প্রচন্ড গরমে দেহ জুড়ায় তালপাতার পাখার বাতাস

Social

মলয় দে নদীয়া:- শীত শেষ হতেই তালপাতার পাখা তৈরির কাজ শুরু হয়ে যায়। তালগাছের পাতা কাটা, তাকে জলে ডুবিয়ে রেখে জাঁক দিয়ে পাতাকে সোজা করা হয়। তারপর সেই পাতাকে সাইজ করে কাটা, সরু লম্বা কাঠি দিয়ে বাঁধা, রং করা ইত্যাদি নানা পর্বের মধ্য দিয়ে পাখা রেডি হলে তার বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়।হাতপাখার বিবর্তনের ইতিহাস আজ থেকে প্রায় তিন হাজার বছর পূর্বে।

এমনকি গ্রিক রোমানদের যুগেও এই হাতপাখার প্রচলন ছিল। প্রথম দিকটায় পাখাগুলো ছিল একটা সম্পূর্ণ অংশ। ভাঁজ বা ফোল্ডিং পাখা এসেছে আরো অনেক পরে।তখন এসব পাখা বেশ দুর্মূল্যই ছিল। এগুলোতে ব্যবহার করা হতো মণিমুক্তো ও হাতির দাঁত। সোনা-রুপোর পাত বসানো হাতপাখাগুলোয় নিপুণ হাতে শিল্পীরা আঁকতেন সেই সময়ের সামাজিক প্রেক্ষাপট, রাজনৈতিক চেতনা কিংবা ধর্মীয় নানা কাহিনী, ফুল লতাপাতাসহ সমসাময়িক নানান বিষয়াবলী।

আঠারো শতকের গোড়া থেকে ইউরোপে হাতপাখা তৈরি শুরু হয়। তবুও চীন থেকে আসা পাখার আবেদন তখনও ছিল তুঙ্গে। লন্ডনের গ্রিনউইচের এই মিউজিয়ামের প্রদর্শনীতে যে পাখাগুলো স্থান পেয়েছে তার ঐতিহাসিক মূল্যও প্রচুর। হেলেন অফ ট্রয়, আইভরি পার্ল ফন্টেজ, ট্রাইফোল্ড প্রভৃতি ৩,৫০০ এর কাছাকাছি দুষ্প্রাপ্য সব হাতপাখা রয়েছে এই জাদুঘরের সংগ্রহশালায়।

খুব বেশি দিন আগের কথা নয়। এই ইংরেজ আমলে এমন কি ইংরেজ আমলের পরেও জজ-ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে, রেল পোস্ট অফিসে ধরনের দপ্তরে গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিকদের জন্য সরকারি খরচে নিযুক্ত থাকতেন আর্দালি, যাদের একমাত্র কাজ ছিল বড় বড় পাখা দিয়ে বাতাস করা। তার পরবর্তীকালে দড়ি দিয়ে টেনে। তখন এ কাজের জন্ তবে গ্রাম বাংলায় হাত পাখার কদর এখনো কমে নি। কৃষক মাঠে কাজ করছে, আর ওনার স্ত্রী ওনার জন্য খাবার নিয়ে আসছে এবং সাথে একটি হাত পাখা। কৃষক খাচ্ছে আর গৃহবধু হাত পাখা দিয়ে বাতাস করছে। এই ছবি যেন মনে দাগ কেটে যায়। সৌন্দর্যের দিক দিয়ে সবচেয়ে এগিয়ে রাখার মতো যে পাখা সেটি রঙিন সুতোর ‘নকশি পাখা’। অনেকটা নকশিকাঁথার মতো। তবে পাখার জমিন যেহেতু ছোট, সেহেতু সেখানে কারুকাজের সুযোগও কম। তবে সুতো দিয়েই পাখার গায়ে পাখি, ফুল, লতা-পাতা নানান শিল্পকর্ম ফুটিয়ে তুলতে বাড়ির মহিলারা। পাখার বাতাসে প্রাণ যেমন জুড়ায়, তেমনি বাহারি সব পাখা দেখে চোখও জুড়ায়।কত রকমের পাখা থাকতো সেই সময় বাড়িতে, কাপড়ের পাখা, বাঁশের চাটাইয়ের রঙিন পাখা, তালপাতার পাখা, ভাজ পাখা, চায়না পাখা, ঘোরানো পাখা। তবে চীন জাপানে আজও মহিলাদের অহংকার ভাঁজ করা হাতপাখা। ইলেকট্রিক পাখা আসার পর বাংলায় জামাইষষ্ঠীতে মাঙ্গলিক হিসেবে ব্যবহার করা হতো। প্লাস্টিক হাতপাখার দাপটে এখন তা লুপ্তপ্রায়।

স্বল্প হলেও তালপাখার চাহিদা রয়েছে আজও‌। এ রকমই এক তাল পাখা ব্যবসায়ীর সাথে সাক্ষাৎ হলো আমাদের, উত্তর 24 পরগনার বজ বজ থেকে ব্যবসায়িক কারণে নদীয়ায় আগত যিনি প্রায় 10- 12 বছর ধরে নিয়মিত সারাবছরই নদীয়ার বিভিন্ন প্রান্তে হাতপাখা পাইকারি বিক্রি করে থাকেন।

Leave a Reply