মলয় দে নদীয়া:- গত ফাল্গুন মাস থেকে সারাদিন রোদ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে, ওলের বীজ থেকে চারাগাছ তারপর ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠার জন্য মূল্যবান সার ওষুধ কীটনাশক দেওয়া সারাদিন জমিতে পরিশ্রম করা। লক্ষাধিক টাকার ফসল ঘরে উঠতে আর মাত্র দুমাস বাকি, কিন্তু তার আগেই সব শেষ! সমবায় ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে সর্বশান্ত হলো কৃষক।
দুর্ঘটনাটা নদীয়ার শান্তিপুর হরিপুর পঞ্চায়েতের বাগদেবীপুরে। ৭০ ঊর্ধ্ব আজন্ম কৃষক পরিবারের গুরুপদ সরকার, দীর্ঘ কুড়ি বছর যাবত ওলের চাষ করেন। কাটোয়া-ডাটা, ধান, পাট, উচ্ছে, শসা , পটল নানা ধরনের আনাজের চাষ করেন তিনি। ওলের জমি ১৫ কাঠা। গত বছরেও লক্ষাধিক টাকার ওল বিক্রি করেছিলেন তিনি।
কিন্তু এ বছরে আর দুমাস বাকি থাকতেই, গতরাত্রে কেউবা কারা শত্রুতা করে তার সদ্য বেড়ে ওঠা ওলগাছ গোড়া থেকে কেটে দেয়। দু তিন কাঠা বাদে পুরোটাই নষ্ট করে দিয়েছে তারা। এ প্রসঙ্গে গুরুপদ বাবু বলেন, শুধু আমি বলে নই সকল কৃষকই পাড়া ঘরে সকলকে উৎপাদিত ফসল বিনামূল্যে দেওয়ার রীতি আজও আছে। নিজেদের মনে করে অনেকে, তার প্রয়োজন মতন আনাজ তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু এভাবে গাছগুলোকে নষ্ট করে কি লাভ জানিনা, কারোর সঙ্গে আমার শত্রুতা নেই। বীজের ওল পচে সদ্যমাত্র আসল ওল বড় হওয়া শুরু হয়েছে। মূল কাণ্ডর পাশ থেকে যেগুলো বেরোয় সেগুলো বাজারে বিক্রি হয়। তবে মূল কাণ্ড কেটে দেওয়ার কারণে পাশ থেকে যে গাছ বেরোবে, সেই গাছ আর কখনোই বড় সাইজের ওল তৈরি করতে পারবে না। চল্লিশ টাকা পাইকারি হিসেবে, এক একটি গাছের গোড়ায় আট দশ কেজি ওল হওয়ার কথা, অর্থাৎ সাড়ে ৩৫০ – ৪০০ টাকা প্রতি গাছে নষ্ট হয়েছে।
ছেলে সুশান্ত জানান, শান্তিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে, তবে নির্দিষ্ট করে কিছু না জানাতে পারলে তারাই বা কিভাবে তদন্ত করবে। তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ফসলের ক্ষতি হলে বীমার অন্তর্ভুক্ত হয় কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনায় আদৌ বীমা পাওয়া যাবে কিনা তা জানা নেই, তবে ঋণ নেওয়ার সময় বীমা করা আছে কিনা তা জানতে হবে সমবায় ব্যাংকে গিয়ে। গোটা ঘটনায় ওই কৃষক পরিবার তো বটেই সমগ্র কৃষি প্রধান অঞ্চলে চাষীদের মাঝে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।