নাস্তিক ভিলায় কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলনে শহীদ দাভোলকারকে স্মরণ যুক্তিবাদী সমিতি’র

Social

মলয় দে নদীয়া :-নরেন্দ্র দাভোলকার — ভারতবর্ষে কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলন ও যুক্তিবাদ প্রসারে এক অগ্রণী নাম।মহারাষ্ট্রে কুসংস্কার বিরোধী আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন সংগঠিত করার ‘অপরাধে’ ধর্মীয় মৌলবাদীদের হাতে খুন হতে হয়েছিল তাঁকে। সেই শহিদ যুক্তিবাদী ডা. দাভোলকারকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি নবদ্বীপ শাখার পক্ষ থেকে নবদ্বীপ শহরের “নাস্তিক ভিলা”- য় আয়োজন করা হয় এক ঘরোয়া আলোচনা সভার। অনুষ্ঠান শুরু হয় বিভাস বিশ্বাসের কণ্ঠে মানবতাবাদী গান দিয়ে। তারপর শুরু হয় কবিতা পাঠ। কবিতা পাঠ করেন মৌসুমী দেবনাথ, সুবল সাহা, তানিয়া বিশ্বাস এবং সোনালি দাস। ‘রাষ্ট্র কর্তৃক যুক্তিবাদীদের কন্ঠরোধ ‘ এই বিষয়ের উপর বক্তব্য রাখেন বীণা বিশ্বাস, বিভাস বিশ্বাস এবং প্রতাপ চন্দ্র দাস।

নরেন্দ্র দাভোলকার ছিলেন একজন দরদী চিকিৎসক, সমাজসেবী, যুক্তিবাদী, কুসংস্কার বিরোধী আন্দোলনের নেতা, লেখক এবং মহারাষ্ট্র অন্ধশ্রদ্ধা নির্মূলন সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। সমাজ থেকে কুসংস্কার দূর করে মানুষকে বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে গড়ে তুলতে যে আন্দোলনের সূচনা তিনি ও তাঁর সতীর্থরা করেছিলেন তাতে দক্ষিণপন্থী উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন খুব বিপাকে পড়ে। এই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে তারা সর্ব শক্তি নিয়ে ঝাঁপায়। কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাসের অচলায়তন ভাঙা সহজ কাজ নয় । স্বভাবতই দাভোলকার বিরাগভাজন হয়েছিলেন স্বার্থান্বেষী ধর্মীয় গোষ্ঠী ও তথাকথিত সমাজপতিদের। এরই পরিণামে খুন হতে হয় তাঁকে। ২০১৩ সালের ২০ আগস্ট মহারাষ্ট্রের পুনেতে প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের দুই আততায়ীর গুলিতে তাঁর শরীর ঝাঝরা হয়ে যায়।
শুধু নরেন্দ্র দাভোলকর নয়, ভারতবর্ষের ধর্মীয় মৌলবাদীরা আরও অনেক বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদী ও সমাজকর্মীদেরও হত্যা করেছে। তাদের উদ্দেশ্য, এই হত্যার মধ্য দিয়ে কুসংস্কার ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনের গতিকে রোধ করা। তারা আসলে ভাঙতে চায় আন্দোলন কর্মীদের মনোবল। কিন্তু সে কাজে তাদের সফল হবার আদৌ কোনও সম্ভাবনা নেই। আলোর দিশারি দাভোলকারের আদর্শ সমাজের কোণে কোণে পৌঁছে দিতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি আজ তাঁকে মর্যাদার সাথে স্মরণ করলো। শুধু ভারতবর্ষেই নয়, প্রতিবেশী বাংলাদেশেও বিজ্ঞানকর্মী, যুক্তিবাদী ও মুক্তমনাদের উপর চলছে ধর্মীয় মৌলবাদীদের অত্যচার। রাষ্ট্রীয় উদাসীনতা, এবং ধর্মকে তোষণের কারণে মৌলবাদীদের এতো বাড়বাড়ন্ত।
ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, ” রাষ্ট্র জনগণকে শোষণ করার জন্য সমাজে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস টিকিয়ে রাখতে চায়। রাষ্ট্রীয় প্রশ্রয় ছাড়া মৌলবাদীদের এই বাড়বাড়ন্ত সম্ভব নয়। কাজেই সকল বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী এবং মুক্তমনাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে লড়তে হবে। কুসংস্কারের বিরুদ্ধে ব্যাপক সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। নরেন্দ্র দাভোলকারের দৃঢ়, অবিচলিত কুসংস্কারবিরোধী মানসিকতা আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয়। তাঁর দেখানো পথ ও শিক্ষাকে আদর্শ করে এগোতে হবে এবং বাস্তবে তা প্রয়োগ করতে হবে। এই বাংলায় তথা সারা দেশে কুসংস্কার বিরোধী বিল পাশ করানোর জন্য আমাদের গন আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং আমাদের আশা যে আমরা সেটা পারবো। “

Leave a Reply