সম্পত্তিতে ছেলেদের ভোগ দখল ! নিজের বাড়িতে ঢুকতে না পেরে সারারাত বাড়ির সামনে দরজায় রাত কাটালো জন্মদাতা বাবা

Social

মলয় দে নদীয়া:- এ কোন সমাজ! কথায় আছে ভাগের মা গঙ্গা পায় না, তবে এক্ষেত্রে মা মেয়ের কাছে ঠাঁই পেলেও বাবা নিরাশ্রয় হয়ে, বাড়ির সামনে রাস্তার উপরেই বসে কাটালেন সারারাত।

দুই ছেলে একে অন্যের উপর দোষারোপ করতেই ব্যস্ত। স্থানীয় কাউন্সিলর প্রতিনিধি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কর্মকর্তা এবং পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় আপাতত আশ্রয় মিললেও, আগামী দিনে বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসা এবং সসম্মানে নিজের বাড়িতে থাকার নিরাপত্তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।

চরম এই অমানবিক ঘটনা নদীয়ার শান্তিপুর ডাবরের পাড়া লেনে, আন্তরিক লজের পেছনে। সেখানে ৭৫ বছর বয়সি প্রদীপ সরকার , তার নিজের বাড়িতে ঢুকতে গিয়ে জন্ম দেওয়া এবং লালন পালন করা দুই সন্তান শংকর সরকার এবং বাচ্চু সরকারের কাছ থেকে বাধা প্রাপ্ত হয়ে গতকাল প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই সারারাত কাটালেন বাড়ির দরজার সামনে রাস্তায়। গতকাল সকালে বেগতিক দেখে নিজেদের ঘরে তালা মেরে, তাদের পরিবার নিয়ে বাড়ি ছাড়া বড় ছেলে। ছোটো ছেলে পাশের পাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে থাকলেও, নিজের অধিকারের ঘর তালা মেরে গেছেন। বাবার কথা শুনেও একবারের জন্য দেখা করে যান নি।

প্রতিবেশীদেরও খুব বেশি তাৎপরও না হলেও, গতকাল সকালে এক নিকট আত্মীয় এবং দুই প্রতিবেশী অসুস্থ বৃদ্ধকে খাইয়ে দেওয়া বাতাস করা এবং মল মত ত্যাগ করিয়ে দেওয়ার কাজ করেন।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর নরেশ লাল সরকারের ছেলে, সৌরভ সরকার, বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতিনিধি রণাপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, অনুপম সাহা, বিশ্বজিৎ রায় খবর পেয়ে ছুটে আসেন। তারা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন দুই ছেলের সাথে। ছোট জনকে পাওয়া না গেলেও বড় ভাই ফোনে জানান বাবা কি শুধু আমার একার? ছোট ভাইকে বলুন। যদিও তিনি বাবার প্রতি, মদ্যপান, সংসার ত্যাগ করে সাধু হয়ে যাওয়া এ ধরনের নানান অভিযোগ এনেছেন।

কিন্তু দুই একজন সহৃদয় প্রতিবেশীর প্রশ্ন, দুই ভাইয়ের কষ্ট অর্জিত অর্থে ওই জমি কেনা নয়, উত্তারাধিকার অধিকার সূত্রে প্রাপ্ত ওই সম্পত্তিতে সমান ভাগ রয়েছে প্রদীপ বাবুরও । তাদের দাবি এক মেয়ে বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর মায়ের দায়িত্ব নিয়েছেন, কিন্তু দুই ভাইয়ের কর্তব্য কোথায়? যদিও প্রদীপবাব ছেলে-মেয়ে মানুষ করার পর, আধ্যাত্বিকতার সাথে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন মন্দিরের মন্দিরে কাটিয়েছেন বেশ কিছু বছর কিন্তু, তার নিজের বাড়িতে নিজে ফিরে আসবেন এতে আপত্তি কোথায়! কিন্তু পরশু রাতে নিজের বোনের বাড়ি কখনো মেয়ের বাড়ি কখনো ছোট ছেলে কখনো বা এই বাড়িতে ছেলের কাছে প্রত্যাখিত হয়েছেন তিনি। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে, মানসিক আঘাতগ্রস্ত হয়ে এখানেই ছিলেন সারারাত।

স্থানীয় কাউন্সিলর প্রতিনিধি পুলিশ প্রশাসন এবং বিভিন্ন সামাজিক সংস্থার সাহায্যে অবশেষে শান্তিপুর থানার পুলিশ প্রশাসন এসে বড় ছেলেকে দিয়ে দরজা খুলিয়ে বাবাকে ঘরে তোলার ব্যবস্থা করেন। যদিও চাপে পড়ে আপাতত তিনি আশ্রয় পেলেও চিকিৎসা এবং সসম্মানে নিজের বাড়িতে নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারবেন কিনা তার উত্তর জানা যাবে আরো কিছুদিন বাদে।
তবে এ বিষয়ে, সরাসরি জেলা এবং মহকুমা শাসকের তত্ত্বাবধানে মেইনটেনেন্স ওয়েল ফেয়ার অফ প্যারেন্টস এন্ড সিনিয়র সিটিজেন অ্যক্ট ‘২০০৭’ আইনে বিচার পেতে যে কোন প্রতিবেশী নিকট আত্মীয় স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন একটি লিখিত অভিযোগ জানালেই হতে পারে স্থায়ী সমাধান।

Leave a Reply