নদীয়ার উমাপুরে শ্রীকৃষ্ণের নন্দ উৎসব এবং জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় নিয়ে এক মাস ব্যাপী কুঞ্জমেলা

Social

মলয় দে নদীয়া:- বাংলার তেরোশো পঁয়ষট্টি বঙ্গাব্দে বাংলাদেশের বরাব ধামে শ্রীকৃষ্ণের জীবনী সংক্রান্ত নানা ঘটনা ভক্তবৃন্দ দের মাঝে উপস্থাপিত করা পূজা করে এই অনুষ্ঠান শুরু হয়। যা পরবর্তী কালে শ্রীমৎ শশী মোহন বর্ধন এবং শ্রী কুঞ্জ মোহন দাসের সহচার্যে নদীয়ার ফুলিয়ার উমাপুর অঞ্চলে শুরু হয়, বাংলাদেশ ও ভারতবর্ষের বেশ কয়েকটি জায়গায় এই পূজার প্রচলন দেখা যায়, নদীয়ার কোমরপুর বাজার , মানপুর কোচবিহারের দু-একটি জায়গায় যা ঐতিহ্য এবং উৎসবে পরিণত হয়েছে। কোনো দিন তিথি নক্ষত্র নয়, ফাল্গুন মাসের প্রথম রবিবার শুরু হয়ে চৈত্র মাসের প্রথম রবিবার পর্যন্ত প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলায় শ্রীকৃষ্ণের নামকরণ, পুতনা বধ, মনিপারোনা, দধি মন্থন, বস্ত্রহরণ, দুর্গাপূজা, কালী পূজা জগবন্ধুপূজা, রাসলীলা , মহাভারতে শ্রীকৃষ্ণের ভূমিকা এ ধরনের নানা ঘটনা পাড়ার পাঁচ থেকে ১৭ বছরের ছেলেরাই সে আমল থেকে বংশক্রম অনুযায়ী অভিনয় করে আসছে, এমনকি মেয়েদের চরিত্রেও পুরুষরা সেজে অভিনয় করে থাকে। উমাপুরেরই একটি কীর্তন দল বংশ পরম্পরায় কীর্তন করে চলেছেন প্রতিবছর। আজ রাধা কৃষ্ণের মিলন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শেষ হলেও, আগামীকাল কবিগান, এবং তার পরের দিন বাউল গানের মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ বছরের মতো উৎসব। এই উপলক্ষে আজকের দিনে সকলের বাড়িতে সকলের নিমন্ত্রণ , বাদ যায় না পথ চলতি সাধারণ মানুষ উপস্থিত ভক্তবৃন্দ থেকে শুরু করে মেলার ছোটখাট দোকানীরাও তবে অবশ্যই নিরামিষ। একজনের বাড়িতে খাবার শেষ হলেই পরের বাড়িতে চলে মধ্যাহ্নভোজ।

প্রত্যেকের বাড়ির উঠানে মান কচুসহ বিভিন্ন আনাজ রোপন করা হয় বিপুল পরিমাণে ভক্তবৃন্দদের মধ্যাহ্ন ভোজের ব্যবস্থার খাদ্য উপাদান হিসেবে জোগানের উদ্দেশ্যে।

সকল বাড়িতে গৃহিণীরা রান্না করেন শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় মানের ডাল এবং কচুর শাক সহ পঞ্চব্যঞ্জনাদি।
দীর্ঘ এক মাস ধরে চলে আসা এই অনুষ্ঠানের মাঝে বিরতি বলতে শুক্রবার! সে আমলে কাছাকাছি হাট বসতো শুক্রবারে! এখন হাট না থাকলেও ওই দিন টা বিরতি হিসেবে মেনে আসছেন এলাকাবাসীরা। শান্তিপুর ফুলিয়া এবং নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তবৃন্দ দের সমাগম সহযোগিতা থাকলেও, মূলত এলাকাবাসীরাই এক মাস ধরে পালা করে বিভিন্ন দায়িত্ব নিয়ে থাকেন উৎসবের বিপুল পরিমাণের খরচ। এই উপলক্ষে আজকের দিনে একটি মেলাও বসে।
ভক্তবৃন্দরা মানত করে থাকেন সোনা রুপোর বাঁশি মুকুট।

তবে সম্প্রতি, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে তিল তিল করে গড়ে তোলা , মন্দির দালান ঘরে রাখা বিভিন্ন দামি পোশাক, সোনার রূপোর বাঁশি এবং অন্যান্য বাসনপত্র চুরি হয়ে যাবার কারণে, এবারের উৎসব কিভাবে সম্ভব হবে তা ভেবে ভেঙে পড়েছিলেন। কিন্তু বহু ভক্ত বৃন্দ স্বেচ্ছায় সহযোগিতার হাত বাড়ানোর ফলে তা আবারও স্বমহিমায় অনুষ্ঠিত হয়েছে এবার।

Leave a Reply