দেবু সিংহ, মালদা; ছেলে ইউক্রেনে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় বাংকারে আটকে ছিল দীর্ঘদিন। খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না ছেলের। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে ছেলের বাড়ি ফেরার কামনা তে দোয়া পড়তে বসে ছিলেন মা। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে দেশে ফিরল ছেলে।
মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে নিজের ঘরে ফিরল কিভ মেডিক্যাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মাসুম হামিদ পারভেজ। এখনো পিছু ছাড়ছে না যুদ্ধের সেই ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। বাঙ্কারের মধ্যে অনিশ্চিত ভাবে গাদাগাদি ভিড়ে থাকতে হয়েছে। যোগাযোগ ছিন্ন ছিল বাড়ির সঙ্গেও। বাঙ্কারে থেকে শুনতে হয়েছে একের পর এক গোলা বর্ষনের আওয়াজ। তখন সামনে মৃত্যু ছাড়া আর কিছু ছিল না। ছিল না পর্যাপ্ত খাবার,জল। পরে বাঁচার তাগিদে নিজেদের উদ্যোগেই বাইরে বেরিয়ে আসতে হয়েছে। ভারতের পতাকা নিয়ে ১১ কিলোমিটার হেঁটে কাছের স্টেশন। চারদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন। আলাদা আলাদা ৫ বা ১০ বা ১৫ জনের দল করে হেঁটে কাছের স্টেশনে পৌঁছে ট্রেনে উঠতে হয়েছে। সেখানেও ভিড়। আতঙ্ক সকলের চোখে মুখে। সাহায্য করেছে ইউক্রেনীয় কিছু রেস্টুরেন্টের লোকজন। কোনক্রমে সীমান্ত পেরিয়ে হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি সরকারও সাহায্য করেছে। মুম্বই পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এগিয়ে এসেছে কেন্দ্র সরকার। পরে মুম্বই থেকে কলকাতা হয়ে একেবারে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার। বাড়ির সামনে গাড়ি থেকে নামতেই মাসুনের বাবা মোহাম্মদ মোমিনুদ্দিন, মা হামেদা খাতুন গোটা পরিবার সহ মাসুমকে কাছে পেয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাসুমকে সংবর্ধনা জানাতে এস ডি পি ও শুভেন্দু মন্ডল, সঙ্গে ছিলেন আইসি সঞ্জয় কুমার দাস, ও অন্যান্য পুলিশ কর্মীরা তার বাড়িতে এসেছিলেন।
অন্যদিকে মাসুমকে সংবর্ধনা দিলেন জেলা তৃণমূল সাধারন সম্পাদক বুলবুল খান ও জম্মু রহমান। মাসুম বাড়ি আসছে শুনেই পাড়া-প্রতিবেশীরাও মাসুম কে দেখতে ভিড় জমান। মাসুম এমবিএসের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। বাবা মোহাম্মদ মমিনউদ্দীন স্থানীয় মিটনা হাইস্কুলের শিক্ষক। মা হামেদা খাতুন গৃহবধূ। মাসুমের ২ দিদি রয়েছে বিবাহিত এবং এক ছোট ভাই রয়েছে।হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার মসজিদ পাড়ার বাড়িতে ফিরে স্বস্তি মাসুমের। তবে ভবিষ্যত ভাবনা রয়েছে। কীভাবে এমবিবিএস কমপ্লিট করা যাবে সেটাই চিন্তার। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন রেখেছে মাসুম যাতে তাঁদের পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। পাশাপাশি তাঁর এই আবদনে সাড়া দিয়ে মাসুম ও তাঁর পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তৃণমূল নেতা বুলবুল খান ও জম্মু রহমান। তবে ঘরে ফিরে স্বস্তি পেলেও যুদ্ধের সেই ছবি এখনো চোখের সামনে ভেসে উঠছে মাসুমের। ছেলে যুদ্ধ আতঙ্ক থেকে কবে সাধারণ জীবনে ফিরতে পারবে সে নিয়ে এখনো কিছু বলতে পারছেনা পরিবার।