মলয় দে নদীয়া:- প্রখর রৌদ্রে প্রায় প্রত্যেক জেলাতেই উষ্ণতার পারদ পার করেছে ৪০ ডিগ্রীর গণ্ডি। উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী তড়িঘড়ি আজ জেলার উষ্ণতা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বসছেন মিটিং এ। গ্লোবাল ওয়ার্মিং এ বেসামাল প্রকৃতিও। বিজ্ঞানীরা অনুমান করছেন এভাবেই ক্রমশ বাড়তে থাকবে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা। দূষণের ফলে ফুটো হয়েছে বাতাসের ওজন স্তর, ফলে সূর্য রশ্মি তীব্রভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে পৃথিবীর উপর, তার ওপর নানান রকম দূষণ, রেডিয়েশন তো রয়েছেই।
উন্নয়নের জোয়ারে বনভূমি হয়েছে সাফ ! প্রকৃতি বিজ্ঞানীরা বলছেন বাইরের সর্বনাশ তো হয়েই গেছে, এখন নিজেদের অক্সিজেন নিজেরা তৈরি করলে প্রকৃতি হয়তো কিছুটা রক্ষা পেতে পারে। না ..না কোনো কৃত্রিম উপায়ে নয়, দ্রাকেনা,এরিকা পাম , বাম্বু পাম , ফিকাস বেঞ্জামিনা , ছোট রাবার গাছ, স্পাইডার প্ল্যান্ট, স্নেক প্ল্যান্ট, মানিপ্লান্ট, পিস লিলি, সাকুলেন্ট, অ্যালোভেরা,ফার্ন ও তুলসী র মত গাছও আছে এই তালিকায়। যা আপনার ঘরে রাখলে, কার্বন ডাই অক্সাইড ,মিথেন ,ক্লোরোফ্লুরো কার্বনের মতো বিষাক্ত গ্যাসকে শোষণ করার পাশাপাশি অক্সিজেনের মাত্রা বৃদ্ধি করবে, যার ফলে প্রাকৃতিক ভাবেই ঘর থাকবে ঠান্ডা।
এয়ার কুলার , এসি আপনার ঘর ঠান্ডা করে বটে তবে বিদ্যুৎ খরচের পাশাপাশি প্রকৃতিকে ফিরিয়ে দেয় কিছু বিষাক্ত গ্যাস, যারফলে প্রকৃতিতে গরমের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। সম্প্রতি একটি গবেষণায় দেখা গেছে কলকাতার উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ এসি থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরো কার্বন। তাই প্রাকৃতিক উপায়ে ঘরকে ঠান্ডা রাখতে এই সব গাছের জুড়ি মেলা ভার। এই সব গাছের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে যে, ঘরের মধ্যে প্রায় ১০ ডিগ্রী পর্যন্ত তাপমাত্রা কমাতে সক্ষম এরা। স্বল্প পরিচর্যাযুক্ত এইসব গাছ ঘরে রাখলে শুধু শীতল থাকাই নয় মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন গাছের সবুজ রং বা এর বিভিন্ন রঙেরর ফুল আপনার মনকে অবসাদ মুক্ত করবে ও অক্সিজেনের যোগান দিয়ে শরীরকে করে তুলবে কর্মচঞ্চল। মানিপ্লান্ট এর মতো গাছ লাগালে অর্থপ্রাপ্তি হয় কিনা জানা নেই, তবে বাড়ির দূষিত বায়ুর হাত থেকে আপনাকে রক্ষা করে আগামীর চিকিৎসা খরচ যে কমাবে এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। বাংলার ঘৃতকুমারী বর্তমানে পরিচিত অ্যালোভেরা নামে, মোটা ফাঁপা পত্রকের মধ্যে জেলি এবং জল ধারণ ক্ষমতার পাশাপাশি এর থেকে নির্গত অক্সিজেন এসির থেকে কোন অংশে কম নয়। অতিপরিচিত তুলসী গাছ, দিনে ও রাত্রে সমানভাবে অক্সিজেন সরবরাহ করে, স্নেক প্ল্যান্ট,স্পাইডার প্ল্যান্ট এর মত গাছেরা দূষণ কমায় ঘরের আবদ্ধ বাতাসের। বিভিন্ন ধরনের ফার্ণ ও বিভিন্ন ধরনের সাকুলেন্ট তার পাতা,কান্ড এমনকি শিকড় দিয়ে পর্যন্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ অক্সিজেন সরবরাহ করে এবং বাষ্পীভবনে অকৃত্রিম আজীবন কর্মক্ষম থাকে।
এবার ভাবছেন এত গাছ রেখে, বাড়ি বন্ধ করে সপরিবারে যাবেন কিভাবে? কোনও চিন্তা নেই। নিজে থেকেই প্রচুর পরিমাণে জল ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এ ধরনের গাছগুলি অনায়াসেই এক সপ্তাহ পর্যন্ত সুস্থ এবং স্বাভাবিক ভাবে থাকতে পারে। তাই ঘরের মধ্যে রেখে নির্ধিদায় বেরিয়ে পড়তেই পারেন।এবার আসি খরচের কথায়। দু-একটি গাছ বাদে বাকি সব গুলিই অত্যন্ত সহজলভ্য । হাতের কাছে যে কোনও নার্সারী অথবা কোনও কোনও ক্ষেত্রে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন গাছপালা সংক্রান্ত গ্রুপেও চারাগাছ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলে অনায়াসেই পেতে পারেন এবং তাও সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। বিনিময় প্রথা উঠে গেলেও ইদানিং গাছ দেওয়-নেওয়ার রীতি চালু রয়েছে পুরোদস্তুর। এ প্রসঙ্গে রানাঘাট কলেজের অধ্যাপক ড: সোমনাথ কর কি জানান প্রাকৃতিক উপায়ে বিভিন্ন ধরনের গাছ যেমন মানিপ্ল্যান্ট,ব্যাম্বু প্ল্যান্ট,অ্যালোভেরা সহ বিভিন্ন গাছ বাড়ির দূষিত বায়ুর শোষণ করে এবং প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন দেয় ফলে বাড়ি ঠান্ডা রাখে।