মলয় দে নদীয়া:- বড়ু চন্ডীদাসের রচিত শ্রীকৃষ্ণ কীর্তন কাব্যের প্রথম খন্ডের নাম নৌকা খন্ড। মূল পান্ডুলিপির ৭১ তম পৃষ্ঠার দু’নম্বর শ্লোক থেকে শুরু করে ৮৬ তম পৃষ্ঠার দু নম্বর শ্লোক পর্যন্ত ৩০ টি শ্লোক বর্ণিত রয়েছে যার মধ্যে এগারটি রাগরাগিণীর উল্লেখ আছে।
পূর্ববর্তী অর্থাৎ দানখন্ডের শেষে উল্লেখ আছে, শ্রীকৃষ্ণকে আত্মদান করে শ্রীরাধা সকলের কাছে আত্মসম্মানের ভয়ে ভীত ছিলেন। অন্যদিকে শ্রী রাধার শাশুড়ি মথুরায় যাওয়া বন্ধ করে দেয় তাকে। রাধাবিরহ শ্রীকৃষ্ণের উন্মাদ অবস্থা সৃষ্টি করে। শ্রীকৃষ্ণের এই অবস্থা শুনছ বড়াই শ্রীরাধার কাছে জানাতেই তিনি শ্রীকৃষ্ণের প্রেমের অন্যায় আবদার অত্যাচার রূপে বর্ণনা করেন। অবশেষে বড়ুয়া শ্রীকৃষ্ণের পূর্ব পরিকল্পনা মতো, ১৬০০ সখীদের নিয়ে, ঘুর ভাবে জলপথে মথুরায় নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজি করতে সক্ষম হন।
অন্যদিকে মথুরা ঘাটে শ্রীকৃষ্ণ একটি বড় নৌকা জলের নিচে ডুবিয়ে রেখে আরেকটি ছোট নৌকা ঘাটে বেঁধে রেখে লুকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকলেন। অন্যান্য নৌকাতে এত সংখ্যক সখিদের পার করার ব্যস্ততার সময় দায়িত্বশীল শ্রীরাধা শেষ নৌকায় যাবেন বলে প্রতীক্ষা করতে থাকেন, আর সেই সুযোগে শ্রীকৃষ্ণ নিজরূপ ধারণ করে আলিঙ্গন চেয়ে বসে শ্রীরাধার কাছে। অন্যদিকে সকলেই পার হয়ে যাওয়ার কারণে শ্রীকৃষ্ণের নৌকাতেই উঠতে বাধ্য হন শ্রীরাধা। যমুনা নদীবক্ষে প্রচণ্ড মেঘ এবং ঝড়ের কারণে নৌকা ডুবে গেলে শ্রীকৃষ্ণ রাধিকা কে আলিঙ্গন করে সম্ভোগ সুখে সন্তুষ্ট হন অন্যদিকে শ্রীরাধাও আরো আকৃষ্ট হন কৃষ্ণ প্রেমে। পরবর্তীতে সখীদের কাছে বোঝাতে সমর্থ হন শ্রীকৃষ্ণ তার প্রাণ বাঁচিয়েছেন। তাই এই দেহের রক্ষাকর্তা তিনিই। আর এভাবেই লোকচক্ষুর আত্ম গ্লানি থেকে সুকৌশলে আত্মমর্যাদায় রূপান্তরিত করেন। পরবর্তী খন্ডের নাম ভারতখন্ড।
নদীয়া নবদ্বীপের মায়াপুরে গতকাল রাতে অসাধারণ নৌকা বিলাসের এইরকমই রূপ ধরা পড়লো আমাদের ক্যামেরায়।