মলয় দে নদীয়া :-বাঙালির ঐতিহ্য ও আবেগ এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে দুর্গোৎসব। সাম্প্রতিককালে থিম পুজোর চল বাড়লেও একসময় পুজো বলতে ছিল বনেদি বাড়ির পুজো। আর এখনও কলকাতা সহ অন্যান্য জেলায় একাধিক বনেদি বাড়িতে বিশেষ নিয়ম মেনে মায়ের পুজো করা হয়। আর তারই এক নিদর্শন দেখা গেল নদিয়ার শান্তিপুরে বনেদি বাড়ির দুর্গাপুজো।
বহু বছর আগে মদন গোপাল পাড়ায় গোস্বামী বাড়িতে এই পুজো করা হত এবং পরবর্তীকালে সে পুজো বন্ধ হয়ে যায় এবং শান্তিপুরের কিছু মানুষ এই পুজো প্রতিষ্ঠা করেন পাড়ার সকলের মঙ্গলের উদ্দেশ্যে। সেই সমস্ত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে তুলসীদাস মুখার্জি, রাখাল চন্দন মুখার্জি ,রামপ্রসাদ ঘোষাল, চারুপদ ঘোষাল ,কাশীনাথ ভট্টাচার্য । এনআরআই উদ্যোগ নিয়ে সাবেকি পুজোর সূচনা করেছিলেন।
এই বনেদি বাড়ির পুজোর নির্দিষ্ট কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। পূজোর ভোগ রান্না ও পূজোর সমস্ত রীতিনীতি বাড়ির ছেলেরাই করেন। এবং এই বনেদি বাড়ির পুজোর একটি নির্দিষ্ট পুঁথি আছে। পুঁথিটি পূর্বপুরুষরা নিজের হাতে লিখেছিলেন এবং টা খুব সহজ ও সাবলিল ভাষায় লেখা হয়েছিল। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম অর্থাৎ উত্তরাধিকারীরা যাতে খুব সহজে পুজো করতে পারেন এবং পূজোর নিয়ম বুঝতে কোন সমস্যা সৃষ্টি না হয় সেই উদ্দেশ্যে এ পুঁথি লেখা। এছাড়াও পরবর্তীতে অন্যদের সাহায্য যাতে না নিতে হয় সেদিকে নজর রেখেই এ প্রতিটি লেখা হয়েছিল বলে দাবি করলেন এবারেই এক সদস্য।
এই পুজোতে বাড়ির মহিলারাই তিন দিন ভোগ রান্না করেন সপ্তমী অষ্টমী ও নবমী দিনে। পুষ্পান্ন, পায়েস ,চাটনি, খিচুড়ি পাঁচ রকম ভাজা ইত্যাদি। এই বনেদি বাড়ির সকল সদস্যরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে পুজো করেন খুবই নিষ্ঠার সঙ্গে।
এই পুজোর আরো কিছু বৈশিষ্ট্য হল ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত চার দিন একই জন পুজো করেন না। সপ্তমী ও নবমী তিথিতে পুজো করেন শ্রী দুর্গাচরণ মুখার্জি এবং অষ্টমী পুজো, সন্ধিপুজো এবং দশমী পুজো করেন শ্রী রজত মুখার্জি।
এছাড়াও এই সাবেকি বাড়ির আরো কিছু অন্যতম বৈশিষ্ট্য রয়েছে বিদ্যমান। মা সরস্বতী ও লক্ষীর পাদদেশে বাহন হিসেবে প্যাঁচা ও হাঁসের বদলে পদদেশ এ স্থান দেয়া হয় পদ্মফুল কে। অথচ কার্তিক ও গণেশের পদ দেশে ইঁদুর ও ময়ূর স্থান পান বাহন হিসাবে। এছাড়াও এ সাবেকি পুজো ষষ্ঠীর অকাল বোধনের মাধ্যমে শুরু করা হয় এবং অকাল প্রদানের পরই নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। এবং সপ্তমী দিনই নবপত্রিকা স্নানের মাধ্যমে শুরু হয়ে যায়।
সাবেকি বাড়ির পুজো আরো আকর্ষণীয় করে তুলতে এনারা নিজেরাই পঞ্চমী দিনে অনেক আচার অনুষ্ঠান প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। সমস্ত কিছুই এনারা নিজেরাই আয়োজন করেন। কি পর্যন্ত বিশেষত বাইরের ঢাকি কেউ আনা হয় না তারা নিজেরাই ঢাক বাজান। বিজয় দশমীতেও এনারা নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে ওঠেন এইভাবেই এনারা এনাদের বনেদি বাড়ির পুজো ঐতিহ্য কে ধরে রাখার চেষ্টা করেন।