মলয় দে নদীয়া :- রথ উপলক্ষে ঘুড়ি ওড়ানো শান্তিপুরের বহু প্রাচীন, যা ইদানিং ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।
প্রায় প্রত্যেক বাড়ির ছাদে মাইক লাগিয়ে, এই উৎসব পালন দৃষ্টান্তহ্বরুপ। তবে এক সময়, হামাল দিস্তায় কাচের গুঁড়ো করে, এরারুট অথবা সাগুর মাড় দিয়ে কিংবা খই বা আতপ চালের মাঞ্জা সুতিরর সুতোর উপরে দেওয়া শুরু হয়ে যেত ১৫ দিন আগে থেকেই। সূত্রাগড় স্টেশন বড়বাজার বিভিন্ন এলাকায় ঘুড়ি লাটাই সুতোর দোকান থাকলেও নিশ্চিন্তপুর ঘুড়ি পাড়াতে পরিণত হয়, অগণিত ঘুড়ি প্রেমীদের ভিড়ে।
বর্তমান জনজীবনে সময় অভাবে অন্যান্য জিনিসপত্র মতোই, চীনা মাঞ্জানজার নাইলন সুতো ভোকাট্টা করে দেয় দেশীয় মাঞ্জা দেওয়া সুতো কে। বিগত ১৫ বছর ধরে ক্রমশ দূরে সরিয়ে জায়গা করে নেয় নাইলন সুতো। অল্প দামে ক্ষুরধার এই সূত্রে আকৃষ্ট হয়ে যায় ৮ থেকে ৮০ সকলেই। প্রথমদিকে ক্ষতির পরিমাণ অত্যন্ত কম থাকলেও। পরবর্তীতে মানুষ সহ পশুপাখিও বাদ যায়না এর কবল থেকে। কলকাতার মা ফ্লাই ওভারের দুর্ঘটনা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার মতন এসে পৌঁছায় শান্তিপুরেও। কমপক্ষে জনা দশেক এর কবলে পড়ে, কারোর মৃত্যু হয়েছে, কেউবা সারা জীবন প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছেন। পশুপক্ষীর হিসাব, অগণিত বললেই ভালো হয়।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন প্রশাসনিক মহল থেকে বিভিন্ন প্রচারকার্য চালালেও, বিপুল পরিমাণে মানুষের অসচেতনতার ফলে সম্পূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি এই ক্ষতিকারক সুতোকে। অবশেষে ২০২০ সালের ২০ শে মার্চ মহামান্য ন্যাশনাল গ্রীন ট্রাইবুনালের নির্দেশ নামা জারি হয়। পরিবেশ দপ্তর পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই নির্দেশ মোতাবেক চাইনিজ মাঞ্জার সুতোয় ঘুড়ি ওড়ানোর ওপর নিষেধাজ্ঞ আনে। এরপরেও অবৈধভাবে বিক্রি করা বা ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আইগত ভাবে মামলা মোকদ্দমার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
গত দুদিন যাবত শান্তিপুর থানার পক্ষ থেকে সেই মর্মে একটি প্রচার গাড়ি সারা শহর এবং গ্রাম ঘুরে বেড়াচ্ছে মানুষকে সচেতন করতে। শান্তিপুর পৌরসভার পক্ষ থেকেও, এই মর্মে বিভিন্ন ফ্লেক্স ব্যানার হোডিং টাঙানো হয়েছে জনবসতিপূর্ণ এলাকায়।
সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গেছে, গত দু’বছর করো না পরিস্থিতির কারণে, মানবিক দিক চিন্তা করে আইনের ব্যবহারিক প্রয়োগ অনেক কম ছিলো, তবে সে সংখ্যাটাও নেহাত কম নয়। তবে এবার অর্থাৎ ২০২৩ সালে, সুতো সংক্রান্ত নির্দেশ লংঘন করলে, কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হবে প্রশাসন থেকে শুরু করে থানা।
আগামী ২০ শে জুন , রথযাত্রা। সাত দিন বাদে উল্টো রথ, আর সেই উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে ১৫ দিন ধরে উৎবে গা ভাসাবেন শান্তিপুর বাসী। ঠিক তার আগে পুলিশ প্রশাসন থেকে পুরসভা সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে, একবার সচেতন করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছেন বলেই জানা গেছে।