মলয় দে, নদিয়া :- শান্তিপুরকে নদিয়ার অন্তর্ভুক্তির দাবীতে সকালে বিক্ষোভের পর বিকেলে মহা মিছিলের ডাক ছিল পূর্বঘোষিত।
মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ কিছু সূত্র মারফত সোশ্যাল মিডিয়ায় রানাঘাট নামকরণ হচ্ছে না, এমন কিছু ইতিবাচক পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরাফেরার পরে অনেকে আন্দাজ করেছিলেন হয়তো মহামিছিলের তীব্রতা কিছুটা খর্ব হবে। কিন্তু তাতে কোনই প্রভাব পড়েনি তা প্রমাণ হয়ে গেলো, বিপুল পরিমাণে জনসমাগমে।
আঠারোর সজীবতা একুশের উন্মাদনা , ৬০ ঊর্ধ্বদের স্মৃতির রোমন্থন যে আজও আছে , মহিলারাও যে দলীয় পতাকা ছাড়া একত্রিত হতে পারেন তা প্রমাণ হয়ে গেলো আজ বিকেলের মহা মিছিলে। মিছিল এলো মালঞ্চ থেকে, সূত্রাগড়ের সকল স্তরের মানুষ এলেন জাত ধর্ম রাজনীতি ভুলে, শহরের ২৪ টি ওয়ার্ড থেকেই সচেতন নাগরিকরা শান্তিপুরের রাজপথে হত্তা দিলেন উত্তর অধিকার সূত্রে প্রাপ্ত নদিয়াপদবী ফেরতের দাবিতে, দূর দূরান্তর গ্রাম থেকে কাজ ফেলে শহুরে মানুষের সাথে গলা মেলালেন, নদীয়ার দাবিতে।
সরকারপক্ষ পিছু হচ্ছেন এই গুঞ্জন প্রসঙ্গে বিক্ষোভকারীরা বলেন, এত মানুষের আবেগের দাম দিতে হলে আজই ঘোষণা করা দরকার ছিলো, তাই যতক্ষণ না আমরা নিজে কানে শুনছি ততক্ষণ এই আন্দোলন জারি থাকবে।
নেপথ্য ঘটনা হলো দেশ তখন স্বাধীন হওয়ার মুখে। দেশভাগের পরে নদিয়া জেলার কুষ্ঠিয়াসহ কয়েকটি মহকুমা পাকিস্তানে চলে গেলেও, হিন্দু অধ্যুষিত রাণাঘাট ও কৃষ্ণনগর রয়ে যাবে ভারতেই, এমনটাই মনে করা হয়েছিল। কিন্তু 12ই আগস্ট 1947 এ রেডিও তে ঘোষণা হয়েছিল দেশ স্বাধীন হচ্ছে আর নদীয়া জেলার নবদ্বীপ বাদে শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর ও অন্যান্য মহকুমা পূর্ব পাকিস্তানের মধ্যে পড়েছে। খবর শুনে গোটা শহরবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়লো । বাড়িতে মহিলারা উনুন জ্বলানো বন্ধ করে দিলেন, শান্তিপুর শহ নদীয়ার কিছু বীরপুরুষের নেতৃত্বে মিটিং মিছিলে বন্ধ হলো এত্বত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ।
এদিকে সেই সময় শহরে পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমান নাগরিকরা কৃষ্ণনগর রাজবাড়ির ওপর 15 তারিখে পাকিস্তানের পতাকা তুললো , পাকিস্তান জিন্দাবাদ ধ্বনিতে মুখর হলো নদীয়া ও শান্তিপুর শহরের রাজপথ । কৃষ্ণনগরের রানি জ্যোতির্ময়ী দেবী ইংরেজদের এই কাজ মেনে নিলেন না। পুত্র সৌরীশ ও নদীয়া সহ শান্তিপুরের পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্র সহ কিছু গণ্যমান্য কয়েকজনকে নিয়ে সোজা গিয়ে দেখা করলেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে।
কান্ডটা ঘটেছিল আসলে Radcliffe সাহেবের ম্যাপ আঁকার ভুলে, কোন প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত ছিলোনা । তাই যখন ঘটনা Mountbatten এর কানে গেল তখন হুকুম দিলেন এক্ষুনি সংশোধন করতে । কিন্ত বললেই কি হয় ? সবকিছু ঠিকঠাক করে আসতে হয়ে গেল 17 তারিখের রাত ।
সতেরোই অগাস্ট রাতে রেডিওতে ঘোষণা হল যে, কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর ও রাণাঘাট ভারতের মানচিত্রেই থাকছে। উল্লাসে ফেটে পড়ল এলাকার মানুষ।
ঝটপট রাজবাড়ী থেকে পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে তোলা হলো তেরঙ্গা । আঠারোই অগাস্ট স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলিত হল নদিয়া সহ শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায়।
আজও তাই নদিয়া তথা শান্তিপুরের মানুষ 18 আগস্ট স্বাধীনতা দিবস পালন করেন !
এভাবে রুখে না-দাঁড়ালে, সেদিন হয়তো শান্তিপুর সহ রাণাঘাট আর কৃষ্ণনগর পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেত। পন্ডিত লক্ষীকান্ত মৈত্রের শান্তিপুর নদিয়া থেকে হয়ে যাবে ব্রাত্য? কিছুতেই মেনে নেবেন না শান্তিপুরের সর্বসাধারণ নাগরিকরা। তাই রাজপথে বিজেপি তৃণমূল সিপিএম কংগ্রেস সকলেই মিলে মিশে একাকার, পায়ে পা মেলানোর সাথে গলা মেলালেন শান্তিপুর থাক নদিয়াতেই।