মাসি মাঠে দিনমজুরের কাজ করে খরচ যোগায় ! গৃহশিক্ষক ছাড়াই মাধ্যমিকে কৃতি দরিদ্র আদিবাসী পরিবারের ছাত্র

Social

অতনু ঘোষ পূর্ব বর্ধমান: মেমারি এক নম্বর ব্লকের দেবীপুর অঞ্চলের পূর্ণ গ্রামের সূর্য বেসরা। ছোট থেকেই মানুষ এই পূর্ণগ্রামে তার মামার বাড়িতে। মা অসুস্থ, বাবা কোনরকমে কাজ করে সংসার চালায়,তাই সূর্যর মাসি সূর্য কে নিয়ে আসে পূণ‍্যগ্রামে। তার মাসির আদর যত্নে লালিত পালিত হয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা সূর্যর।

গ্রামের প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডির সীমানা পেরিয়ে সে ভর্তি হয় দেবীপুর আদর্শ বিদ্যালয়ে।
পরিবারে অভাব অনটন নিত্য দিনের সঙ্গী।
মাসী দিন মজুরের কাজ করে কোনরকমে সংসার চালানোর পাশাপাশি সূর্যর পড়াশোনার খরচও চালাতেন।

গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা সূর্যের মাসির ছিল না।
পূণ‍্যগ্রাম শ্রীকৃষ্ণানন্দ মিশনে খোলা আকাশের নিচে গাছের তলায় বিনা পয়সায় পড়াশোনা করে সূর্য এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসে এবং এদিন শুক্রবার মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা হওয়ার পর জানা যায় যে কোন গৃহশিক্ষক ছাড়াই সূর্য বেশ ভালো ফল করেছে মাধ্যমিকে। তার প্রাপ্য নাম্বার ৬২৬।

এই পুণ্য গ্রাম শ্রীকৃষ্ণ আনন্দ মিশনে প্রায় ৩০ জন ছাত্রকে বিনা পয়সায় পড়াশোনা করানো হয়।

আগামী দিনে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন সূর্যের।সূর্যের এই সাফল্যে খুশি পূর্ণগ্রাম কৃষ্ণানন্দ মিশনের মহারাজ সহ সকলেই। আগামী দিনেও সূর্যর পাশে থাকারও আশ্বাস শোনা গেল মিশনের মহারাজের মুখে।

এদিকে সূর্য বেসরার এই সাফল্যে যার অবদান অনস্বীকার্য এই সূর্য বেসরার মাসি জানান, ছোটবেলায় ওকে নিয়ে এসেছি। আমাদের আদিবাসীদের মধ্যে অনেকেই তো মদ খায়। ওর বাবা ও একটু নেশা করে। ওর মায়ের শরীর খুব খারাপ। তাই যাতে পড়াশোনা করতে পারে সেজন্যই নিয়ে আসি।

প্রতিটি বিষয়ে গৃহ শিক্ষক দেয়ার ক্ষমতা যেসব ছাত্রের পরিবারের আছে তারা হয়তো আজ মাধ্যমিকে ভালো ফল করে খবরের শিরোনামে আছে,কিন্তু প্রতিটি বিষয় তো দূরের কথা একটিও গৃহশিক্ষক দেওয়ার ক্ষমতা সূর্য বেসরার পরিবারের মতো যে সকল পরিবারের নেই তাদের খবর কয়জনই বা রাখে ?
তাই সকলের কাছে বিশেষ করে দিন আনা দিন খাওয়া পরিবারগুলোর কাছে সূর্য একটা আকাশের সূর্যের মতো জ্বলন্ত উদাহরণ।

Leave a Reply