মলয় দে নদীয়া :-সামনেই দোল। যথারীতি দোল উৎসব মানেই হচ্ছে রং খেলা। সেই রং খেলায় বাজারে এখন রাসায়নিক আবির এবং অন্যান্য রঙ ছেয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই রঙে রয়েছে ক্ষতিকর উপাদান। সেই ক্ষতিকর উপাদানের হাত থেকে রক্ষা পেতে শান্তিপুরের শ্রীরাম গাঙ্গুলী লেনে তৈরি হচ্ছে এবার দোল উৎসবের জন্য ভেষজ আবীর। বিভিন্ন রকম শাকসবজি থেকে এবং ফুল থেকে বিভিন্ন রঙের ভেষজ আবীর তৈরি হচ্ছে। যেমন সিমের পাতা থেকে তৈরি হচ্ছে সবুজ আবির,পুই মিচুরি থেকে তৈরি হচ্ছে বেগুনি রঙের আবির, কাঁচা হলুদ শুকিয়ে গুঁড়ো করে তা থেকে তৈরি হচ্ছে হলুদ রঙের আবির, এছাড়াও জবা ফুল শুকিয়ে গুড়ো করে তৈরি হচ্ছে লাল ভেষজ আবীর। অ্যারারুট ব্যবহার করে সেই সব রংয়ের সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন হালকা গাঢ় রঙের আরীর।
নদীয়ার শান্তিপুর শ্রীরাম গাঙ্গুলী লেনের শৈলেন চন্ডী নামে এক ভেষজ চাষে জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত কৃষক , সারা শান্তিপুরের ব্লক এবং শহরে রাসায়নিক নয়, প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী সার এবং কীটনাশ ছাড়াই জৈব পদ্ধতিতে চাষ করে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির একটি বাজারে নিয়মিত ক্রেতা সৃষ্টি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ ধরনের আগ্রহী চাষীদের নিয়ে গড়ে তুলেছিলেন কৃষাণ
স্বরাজ সমিতি নামে একটি সংগঠন। এই সংগঠনেরই মহিলাদের একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি করেছেন। সেই গোষ্ঠীর সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত রয়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ জন মহিলা। তাদের মধ্যে গৃহবধূ থেকে শুরু করে ,স্নাতক হওয়া বেশ কয়েকজন মেয়েও রয়েছেন। স্বনির্ভর হওয়া লক্ষ্যে তারা সেই সমিতির হয়ে বিভিন্ন ধরনের জিনিস সারা বছর ধরে তৈরি করে থাকেন। যেমন শীতের মৌসুমে তারা দিয়েছেন ডালের বড়ি। তৈরি করেছেন ক্রিম। বসন্ত কেটে গেলে আবিরের চাহিদা কমে যাবে তখন তৈরি হবে সাবান। এই সব সামগ্রী তৈরি করে এবং তা নিজেরা বিক্রি করে এবং অন্যান্য মাধ্যমে সেই সব সামগ্রী বিক্রি করে যা লাভ হয় তাই লভ্যাংশ পেয়ে থাকেন সেই সব মহিলারা। পড়াশুনা সামলিয়ে সংসারের কাজ সামলিয়ে সেই সব মহিলারা কিষান স্বরাজ সমিতির হয়ে সারা বছর ধরেই ছোটখাটো হাতের কাজ করে থাকেন। গত বছর স্নাতক হয়েছেন প্রগতি চন্ডী নামে এক গৃহবধু । তিনি জানিয়েছেন, এবছর ইতিমধ্যেই তারা অর্ডার পেতে শুরু করেছেন। এছাড়াও নিজেরাও সেই আবির বিক্রি করেন। যা বিক্রি করে লভ্যাংশ হিসাবে ১ কেজি আবির তৈরি করতে পারলে ৫০ টাকা হয়। স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে আমরা এই কাজ করছি।’তবে সংসার সামলে যেটুকু সময় দেওয়া হয়, সেই অনুযায়ী যথেষ্ট লাভ পাওয়া যায় ।যদি আরো বেশি সময় দেওয়া যায় তাহলে এটাই বড় একটি ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিণত হবে।
স্নাতক হওয়া অপর এক তরুণী অদিতি কুণ্ডু জানিয়েছেন,’বর্তমানে কাজের যা বাজার তাতে স্নাতক হওয়ার পরেও কাজ পাওয়া সত্যিই কঠিন। তাই আমরা গত তিন বছর ধরে এই সমিতির মাধ্যমে সারা বছর ধরেই কিছু না কিছু উৎপাদন করে থাকি। ভেষজ প্রসাধনী ইদানিং চাহিদাও হচ্ছে যথেষ্ট। ইচ্ছা আছে সরকারি কিছু সাহায্য পেলে আমাদের সমিতির কে আরো বড় আকারে তৈরি করা যাবে এবং আরও বেশি করে উৎপাদন করা যাবে। তখন বাড়বে লাভের পরিমাণ। শৈলেন চন্ডী জানিয়েছেন সিজেন ভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের উৎপাদন তিনি বিক্রি করতে সহযোগিতা করেন, এছাড়া শান্তিপুরে বিষমুক্ত যে বাজার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় তারা তৈরি করেছেন, সেখানেও এই আবির বিক্রি হয়ে থাকে। কলকাতাতেও এই ভেষজ আবীর পাইকারী বিক্রি করার বন্দোবস্ত করেন তিনিই ।’বর্তমানে ভেষজ আবিরের পাইকারি দাম শপতি কুড়ি টাকা। অর্থাৎ ২০০ টাকা কিলো। যা বাজারে রাসায়নিক সামগ্রী দিয়ে তৈরি আবিরের থেকে খুব বেশি নয়। তাই ক্রমশ বাড়ছে ভেষজ আবিরের চাহিদা। তবে এই উৎপাদনের সমস্ত উপাদান সংগৃহীত হয় নিজেদের চাষের থেকেই কারণ, বাজার থেকে থেকে সংগৃহীত ফুল ফল পাতা রাসায়নিক সার ও কীটনাশক দিয়ে উৎপাদিত হয়।