মলয় দে নদীয়া :- চা হোক বা কফি! বিদেশি হলেও বর্তমানে বাঙালীআনায় পরিণত হয়েছে। তা নিয়ে গান কবিতা নাটক কাব্য কত কিছুই না আছে।
চাহিদা ক্রমাগত বেড়েছে, পাল্টেছে চা পানের ধরন।
অতীতে কাঁচের গ্লাসে অথবা চিনামাটির কাপে। যা ধুয়ে পুনঃ ব্যবহার হতো, ঝামেলা ঝঞ্ঝাট এবং অন্যের চুমুক দেওয়া কাপে দ্বিতীয়বার চুমুক না দেওয়ার আবদারে বাজারে এলো প্লাস্টিক বা কাগজের কাপ , পরবর্তীতে মাটির ভাঁড়। পরিবেশের কথা মাথায় রেখে, বিদায় নিলো প্লাস্টিক কাপ, কাগজের কাপ নিয়ে বিতর্ক থাকলেও প্রবাহমান। মাটির ভাঁড়ের স্থান সবার উপরে। তবে মূল্যবৃদ্ধি এবং যোগানের অভাবে মাঝেমধ্যেই সমস্যা দেখা দেয়।
তবে এবারে, মুশকিল আসন।
চা হোক বা কফি খাওয়ার পর , বিস্কুটের মতন কড়মড়িয়ে আস্ত কাপটাই খেয়ে নেওয়া হয়? তাহলে তো আর কোনো সমস্যাই নেই। তাও যদি সে কাপও সুস্বাদু পুষ্টিকর কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে তাহলে তো কথাই নেই!
শুরুটা হয়েছিল ভারতের দক্ষিনে । ভুট্টা জোয়ার রাগি বাজরা এ ধরনের খাদ্যশস্য অত্যন্ত ফাইবার যুক্ত। বর্তমানে ফাস্টফুডের যুগে ব্যবহার ক্রমশই কম ছিলো। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে, বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধনে আগে তা দিয়ে প্যাকেট বন্দি ওয়েফার বিস্কুট , ক্রাঞ্চি অর্থাৎ ফাঁপা ধরনের মিষ্টি নোনতা ঝাল নানান স্বাদের বিস্কুট লুফে নিলো এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা। বৈচিত্র্য আনতে এবার তাই দিয়েই বানানো শুরু হলো, চায়ের কাপ। অত্যন্ত ফাইবার যুক্ত ভুট্টা, বাজরা রাগী জোয়ার এই বিশেষ ধরনের খাদ্য শস্য দিয়ে বানানো চায়ের কাপ যা খেলে , গ্যাস অম্বল বদহজম এবং পেটের সংক্রান্ত নানান সমস্যা দূর হবে। চায়ের পরে যাদের বিড়ি সিগারেট খৈনি তামাক পান খাওয়ার অভ্যাস, তারাও বলছেন কিছুক্ষণের জন্য সে মোহ ভুলে থাকা যাচ্ছে বিস্কুটের অদ্ভুত ফ্লেভার এবং ফ্রেশনেসে।
একদিকে ছিল প্রজাতন্ত্র দিবস , অন্যদিকে সরস্বতী পুজো। যা, কিশোর কিশোরী যুবক-যুবতীদের কাছে এক বিশেষ দিন। আর এই দিনকে কাজে লাগিয়ে নদীয়ার শান্তিপুর নতুনহাট অঞ্চলের চা ব্যবসায়ী মথুরা কর্মকার, দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় সেই বিশেষ ধরনের কাপ এনে দোকানের চা বিক্রির শুভ সূচনা করলেন।
তিনি বলেন আজ থেকে আট বছর আগে, রাজনৈতিক কারণে তার সরকার নিয়ন্ত্রিত একটি কাজ চলে যায়। রাস্তার সাথে বাড়ির সামনে কিছুটা জায়গা ছিলো, শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতায় শান্তিপুরের প্রথম মাটির ভাঁড়ের চায়ের সুবাদে তার দোকানের ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।
তবে সময়ের ব্যবধানে তা কিছুটা ভাটাঁ পড়তেই , অভিনবত্বের খোঁজ শুরু করেন তিনি। ইউটিউবে দেখলেও বাস্তবে সেই বিশেষ ধরনের কাপ খোলা বাজারে পেতে সময় লেগে গেলো প্রায় দু বছর। তার মধ্যে করোনা পরিস্থিতি ছিল বেশিরভাগ সময়।কলকাতার এক
প্রসিদ্ধ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে প্রাথমিক ভাবে দশ প্যাকেট আনিয়ে রেখেছেন তিনি। মথুরা বাবু জানাচ্ছেন, একটি প্যাকেটের মধ্যে ১৫ টি এ ধরনের কাপ থাকে। প্রতি কাপ প্রায় চার টাকা পড়ে যাচ্ছে। ৫০ -৬০ মিলিমিটার ঘন দুধের চা মাটির ভাঁড়ে বিক্রি হয় ১০ টাকায়, সে ক্ষেত্রে তার লাভ থাকে দুটাকা মতো। অন্যদিকে এই বিশেষ ধরনের কাপে ওই পরিমাণ চা দিয়ে বিক্রি করছেন বারো টাকায়, কফি ১৫ টাকা । আপাতত লাভ না হলেও, কাঁচামাল রুপী ওই কাপ প্রচুর পরিমাণে একসাথে কিনতে পারলে, সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে লাভ। অন্যদিকে ক্রেতাদের মনের সাথে পেটও থাকে যদি ভালো… তাহলে লক্ষ্মী ঘরে আসতে খুব বেশি দেরি হবে না।
তবে মথুরার চায়ের দোকানে, সরস্বতী পুজো উপলক্ষে নতুন এই বিশেষ ধরনের চা থুরি কাপ খেতে হাজির, নতুন শাড়ি, পাজামা পাঞ্জাবি পরে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে ঠাকুর দেখতে বেড়ানো খুদে পড়ুয়ারা। যুবক যুবতীরাও ভিড় জমান তাদের ঠেলে ।
তবে চায়ের থেকে , কাপ খেতেই বেশি ভীড় মানলেন দোকানদার মথুরা কর্মকারও। তবে চা খোর মাঝ বয়সী অথবা বয়স্করা জানালেন, খরচের জন্য বারে বারে চা খাওয়ার অভ্যেসজনিত কারনে সব সময় এই স্পেশাল চা খাওয়া সম্ভব হবে না।
তবে মাঝেমধ্যে দুই এক কাপ মন্দ নয়, বিড়ি সিগারেটের নেশাটা বন্ধ হবে মনে হচ্ছে।