রাইটার” নিয়ে পরীক্ষা ! প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে মাধ্যমিকে সফল জমজ বোন, গড়তে চান প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ স্কুল

Social

মলয় দে নদীয়া:- ঝুমা মল্লিক, স্নায়বিক প্রতিবন্ধকতার কারনে একটু একটু করে হারিয়ে ফেলছে স্মৃতিশক্তি, মাঝে মাঝেই চিনে উঠতে পারেন না আপনজনদের। মুখ ও বধির রুমা মল্লিক ছোট্ট থেকে সাধারণ স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। পরীক্ষার ঠিক আগে অসুস্থতার কারনে অনিশ্চিত হয়ে উঠেছিল নদীয়ার শান্তিপুরের বাগআঁচড়া হাই স্কুলের দুই ছাত্রীর পরীক্ষায় বসা। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে শুধু পরীক্ষায় বসা নয় এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্য ফলাফল দুজনের। রুমা পেয়েছে ৩২৪, ঝুমা প্রাপ্ত নম্বর ৩২১।

নদিয়ার শান্তিপুরের বাগআঁচড়া গ্রামের বাজারপাড়া এলাকার বাসিন্দা শ্যামল মল্লিকের কর্গেট আর ক্যানেস্তারা পেটানো ঘর, ঝুর ঝুর করে ঝরে পড়া পাটকাঠির বেড়া জানিয়ে দেয় সংসারে দৈন দশা। দিনমজুরের কাজ করে যেটুকু রোজগার হয় তাতে কোনক্রমে পেট চলে পাঁচজনের, তাই দুই মেয়ের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় চিকিৎসার খরচ চালাতে পারেননি শ্যামল, মাঝপথে বন্ধ হওয়া চিকিৎসায় ঝুমার স্নয়বিক সমস্যা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। শত প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও অদম্য জেদ নিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেছে দুই বোন। সরকারি “মানবিক ভাতা” কিছুটা সাহায্য করেছে তাদের, মানছেন মা রেখা মল্লিক।

তিনি বলেন, বাড়িতে কোন প্রাইভেট টিউশন দিতে পারিনি, পরীক্ষার আগে অসুস্থ হয়ে গেল ভাবলাম পরীক্ষা দিতে পারবে না, ঈশ্বরের আশীর্বাদ আর মনের যেতে লড়ে যাচ্ছে দুই মেয়ে” ।

বিশেষ ধরনের শারীরিক সক্ষমতায় নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে পড়ানো হয় ছাত্র-ছাত্রীদের। তার জন্য প্রয়োজন নানাবিধ শিক্ষা সহায়ক সামগ্রী। ব্যয়বহুল এই শিক্ষা পদ্ধতির কাছেও পৌঁছতে পারেনি রুমা ও ঝুমা। সেই আক্ষেপ থেকেই স্বপ্ন সাধারণ প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়ে তুলবেন “বিশেষ স্কুল”।

ঝুমা বলছেন, শিক্ষক শিক্ষিকারা চেষ্টা করেন ঠিকই কিন্তু উপযুক্ত পরিকাঠামোরভাবে কিছুই বুঝতে পারি না। অনুমান করে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ গ্রহণ করতে পারি মাত্র”। হুইল চেয়ারে ভর দিয়ে চলাফেরা করেন রুমা, স্বপ্ন দেখেন যোগ্যতা বলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে দিদির সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য গড়ে তুলবেন উপযুক্ত পরিকাঠামো যুক্ত স্কুল, স্কুলে রুমা ঝুমার মতো সাধারণ পরিবারে প্রতিবন্ধীরাও পড়ার সুযোগ পাবেন ।

রুমা ঝুমার এই লড়াইয়ে প্রথম থেকেই পাশে ছিল শান্তিপুরের “বলাকা” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। সংগঠনের উদ্যোগে রাইটার জোগাড় হয়েছিল রুমা ও ঝুমার। দুই বিশেষ ছাত্রীর হার না মানা জেদ আর অদম্য লড়াই কে কুর্নিশ জানিয়েছেন বাগআঁচড়া হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়, তিনি বলেন ” আমরা আমাদের সর্বোচ্চ সামর্থ্য দিয়ে ওদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। সরকারি উদ্যোগে যদি কিছু সাহায্য আসতো তাহলে আরো ভালো হতো”।

Leave a Reply