নিউজ সোশ্যাল বার্তা,শুভঙ্কর ব্যানার্জি :- শিয়ালদহ-লালগোলা শাখার কৃষ্ণপুরে যেখানে মাত্র পাঁচ দিন আগেই পশ্চিমবঙ্গের বহুলচর্চিত রেলগাড়িতে আগুন ধরানোর ঘটনা ঘটেছিলো, সেখান থেকে রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের উপস্থিতিতে গতকাল ক্ষতিগ্রস্ত তিনটি গাড়িকে কাঁচরাপাড়ায় রেলের কারখানায় ফেরত নিয়ে আসা হচ্ছিল। বেলডাঙ্গার কাছাকাছি এসে চাকার সাথে অবশিষ্ট রাবারের ঘর্ষণে বিকটাকারে ধোঁয়াসহ আগুনের স্ফুলিঙ্গ নির্গত হতে থাকে, প্রাথমিক ধাক্কা সামলে অতদূর রাস্তা পাড়ি দেওয়া দুস্কর দেখে রেলের আধিকারিকদের একজন পলাশীর বাসিন্দা ওসমান গনি খানকে ফোন করে সাহায্য চান।
অতরাত্রেও ওসমানের মুখে “না” শোনা যায়নি। ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িগুলি পলাশী ঢোকার আগেই জনাচারেক সঙ্গী ও পর্যাপ্ত বালির বস্তা নিয়ে ওসমান প্রস্তুত থাকে। রেলগাড়িগুলি পলাশী ঢুকতেই ওসমান ও তার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে অগ্নি নির্বাপনে। রেলের আধিকারিকদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে এক অনন্য নজির সৃষ্টি করে ওসমান ও তার সাথীরা। রেলের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলেননি , রাতের অন্ধকারে সাহায্যের হাত বাড়ানো এই ছেলেগুলিকে।
আজকের অসহিষ্ণু সমাজে এখনও হয়তো ওপরতলার মানুষেরা পোষাক দেখে কারা সাধারণ মানুষ আর কারা সন্ত্রাসী নির্বাচন করবে, পদবী দেখে ধর্ম দেখে হয়তো দুস্কৃতির পেহচান হতেই থাকবে, তাই সেই বিতর্কে না যাওয়াই ভালো কারণ, অবিশ্বাসের চশমাটা খুলে দেখলে এরকম একটা নয়, হাজারটা ওসমান হয়তো পাওয়া যাবে যারা শুধু মাত্র একটা ছোট্ট ডাকের অপেক্ষায় থাকে এই বিবেকানন্দ, এপিজে আবদুল কালামের মতো দেশের আর্তের সেবায়।
হিংসার এই আবহে ওদের কাজকে কেউ হয়তো “দৃষ্টান্ত” মনে করবে না তবুও কিছু মানুষের অন্তরে এদের অবদান চিরকাল থেকে যাবে যেমন রেলের সেইসব আধিকারিক যারা খুব কাছ থেকে এদের কর্মকাণ্ড প্রত্যক্ষ করেছেন। কিন্তু তবুও প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে, কবে ধর্মের পরাকাষ্ঠা ছেড়ে আমরা একটু একটু করে মানুষ হতে থাকবো???
জেনে নিন কে এই ওসমান ? নদীয়া জেলার পলাশীর বাসিন্দা । বাবা মায়ের আদরের সন্তান । সারা বাংলা জুড়ে সাধারণ মানুষের রক্ত জোগান দেওয়ার জন্য বিনামূল্যে চালু করেছেন “ইমারজেন্সি ব্লাড গ্রুপ সার্ভিস” নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা । হোয়াটসঅ্যাপ’, ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে যে কোন জায়গার বাসিন্দারা ওই গ্রুপের কাছে রক্তের প্রয়োজনের কথা জানালে সংস্থার সদস্যরা ওসমানের নেতৃত্বে রক্ত জোগাড় করতে লেগে পড়ে এবং ডোনারের মাধ্যম তারা রক্ত দেয় । রাজ্য জুড়ে রয়েছে তাদের সদস্যরা ।
ওসমান গনি খান এর কথায়” এ আর তেমন কি ? একজন নাগরিক হিসাবে আমি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছি” ।এছাড়াও বিভিন্ন রকম সেবামূলক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেই পছন্দ করেন ওসমান।