মলয় দে নদীয়া:-কথায় বলে বড়রা যা করে বাচ্চারাও দেখে তাই শেখে। আবারও তা প্রমাণ করে দেখালো শান্তিপুরের দুই যুবক। শান্তিপুর এমএন হাই স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সোমনাথ ঘোষ এবং শান্তিপুর কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র আকাশ চৌধুরী। ২ যুবকের বাবা কিংবা কোন আত্মীয়-স্বজনেরাই মৃৎশিল্পের সঙ্গে যুক্ত নয়। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের ইচ্ছেতেই ছোটবেলা থেকেই পাল বাড়ির পাশ থেকে টিউশন পড়তে যাওয়ার সময় মূর্তি বানানোর কাজ দেখতে দেখতে হয়ে ওঠে দক্ষ শিল্পী। আর এবার শান্তিপুরের এই দুই ছাত্রই বানিয়ে ফেললো জগদ্ধাত্রী প্রতিমা।
শান্তিপুর সুত্রাগড় এলাকার বাসিন্দা একাদশ শ্রেণীর ছাত্র আকাশ চৌধুরী বাবা পেশায় ছিলেন তাঁত শ্রমিক। তবে বর্তমানে শান্তিপুরে তাঁতের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হওয়ার কারণে তিনি হোটেলে কাজ করেন। তার ছেলে আকাশ বরাবরই শিল্পের দিকে ঝোক। ছোটবেলা থেকেই শিল্পের প্রতি অমোঘ টানের কারণে সে বানিয়েছে একের পর এক প্রতিমা এবং ভাস্কর্য। কৃষ্ণ গোপাল ইত্যাদির মূর্তি বানানোর পর এ বছর জগদ্ধাত্রী পূজা উপলক্ষে বানিয়ে ফেললো সে একটি জগদ্ধাত্রী প্রতিমাও। সে জানায় বর্তমানে চাকরির যে বেহাল অবস্থা তাতে সে চাকরি-বাকরির আশা এখন করে না। সে চেয়েছিল আর্ট কলেজে ভর্তি হতে তবে বর্তমানে পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকার কারণে সে সাধারণ কলেজেই ভর্তি হয় তবে তার স্বপ্ন একদিন সে আর্ট কলেজে ভর্তি হয়ে নিজেরই দক্ষতাকে আরো সূক্ষ্ম করে তুলবে।
প্রায় একই চিত্র দেখা গেল শান্তিপুর এমএন হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র সোমনাথ ঘোষের। তার বাবা একজন কাপড় ব্যবসায়ী তবে ছেলের বরাবরই চোখ শিল্পের প্রতি। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন পালবাড়িতে ঠাকুর বানানো দেখতে দেখতে ছোট থেকেই সে চেষ্টা করে নিজের হাতে মূর্তি গড়ার। প্রথম দিকে বিশেষ ভালো না হলেও ধীরে ধীরে তার হাতে শোভা পায় একের পর এক স্থাপত্য এবং মূর্তি। কালি দুর্গা ইত্যাদি মূর্তির পরে সে বানিয়েছিল মালয়েশিয়ার বিখ্যাত টুইন টাওয়ারও। তারও ইচ্ছা ভবিষ্যতে আর্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার। সে চায় ভবিষ্যতে একজন স্বনামধন্য শিল্পী হতে।
শান্তিপুর বরাবরই নানারকম পূজো পার্বণ অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত। ঠিক তেমনি শান্তিপুরের মৃৎশিল্পীরাও বহু যুগ ধরে প্রতিষ্ঠিত এবং স্বনামধন্য। ঠিক তেমনি অভিজ্ঞ শিল্পীদের পাশাপাশি তরুণ প্রজন্মেরাও যে এই শিল্পের প্রতি টান এবং আগ্রহ রয়েছে তাতে খুশি সকলেই। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে এই সমস্ত ক্ষুদে শিল্পীরা তাদের বানানো একাধিক শিল্পকলা প্রদর্শন করার ফলে তারা উঠে আসছে খবরের শিরোনামে। উন্নত প্রযুক্তি নিখুঁত কারুকার্য সঠিক প্রশিক্ষণের দ্বারা এই সমস্ত খুদে শিল্পীরাও একদিন হয়ে উঠতে পারে শান্তিপুর তথা দেশের গর্ব।