মলয় দে নদীয়া:- পাঁচশো বছরের প্রাচীন বীরনগরের উলাই চন্ডী মাতার পূজো কে কেন্দ্র করে মেলায় হাজার হাজার ভক্তদের ঢল বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন।
কথিত আছে বাণিজ্য করতে শ্রীমন্ত চাঁদ সওদাগর ভাগীরথী নদী দিয়ে সিংহলে যাচ্ছিলেন এবং উলা’তে থেমেছিলেন প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য এবং তিনিই উলাই চন্ডী মায়ের পূজা করেন।
অন্য মতে, ঝড়ে পাড়ে বেঁধে রাখা তার নৌকা ডুবে যায় এবং তিনি রাত্রি বাস করতে বাধ্য হন এবং তিনি কঠিন জ্বরে আক্রান্ত হন, স্থানীয় ভাষায় যার নাম ওলা। পূজো দিয়ে সুস্থ হন তিনি তাই পূজার নামকরণ এই রকম।
প্রতিবছরই শুক্লপক্ষের পূর্ণিমাতে মা উলাই চন্ডীর মেলা উপলক্ষে লোক সমাগম হয় যথেষ্ট।
প্রত্যেক বছর বুদ্ধ পূর্ণিমার পূণ্য লগ্নে পূর্ণ তিথিতে চিরচারিত প্রথা হিসেবে মেনে চলে আসছেন বীরনগর পৌরবাসী এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলি পাশাপাশি নদীয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সমাগম ঘটে বুদ্ধ পূর্ণিমার পূণ্য লগ্নে শ্রীশ্রী চন্ডী মাতা পূজা দিয়ে শুরু করে শ্রীশ্রী বিন্ধ্যবাসিনী এবং শ্রীশ্রী মহিষমর্দিনী মাতার পূজার্চনা বুদ্ধ পূর্ণিমার পূণ্য লগ্নে বীরনগর এর জাতীয় উৎসব অর্থাৎ একে অনেকে জাতের মেলা ও বলে থাকেন.।
এলাকার লোকেরা জানান এখানে মা খুব জাগ্রত এখানে মানত করে যারা ফল পেয়েছেন তারা অনেকে পাঠা বলি বা নানা রকম পুজো অর্চনার মধ্য দিয়ে তাদের মানত পালন করেন বীরনগর ( উলা ) ।খুব পুরনো শহর কথিত আছে এখানে আগে মহিষ বলি হত..উলা থেকে বীরনগরের জানা না জানা কথার মধ্যে অন্যতম।
বীরনগরে বুদ্ধপৃর্নিমায় তিনজন দেবী পূজিত হন,
মহিষীমর্দিনী, বিন্ধ্যবাসিনী, গনেশজননী দেবীদুর্গা বীরনগরের প্রাচীন কালের নাম ছিল উলা এই নাম নিয়ে নানা মতভেদ আছে কার ও মতে নদীর স্রোতধারা র চরে উলুখরের বন ছিল, উলুখড়ের বানিজ্য থেকে এই জনপদ টি গড়ে উঠে নামহয় উলা গ্রাম।
কারও মতে উলা আরবি শব্দ যার অর্থ শ্রেষ্ঠ বা জ্ঞানী, একদা বহু পন্ডিত লোকের বাস ছিল তা থেকে নাম হয় উলা,।
আবুল ফজলের “আইনি আকবরী” তে উলা গ্রামের উল্লেখ আছে,বত্রিশ (৩২) মহলের মধ্যে এটি ছিল, ১৮১৯ র ৮ মে সমাচার দর্পণ পত্রিকায় খবর বেরিয়ে ছিলঃ২৮ শে বৈশাখ ৯ইমে রবিবারে বৈশাখী পুর্নিমা তে মোং উলাগ্রামে উলাইচন্ডী তলা নামে এক স্থানে বার্ষিক চন্ডিপূজা হইবেক ঐ দিনে গ্রামের তিন পড়ায় বারোয়ারী তিন পূজা হইবে দক্ষিণ পাড়ায় মহিষমৃর্দিনী, মধ্য পাড়ায় বিন্ধ্যবাসিনী ও উত্তর পাড়্যয় গনেশ জননী দৃর্গা,।
কথিত আছে বাণিজ্য যাত্রায় বেরিয়ে শ্রীমন্ত্র সদাগর বিপদ থেকে পরিত্রান পাবার জন্য তীরে নেমে উলাই চন্ডির পূজা করেছিলেন তার থেকেই উলা গ্রাম।
উলাই চন্ডি হচ্ছে বৌদ্ধ প্রভাবিত দেবী পূজা পদ্বতি বৌদ্ধতন্ত্র অনুসারে,শুরু তে এই পূজা দলিত, হাড়ি সম্প্রদায়ের ছিল কিন্তু আনন্দ ও আপদ বিপদে সব সম্প্রদায়ের লোকেরা মানত করতেন, এখন তা প্রচলিত।
জনশ্রুতি আছে ওলাওঠা (কলেরা) রোগ থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই দেবীর পূজা করা হতো,তিনিই উলাইচন্ডি। যিনি রক্ষাকারী।পাল যুগের পর রাজা শশাঙ্ক এর আমলে জাতিভেদ প্রথা বিলুপ্ত প্রায়,ছিল,নিম্ন ও উচ্চবর্ন র ভেদাভেদ চলে যায়,ঘটে আত্মার মিলন, উলো গ্রামের উলাইচন্ডি পূজা তার একটা প্রকট।হাড়ি সম্প্রদায়ের লোকেরা এই পূজো কে আকড়ে ধরলেও এই পূজা ক্রমে হাতান্তর হতে থাকে। নদীয়া রাজ রাঘব রায় এই পুজো কে শক্তিদেবী পূজায় রুপান্তরিত করে, তার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী প্রথমে হাড়ি সম্প্রদায়ের লোকেরা তারপর নদিয়ার রাজারা,তারপর মুস্তফী রা তারপর অন্য সম্প্রদায়ের লোকেরা পুজো করেন, যদিও এখন এ নিয়ম।উলার নাম বদলের সাথে ব্রিটিশ আমলের ঘটনা যুক্ত,কথিত আছে,ভয়ংকর ডাকাত দের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ব্রিটিশ সরকার,উলাগ্রামের বাসিন্দা রা সেই অত্যাচারী ডাকাত দের ধরে ব্রিটিশ সরকারের হাতে তুলে দেয়,এই গ্রামের বাসিন্দাদের সৃকৃতি হিসেবে উলা নামের বদলে এই গ্রামের নাম রাখাহয় বীরনগর,আজও তা বীরনগর নামেই।দেবী উলাই চন্ডির মুর্তি বলতে, বটবৃক্ষের নীচে সেই সময় থেকে আজও রয়েছে একখন্ড মসৃন কালোপাথর খন্ড৷ জাগ্রত দেবী হিসেবে বীরনগর বাসীর কাছে পূজিত হন সব অনুষ্ঠানে।