মলয় দে নদীয়া :-কথায় আছে ‘ সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর এক বার ‘ কিন্তু এখন এই কথা যেন অতীত। রাজ্য সরকারে ব্যাবস্থাপনাতে এখন আমূল পরিবর্তন হয়েছে গঙ্গাসাগরে ।
গঙ্গাসাগর মেলায় পুণ্যার্থীদের যাতায়াতের জন্য ১২ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত বিশেষ ব্যবস্থা চালু থাকছে। বাড়তি ট্রেন চালাতে তৈরি শিয়ালদহও। পূর্বরেলের তরফে সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। গঙ্গাসাগর মেলার সময় পূর্ব রেলওয়ে ১২টি বিশেষ ট্রেন চালাবে। লোকাল বাড়ানো হবে ৩টি।শনিবার বিকাল ৪.৫৩ মিনিট থেকে পুণ্যস্নানের মাহেন্দ্রক্ষণ থাকবে পরের দিন অর্থাৎ রবিবার ৪.৫৩ মিনিট পর্যন্ত।মকর সংক্রান্তি পৌষ মাসের শেষে এই বিশেষ দিনে লক্ষ লক্ষ মানুষ পুণ্য স্নানের জন্য গঙ্গাসাগরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এবছর করোনা মহামারি কাটিয়ে চলতি বছরে গঙ্গাসাগর মেলায় পুন্যার্থীদের ঢল নেমেছে। পুন্যার্থীদের সুবিধার্থে এবছর বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। সেই কারণে এবার বাড়তি সতর্কতাও নেওয়া হয়েছে। পুলিশ, কোস্টগার্ড, নেভির পাশাপাশি বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরও সাগরে যথেষ্ট তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। এছাড়াও বাড়তি নিরাপত্তা ও নজরদারির জন্য এবার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তরফে সাগর তটে নিয়ে আসা হয়েছে বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত লিলি ও রোমিওকে।
সাগরমেলায় আসা পুণ্যার্থী সাগরস্নানের সময় কোনও ধরনের বিপদে পড়লেই ত্রাতা হিসেবে কাজ করবে এই জুটি।
সমুদ্রে ডুবন্ত পুণ্যার্থীদের সঠিক অবস্থান জানিয়ে দেবে প্রশিক্ষিত ডুবুরিদের।স্বাভাবিকভাবে জানতে ইচ্ছে করছে লিলি ও রোমিও আসলে কে? না না এরা কোনও প্রেমিক যুগল নয়, এনডিআরএফ কলকাতার সেকেন্ড ব্যাটেলিয়ানের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সারমেয় লিলি ও রোমিও।
জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর তিনটি ব্যাটিলিয়ানের মোট ৭৫ জন কর্মীকে এবারের গঙ্গাসাগর মেলাতে মোতায়েন করা হয়েছে। সাগরমেলা প্রাঙ্গন, কচুবেড়িয়া ও চেমাগুড়ি পয়েন্টে এরা মোতায়েন রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে । বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে রোমিও ও লিলি। এছাড়াও যে কোনও ধরনের বিপদ কাটাতে রিমোর্ট পরিচালিত লাইফবয়েওর ব্যবস্থা করা হয়েছে এবারের গঙ্গাসাগর মেলাতে।
শনিবার সকাল থেকেই গঙ্গাসাগের মকরসংক্রান্তি পুণ্যস্নান শুরু হবে। সেদিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত শাহী স্নানের পূর্ণযোগ রয়েছে। এই মাহেন্দ্রক্ষণে পুণ্যার্থীরা দলে দলে সমুদ্রে স্নান সেরে পুজো দেবেন কপিলমুনির মন্দিরে। তার উপর গত কয়েক বছরে সমুদ্রের জলস্তর বেড়েছে। জোয়ারের সময় জলস্তর বাড়ছে প্রতিনিয়ত। সমুদ্রের ঢেউয়ে পুণ্যার্থীদের ভেসে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা তৈরি হলে, এই দুটি সারমেয় তাদের বাঁচতে ঝাঁপিয়ে পড়বে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর ল্যাব্রেডর লিলি ও রোমিও দীর্ঘক্ষণ সাঁতার কাটতে পারে জলে।
রোমিও ও লিলিকে নিয়ে এনডিআরএফ আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই মহড়া চালিয়েছেন বারংবার।
অন্যদিকে এবারের গঙ্গাসাগর মেলাতে ইংরেজি ইউ আকৃতির রিমোর্ট চালিত লাইফবয়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পূণ্যার্থীদের কেউ তলিয়ে সমুদ্রের অনেকটা দূর চলে যায়, তখন রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে ইউ আকৃতির লাইভ বয় পাঠিয়ে উদ্ধার করা হবে তাঁদেরকে।
লাইফ বয় ঘন্টায় প্রায় কুড়ি কিলোমিটার গতিতে উত্তাল ঢেউ কাটিয়ে পৌঁছে যাবে ডুবন্ত মানুষের কাছে বাচাঁবে প্রাণ।
তবে সাগরতটে লিলি ,রোমিও কে পেয়ে অনেকটাই আনন্দিত পুন্যার্থীরা, তার সাথে তাদের মহড়া দেখতেও ভিড় জমাচ্ছেন সাগর তটে । এখন মানুষের জীবন বাঁচানোর লক্ষ্য নিয়ে প্রখর দৃষ্টিতে সাগর তটে তৎপর রয়েছে লিলি রোমিও ।