নিউজ সোশ্যাল বার্তা,কলকাতা: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয় সেবা প্রকল্প- তাদের এবং অন্যান্য কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত প্রোগ্রাম অফিসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের নিয়ে আয়োজন করল তামাক বিরোধী একটি প্রশিক্ষণ শিবিরের। হাওড়ার নারায়ণা সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল এবং এপসন ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের সঙ্গে এই ‘জীবনের জন্য শপথ গ্রহণ — তামাকমুক্ত যুব সম্প্রদায়’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
উদ্যোগের কারিগরি সহায়তা প্রদান করল সমবন্ধ হেলথ ফাউন্ডেশন। অনুষ্ঠানটি অন্তর্ভুক্ত ছিল সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য তামাকমুক্ত জীবনের শপথ, এনএসএস রুরাল ক্যাম্প, এবং বিভিন্ন রকম তামাক বিরোধী কার্যক্রম এবং প্রতিযোগিতা। তামাকের বিভিন্ন ক্ষতিকর প্রভাব, ক্যান্সার প্রতিরোধ, তামাক মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা এবং কোটপা আইনের বাস্তবায়ন করাই ছিল এই অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য।
নারায়ণা সুপার স্পেশালিটি হসপিটালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সার্জেন ডাক্তার সৌরভ দত্ত বলেন, “তামাক আমাদের মানব দেহের ক্ষতি করে না এরকম কোনও অঙ্গ নেই। তাই যুব সম্প্রদায়ের মধ্যে তামাকের প্রবণতার হাত থেকে বাঁচার একমাত্র পথ। এনএসএস-এর মতো যুব গোষ্ঠী তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়াতে এগিয়ে এলে, সেটা তামাকমুক্ত যুব সমাজের দিকে রাজ্যকে অনেকটাই এগিয়ে দেবে। প্রতিবছর আমাদের রাজ্যে ১,৫৩,০০০ মানুষ তামাক ব্যবহার জনিত কারণে মারা যান। ২ কোটিরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং প্রতিদিন তামাক ব্যবহার শুরু করে ৪৩৮ জন শিশু।”
ভারতবর্ষে ক্রীড়া এবং যুব উন্নয়ন মন্ত্রক তামাক ব্যবহার জনিত কারণে শারীরিক ক্ষতি আটকাতে পশ্চিমবঙ্গের জাতীয় সেবা প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যবস্থা নিতে উদ্যোগী হয়েছে। আঞ্চলিক অধিদপ্তরের সঙ্গে রাজ্যস্তরের এনএসএস ইউনিট তামাকমুক্ত যুব সম্প্রদায় গড়ে তোলার লক্ষ্যে এই শপথ কার্যক্রমের অংশীদার হয়।
এই কার্যক্রমটি ভারতবর্ষের মাননীয় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবং ক্রীড়া এবং যুব উন্নয়ন মন্ত্রকের সম্পূর্ণ সমর্থনপ্রাপ্ত। এই কার্যক্রমের মূল বক্তব্য হল, যুব সম্প্রদায়ের সঙ্গে বাকিদেরকেও তামাক ব্যবহারের থেকে দূরে রাখা। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে আসাম দিল্লি, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ এবং উড়িষ্যাতেও এই কার্যক্রমটি চালু আছে।
গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস ২০১৭) অনুযায়ী ভারতে জনসংখ্যার ১৫ বছর বয়সের আগেই ৯.৬%, ২০ থেকে ৩৪ বছর বয়সের মধ্যে ৫৩.৮% তামাক ব্যবহার করে থাকে। ভয়ের কথা হল, ২২% ধূমপায়ী দিনে প্রায় ১০ থেকে ১৪টি সিগারেট খেয়ে থাকেন। পশ্চিমবঙ্গে গড়ে মানুষ প্রতিদিন ৯টি সিগারেট এবং ২৯টি বিড়ি খেয়ে থাকেন। ধূমপান শুরু করার গড় বয়স এখানে ১৯ বছর এবং ধোঁয়া বিহীন তামাক সেবন শুরু করার গড় বয়স ২০ বছর।
যাদবপুর বিশ্ব বিদ্যালয়ের জয়েন্ট রেজিস্টার, ডক্টর সঞ্জয় গোপাল সরকার বলেন, “তামাক সংক্রান্ত ক্ষতির সংখ্যাটা এতই ভয়াবহ যে, এই নিয়ে কাজ করতে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। তীব্র গুরুত্ব দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ১০৯৩টি এনএসএস ইউনিট আছে। সকলে মিলে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লে, সমাজ একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবেই। এ পরিবর্তন আনতে আমরা দায়বদ্ধ।”
উপস্থিত ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এনএসএসের প্রোগ্রাম অফিসার অধ্যাপক চিত্তরঞ্জন সিনহা,অতনু সাহা,বুদ্ধদেব সাউ, সনৎ কর্মকার, পার্থ সারথি চক্রবর্তী, ডাঃ রাম প্রসাদ ভট্টাচার্য, ধুবুলিয়া শ্যামাপ্রসাদ শিক্ষায়তনের প্রোগ্রাম অফিসার দীপ রায় ও এসএইচএফের ট্রাস্টি সঞ্জয় সেট , পরিচালক আশিমা সারিন, সমন্বয়কারী আমির খান, সুমন্ত মন্ডল, সঞ্জিতা সরকার, প্রতিমা রানী আড়ি প্রমুখ। কর্মশালায় মঞ্চ সঞ্চালনা করেন অধ্যাপক ডঃ ললিতাভ মহাকুড।