মলয় দে নদীয়া :- শনিবার সকাল এগারোটা কুড়ি মিনিটে , আমাদের সকলকে ছেড়ে অন্য এক লাল পাহাড়ের দেশে ঝুমুর গানের প্রচার এবং প্রসারে পাড়ি দিলেন লোকগানের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব সুভাষ চক্রবর্তী।
মৃত্যু কালে তার বয়স হয়েছিলো ৭১ বছর। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ে জন্মস্থান হলেও, সমগ্র পরিবার মিলে ঝুমুর প্রচারের সুবিধার্থে তিনি কলকাতার গাঙ্গুলী বাগানে থাকতেন সপরিবারর শুক্রবার শরীরে ব্যথা অনুভব করে প্রথমে অ্যাপেলো পরবর্তীতে পিয়ারলেস হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। শনিবার সকাল এগারোটা কুড়ি নাগাদ ভেন্টিলেশন থেকে তার নিথর দেহর কথা জানান চিকিৎসকরা ।
মৃতদেহ শায়িত ছিলো রবীন্দ্রসদনে, সেখানেই রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন থেকে শুরু করে বহু বিশিষ্ট জন, সংগীত অনুরাগী ব্যক্তিত্ব তাঁকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যান। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁর মৃতদেহ যথাযোগ্য মর্যাদায় বাঁকুড়ার আদি বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, পরিবার সূত্রে জানা গেছে, এখান থেকে ফেরার পর কলকাতা কালীঘাট মহাশ্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় আদিবাসীদের সাথে তার সম্পর্ক ছিলো পারিবারিক।
নদীয়ায় দীর্ঘদিন ধরে আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা দিশারী সংগঠনের সাথে সুভাষবাবুর সম্পর্ক ২০১৭ সাল থেকে। তবে সুভাষবাবু নদীয়ার প্রত্যেকটি গ্রাম এবং লোকগান ঝুমুর নাচের দলের সাথে পরিচিত তার বহু আগে। দিশারীর আয়োজনে, বিভিন্ন পরব এবং নাচ গানের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে বিভিন্ন ধরনের কর্মশালায় শিক্ষাদান করতেন তিনি। নদিয়ার আদিবাসীদের কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের কাজ থেকে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা আনার ক্ষেত্রে সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মানসী দাসের অভিভাবক ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে গোটা নদীয়ার সাথে শোকের ছায়া নেমে আসে।
মানসী দাস বলেন, আদিবাসীদের নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অভিভাবক চলে গেলেন। তবে তার যোগ্য উত্তরসূরী পুত্র এবং কন্যা বর্তমানে তাদের ভরসা।
আদিবাসীদের নয়নের মনি ঐতিহ্য পরম্পরার রক্ষাকারী ভাদু, টুসু সহ বাংলার হারিয়ে যাওয়া উৎসবগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করে প্রথম সারিতে এনেছেন সুভাষ বাবু। জঙ্গলমহলের সাংস্কৃতিক জাগরণে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
আশির দশক থেকে তাঁর সৃষ্ট “লাল পাহাড়ের দেশে যা” গানের তালে প্রথম নাচের পায়ে খড়ি সে প্রজন্ম বা এ প্রজন্মের প্রায় প্রত্যেক নৃত্য শিল্পীরই। শুধু একটা হারমোনিয়াম নিয়ে ক্ষণিকের মধ্যে মাটির গান বেঁধে ফেলতেন তিনি। আদিবাসী জনজীবনে হোক বা গ্রামের মেঠো পথে তিনি ছিলেন সাবলীল। লোকগান সচল রাখার জন্য পুত্র অর্পণ এবং কন্যা অর্পিতাকে পড়াশোনা শেখানোর পরেও বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঝুমুর দল তৈরি করার মন্ত্র দীক্ষিত করেছিলেন তিনিই। জাতীয় আন্তর্জাতিক পুরস্কারের ভূষিত এই শিল্পী
লেখক তথা গায়ক, বহুমুখী প্রতিভাবান মহান এই ব্যক্তি “ঝালমুড়ি” ছদ্মনামে চিরবিরাজমান থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।
তাঁর বিদেহী আত্মার চির শান্তি কামনা করি। পরিবার, পরিজন ও অনুরাগীদের সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে জানাই গভীর সমবেদনা।