু দুবার এই এলাকা থেকে নির্বাচিত হওয়ার কারণেই এটা তার নিজের এলাকা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাই এই গোপালের মেলা আগামী দিনে সারা নদিয়া বাসীর উৎসবে পরিণত করার জন্য যেকোনো সহযোগিতায় তিনি প্রস্তুত। উদাহরণ হিসেবে বলেন তার নির্বাচনক্ষেত্রের হরিপুর ব্রহ্ম শাসন জগদ্ধাত্রীর আঁতুড়ঘর। সেখানেও তিনি সাধ্য অনুযায়ী সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সহযোগিতার মাধ্যমে ভক্তবৃন্দের সুবিধার্থে রাস্তাঘাট শৌচাগার করার চেষ্টা করেছেন।