মলয় দে নদীয়া :- নদীয়ার শান্তিপুরে প্রাচীনকাল থেকে পূজিত হয়ে আসছে ৫২ হাত উচ্চতা কালীমাতা । যাকে ভারতের অন্যতম মৃৎশিল্প বলে দাবি করা হয় । তবে এক কথায় এই কালীমাতাকে বাংলার অন্যতম বা সর্ববৃহৎ পৌষ কালী মাতা । এত উচ্চতা সম্পন্ন কালী মাতা আর কোথাও দেখা যায় না বলে এই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করে থাকেন ।
বৈষ্ণব ও সাক্তের মিলনস্থল শান্তিপুর শহর । এখানে রাধা ও কৃষ্ণের যুগল মূর্তি যেমন ভক্তিভরে আরাধনা করা হয় ঠিক তেমনই উপাসনা করা হয় শক্তির অর্থাৎ কালী মাতার । নদীয়ার শান্তিপুর শহর অন্তর্গত নৃসিংহ পুর পঞ্চায়েত অঞ্চলের কালনা ঘাট নিকটস্থ এলাকায় এই সুউচ্চ মাতৃ মূর্তির আরধনা । কথিত আছে শ্রী চৈতন্য মহা প্রভু লীলা করতে করতে এই নৃসিংহ পুর ঘাট দিয়ে ভাগীরথীর তীর অতিক্রম করেছিলেন ,এই কালনা ঘাটের ত্রিমোহনী গঙ্গোত্রী র উত্তর , পশ্চিম ও দক্ষিণ একই গঙ্গার তিন ধারার সঙ্গম স্থল শ্রীধাম নৃ সিংহ পুর গঙ্গা তটে একান্ন পিঠের শ্রী শ্রী “মা” পূর্ণ শক্তিতে আবির্ভূতা । তবে তাৎপর্য পূর্ণ বিষয় হলো এই পুজো সম্পর্কে এই পুজো কমিটির কর্ম কর্তারা বিষন্ন ছিলেন । কারণ এই দশদিন ব্যাপী কালী পুজো কেন্দ্র করে এখানে প্রতি বছর সুবিশাল মেলা বসে । এবছরও সেখানে মেলার দোকান গুলো কোভিড স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরস্পর পরস্পরের থেকে দূরত্ব বিধি মেনে বসলেও সেই মেলাকে কেন্দ্র করে জন সমাগম ঘটছে । তবে প্রশাসনিক স্তরে কিছুটা নিয়ম শিথিল করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার মাধ্যমে অনুমতি পেয়ে তারা খুশী ।
মাতৃ মূর্তির সাজ অত্যন্ত সাধারণ , মূলত কাগজের ওপরে বা মোটা কাগজের ওপর রং বাহারি কিছু নক্সা ফুটিয়ে মায়ের অঙ্গ সজ্জা করা হয়েছে এবং মাতৃ মূর্তির উদ্দেশ্যে একটি জবার মালা দৃশ্যমান হয়েছে । তবে মায়ের হাতে থাকা মহিষাসুরের মুণ্ড মালা টি মাতৃ মূর্তির আকৃতির তুলনায় যথেষ্ঠ ছোটো , তবে মাতৃ মূর্তির নিচে মহাদেবের অবয়ব টিও যথেষ্টই বৃহৎ ।
পুজো কমিটির সুত্রে জানা গেলো এখানে পুজোর প্রথম দিন আকৃতিতে ছোটো বা সাধারণ একটি কালী মাতা পুজিত হন একই সাথে , তবে সেটির এক রাত্রি কেটে গেলেই বিসর্জন দিয়ে দেওয়া হয় কিন্তু এই বৃহৎ কালী মাতা সেখান থেকে যায় । সেই দিনেই মায়ের ভোগ নিবেদন পর্ব অনুষ্ঠিত হয় । কালী পুজোর সময় শান্তিপুর শহরে বিভিন্ন ক্লাব ও বাড়ির পুজো মিলিয়ে প্রায় হাজার হাজার কালী মায়ের আরাধনা করা হয় । তাদের নামও বিভিন্ন প্রকার । সারা পৌষ মাস ধরেও নানা অঞ্চলে পৌষ কালী মাতা আরাধনা করা হয় । তাদেরই মধ্যে শান্তিপুরে পৌষ মাসে মকর সংক্রান্তির দিন থেকে এই বাহান্ন হাত কালী মাতার আরাধনা করা হয় , এই মাতৃ মূর্তির আরাধনা চলে দশ ধরে । সাধারণ ভাবে কালী পুজো এক রাতের হয়ে থাকে ,অর্থাৎ পুজোর পরের দিন মাতৃ মূর্তির বিসর্জন দেবার রেওয়াজ রয়েছে । কিন্ত তাৎপর্য পূর্ণ ভাবে এখানে চলে ১০ দিনব্যাপী আরাধনা । তবে এখনকার বিশেষ আকর্ষণ হলো ১০ দিনের যজ্ঞ । মায়ের পুজোর প্রথম দিন থেকে যজ্ঞের অগ্নি শিখা জ্বলতে থাকে , পুজোর অন্তিম পর্ব অর্থাৎ বিসর্জন মুহুর্তের আগে এই যজ্ঞের আগুন নির্বাপিত করার রীতি বিদ্যমান । তবে এটি কে শুকনো লঙ্কার যজ্ঞ বলা হয় সাধারণ ভাবে । বেশ কয়েক জন সাধু এই যজ্ঞের সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে থাকেন । এদের মধ্যে সাধু পরেশ ক্ষ্যাপার নাম বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য ।
তবে সূত্রের খবর বিগত ১৪ ই জানুয়ারি , ২০২২ শুক্রবার এই পূজোর শুভ উদ্বোধন পর্ব অনুষ্ঠিত হয়েছে এবছর । উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন শান্তিপুরের বিধায়ক শ্রী ব্রজ কিশোর গোস্বামী , বিডিও শ্রী প্রণয় মজুমদার , শান্তিপুর থানার ওসি শ্রী লাল্টু ঘোষ , এছাড়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্রী রিক্তা কুন্ডু সহ অন্যান্যরা — এমনটাই পূজা কমিটির সাথে কথোপকথন সুত্রে জানা যাচ্ছে । এছাড়া আরো জানা যাচ্ছে আগামী ২৩ সে জানুয়ারি রাত্রি সাতটায় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে মায়ের বিসর্জন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে । এই মাতৃ মূর্তির বিসর্জন একটু ভিন্ন প্রকৃতির । সাধারণভাবে তিন চারটি মোটর পাম্প মেশিনের মাধ্যমে আগত ভাগীরথীর জল সমস্ত মাতৃ মূর্তির ওপর নিক্ষেপ করে বিসর্জন পর্ব অনুষ্ঠিত হবে ।