মলয় দে দীয়া :-ঘুড়ির ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায়
প্রায় ২৮০০ বছর আগে পৃথিবীর মধ্যে চিন দেশে সর্ব প্রথম ঘুড়ি ওড়ানোর নিদর্শন পাওয়া যায়। তবে সে সময়ে কাগজের আবিষ্কার না হওয়ার ফলে হালকা কাপড় দিয়ে ঘুড়ি তৈরি করতেন বলেই জানা যায়। তার পর এশিয়া অতিক্রম করে ঘুড়ি ইউরোপের আকাশের দখল নেয়। পরবর্তী কালে ঘুড়ি ওড়ানোর এই অবকাশকালীন বিনোদন ধীরে ধীরে এশিয়ার অন্য স্থানে যথা ভারত, জাপান কোরিয়া, বাংলাদেশ, পাকিস্তানে ছড়িয়ে পড়ে। আর এখনকার দিনে ঘুড়ি ওড়ানো মানুষের কাছে এতটাই জনপ্রিয় যে,এই বিনোদনটি একটি আন্তর্জাতিক উৎসবে পরিণত হয়েছে।
তবে এই বাংলার মানুষ বিশ্বকর্মা পুজো আর মকরসংক্রান্তির দিন ঘুড়ি ওড়ানোয় মাতে। কিন্তূ নদীয়ার শান্তিপুরে জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি যাওয়া এবং আসার মধ্যবর্তী সময়ে, আট থেকে আশি সকলের হাতেই ঘুড়ি লাটাই। রথের মেলার জিলিপি এবং বর্ষাকালীন প্রধান ফল কাঁঠাল নিয়ে, ছাদে মাইক লাগিয়ে অদ্ভুত ঘুড়ি উন্মাদনাও তেরো পার্বণ এর মধ্যে অন্যতম জায়গা করে নিয়েছে। প্রায় এক মাস আগে থেকে হামাল দিস্তা তে কাঁচগুড়ো খইয়ের এবং সাগুর মিশ্রণে সুতির সুতো মাঞ্জা দেওয়া ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় পরিণত হয়েছিলো। তবে আন্তর্জাতিক বাজার দখল করতে চিনা নাইলন সুতো ক্রমশ বাজার দখল করেছিলো সর্বত্র। যার ফলস্বরুপ পশুপাখি থেকে মানুষ, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন সকলেই, এমনকি এই কারণে গুরুতর দুর্ঘটনায় অসুস্থ থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে অনেকের। প্রশাসনিক ধরপাকড়ে গত বছর থেকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ হয়েছে নাইলন সুতো। শান্তিপুর নিশ্চিন্তপুরে গড়েওঠা ঘুড়ি পাড়া, তাই এবার একেবারে শুনশান। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন এই এলাকায় কুড়ি পঁচিশ টি ঘুড়ির দোকান দেওয়া অনেকেই এবার নিরুৎসাহী। সম্পূর্ণভাবে নাইলন সুতোয় বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সাধারণ মানুষের কাছে সুতির সুতো দিয়ে ঘুড়ির প্যাচ খেলা হাস্যকর, ক্রেতারা চাইছেন অল্প পয়সায়, শক্তিশালী নায়লন সুতো ।
অন্যদিকে সুতির সুতো যোগান নেই ঠিক মতো। দুর্ঘটনাগ্রস্ত মানুষ পশু পাখির কথা ভেবে তারা নিজেদের নাইলন সুতা কেনা এবং বিক্রি থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন। এ বছরটা এভাবে ডামাডোলে যাওয়ার পর সম্পূর্ণভাবে অভ্যাস হয়ে গেলে পরবর্তীকালে বাধ্যতামূলকভাবে আবারো ফিরে আসবে সুতির সুতো। তবে নাইলন সুতাকে প্রতিহত করতে ছোট কাঠের লাটাইয়ে সুতির সুতো মাঞ্জা দেওয়া অবস্থায় ভিন রাজ্যে থেকে পাড়ি দিয়েছে এ রাজ্যে। নাইলন সুতো নিষিদ্ধ হলেও, প্লাস্টিক ঘুড়ি কেন নয়! এ প্রশ্ন জানা নেই অনেকেরই। তবে অল্প পয়সার প্লাস্টিকের ঘুড়ির ভিড়ের মাঝে বল কাঠি, পেট কাঠি, জেব্রা, মুখ পোড়া, পাশকাঠি,আয়না কাঠি,
পিলের লেজ, ধরনের কাগজের তৈরি প্যাঁচ খেলার ঘুড়ির সাইজ অনুযায়ী একতে দুতে নানান নামে পরিচিত ঘুড়ি এখনো নিজেদের অস্তিত্ব বজায় রেখেছে। শুধুমাত্র বিনোদনের জন্য,
চারকোণা আকৃতির বাংলা ঘুড়ি, ড্রাগন, বক্স, মাছরাঙা, ঈগল, ডলফিন, অক্টোপাস, সাপ, ব্যাঙ, মৌচাক, কামরাঙা, আগুন পাখি, প্যাঁচা, ফিনিক্স, চিল, জেমিনি, চরকি লেজ, পাল তোলা জাহাজ, জাতীয় পতাকা প্রমূখ প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয় ফুলিয়ায়।সেখানে তারক ব্যানার্জীর মাঠে রীতিমতো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রতিযোগিতা হয়।