গ্রামফোন রেকর্ড প্লেয়ারে মহালয়া শুনতে বুড়ো থেকে বাচ্চা সকলেই হাজির হন কৃষ্ণনগরের দেব পরিবারে

Social

মলয় দে নদীয়া :- সাবেকি নাম কলের গান, গ্রামোফোন রেকর্ড প্লেয়ার টেপ রেকর্ডার ডিভিডি সিডি ডিজিটাল ডলবি থ্রিডি বর্তমানে এইটডি এভাবেই শ্রবনের শব্দের প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিকীকরণ হয়েছে। তবে নদীয়ার কৃষ্ণনগর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সীমান্ত পল্লীর দেব পরিবার এখনো বিশ্বাস করেন, ৫০- ৬০ বছর আগের রেকর্ড আজও প্রাণবন্ত শ্রুতিমধু। এমনকি ব্যবহারিক দিক থেকেও এতোটুকু নষ্ট বা বিকৃত হয়নি বিষয়বস্তু। সে আমলে গালা পাথর দিয়ে রেকর্ড নির্মিত হতো পরবর্তীতে পলি মার্ক।

দেব পরিবারে সাড়ে পাঁচশোরও বেশি রেকর্ড সংগৃহীত আছে আজও। পরিবার প্রধান রমেশ চন্দ্র দেব গত হলেও , তাঁর উত্তর অধিকার সূত্রে প্রাপ্ত এবং নিজের কেনা দুটি পরবর্তীর অর্থাৎ বর্তমান প্রজন্মের অরিন্দম দেবের সংগৃহীত তিনটি মোট পাঁচটি গ্রামোফোন আজও সচল রয়েছে দেব পরিবারে। এ বিষয়ে অরিন্দম দেব বলেন, বর্তমানে সারানোর মিস্ত্রির সংখ্যা কমে গেলেও, ছোটবেলা থেকে কলকাতা বিভিন্ন দোকানে যাওয়া অভ্যাস ছিলো, দূরের পথ বলে সামনে বসেই সারিয়ে নিয়ে আসতাম সেই থেকে অনেকটাই রপ্ত হয়েছে, আর এই কারণেই আজও অক্ষত রাখতে পেরেছি পাঁচটিই। পেশায় রেল কর্মী হলেও সমাজ সেবী অরিন্দম দেবের নেশা সৃজনশীল বিভিন্ন সৃষ্টি। তবে আগামীতে একটি গানের সংগ্রহশালা করার ইচ্ছা।

প্রতিবছরের মতো এ বছরেও সন্ধ্যে থেকেই তার দুই ছেলের বন্ধু বান্ধবী এলাকার কচিকাঁচারা ভিড় করেছে গ্রামোফোনে মহালয়া শুনবে বলে। অনেকের বাড়িতেই রেডিও না থাকার কারণে এলাকার প্রবীণরাও হাজির হন তার বাড়িতে, তবে ভোরে নয় সন্ধ্যাতেই শেষ হয় সেই পর্ব।
অরিন্দম বাবু বলেন ১৯৭৮ সালে বীরেন্দ্র কিশোর ভদ্রের চন্ডীপাঠ , পঙ্কজ কুমার মল্লিকের উপস্থাপনায় প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় আরতি মুখার্জি সহ সে সময়ের সংগীতযোগ্যদের স্বনামধন্য শিল্পীদের কণ্ঠস্বর আছে এই রেকর্ডে। দৃশ্যমান মহালয়া দেখে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কল্পনা শক্তি হারিয়েছে। তাই ঘর অন্ধ করে সম্পূর্ণ স্বর্গীয় পরিবেশে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সুমধুর কন্ঠ এবং সঠিক মন্ত্র উচ্চারণ শিশু মনে আজও প্রভাব ফেলে।

শুধু মহালয়ার রেকর্ড নয়, কাজী নজরুল ইসলামের ছেলে সব্যসাচী, প্রদীপ ঘোষের আবৃতি, নাট্য কোম্পানির যাত্রাপালা, বিসমিল্লাহ খানের সানাই, সলিল চৌধুরীর স্ত্রী সবিতা চৌধুরীর কন্ঠে বিরল গান, তার মেয়ে অন্তরা চৌধুরীর বাচ্চাদের গান, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাঁশবাগানে মাথার উপর চাঁদ ওঠার গান, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রসঙ্গীত, রামকুমার চট্টোপাধ্যায়ের টপ্পা, পরবর্তীতে নবদ্বীপ হালদার ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কমিকস, তারও পরবর্তী তে উষা উথুপের রাম্বা হো, লতা মঙ্গেশকরের হোপ ৮৬ ফাংশন, মিঠুন চক্রবর্তীর প্রতিবছরের পুজোর গান আরো কত কি রয়েছে তার সংগ্রহে। তবে যাত্রাপালা মহালয়া এ ধরনের বিষয়ে দুটি রেকর্ড মিলিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা একনাগারে বাজে, গানের ক্ষেত্রে একটি রেকর্ডই যথেষ্ট। সে সময় টিফিনের পয়সা বাঁচিয়ে , বড়দের দেওয়া পুজো পাব্বনী জমা করে পুজোর সময় রেকর্ড কেনা ছিলো অরিন্দম বাবুর তার নেশা। সারা বছর মানুষ প্রতীক্ষায় থাকতেন, বিভিন্ন শিল্পীদের পুজোর রেকর্ড এবার কি প্রকাশিত হয় তার প্রতীক্ষায়। এমনই নানা স্মৃতিকথা আলোচিত হলো গতকাল সন্ধ্যায়।

Leave a Reply