নদীয়ায় হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের সম্পৃতির সেরা নিদর্শন উলাবিবি বা উলাইচন্ডী

Social

মলয় দে নদীয়া:- নদীয়ার শান্তিপুর থানার অন্তর্গত উলবিবি তলা অঞ্চলে মাঘী পূর্ণিমা তিথি উপলক্ষ্যে আয়োজন করা হলো এক বিশাল মহোৎসবের । স্থানীয় মানুষজন ছাড়াও দূর দুরন্ত থেকে ভক্তবৃন্দের সমাগম ঘটলো এই অঞ্চলে । উক্ত অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা শান্তিপুর মুচি পাড়া অঞ্চলের পান ব্যাবসায়ী মিঠু সাহা এবং তার সাথে অন্যান্যরা ।

ঐতিহাসিক সূত্রে জানা যাচ্ছে এই ওলাই চণ্ডী বা উলা বিবি মায়ের আরাধনা প্রায় ১৯০০ শতাব্দীর পূর্বে । তবে কাকতালীয় বিষয় হলো এটি হিন্দু ও মুসলিম এই উভয় সম্প্রদায়ের সম্মিলিত ভাবে প্রার্থনা জানাবার একজন দেবী ওলাই চণ্ডী বা উলা বিবি । গবেষকদের মতে প্রাচীন কালে কলেরার যখন কোনো তেমন মেডিসিন বা ঔষধ আবিষ্কার হয় নি , ঠিক তখনই কলেরার হাত থেকে মুক্তি পাবার জন্য এই দেবীর নিকট প্রার্থনা জানানো হতো । তবে সনাতন ধর্মমতে এই উলাই চণ্ডী বা উলাদেবি মহিষাসুরের পত্নী হিসাবে পরিচিত । প্রাচীন মহেঞ্জোদারো সভ্যতায় এই দেবী আরাধনা করার হদিস পাওয়া গেছে । একক ভাবে ওলাইচন্ডির পুজো ছাড়াও কোনো কোনো স্থানে সাত বোন বা নয় বোন নিয়ে এই দেবীর পুজো প্রচলিত ছিল । সেই বোনের নাম গুলি হলো — ওলা বিবি , ঝোলা বিবি, আজগাই বিবি , চাঁদ বিবি , বাহর বিবি , ঝেটুনে বিবি ও আসান বিবি । কোনো কোনো আধুনিক গবেষকদের মতে লৌকিক সাত বিবি ধারণাটি হিন্দু সপ্ত মাতৃকা ব্রামহি , বৈষ্ণবী , মাহেস্বরি, ইন্দ্রানী , কৌমারি , বারাহি ও চামুণ্ডা প্রমুখ ধারণার দ্বারা প্রভাবিত । যদিও ভারতবর্ষে আর্যদের পূর্ববর্তী সময় থেকেই এই পুজো প্রচলিত ছিল । তবে প্রাচীন কালে বিভিন্ন গাছতলা , বনাঞ্চল , জলাশয়ের নিকট এই দেবীর প্রার্থনা জানানো হতো । তবে চিরাচরিত প্রথাকে আশ্রয় করে শান্তিপুর বাথনা অঞ্চলে একটি বিশাল বট গাছের নিচে এই দেবীর আরাধনা করা হয় । বটগাছের নিচের দিকে একটি সাদা কাপড়ে র বেষ্টনী বা আবরণ তৈরি করে তার সম্মুখ ভাগে ঘট স্থাপন করে এই ওলাই চণ্ডী মা বা উলা বিবির প্রার্থনা জানানোর রীতি রয়েছে । সাধারণ ভাবে এখানে একটি মন্দিরের ছাউনী করা রয়েছে প্রাথমিকভাবে । তবে স্থানীয় সূত্রে খবর এই বট বৃক্ষের বয়স প্রায় পাঁচ শত বছরেরও বেশি প্রাচীন , গাছটির আশেপাশে বট এর ঝুরিও নেমে এসেছে । যদিও এই বট গাছের পিছন দিকে অবস্থান করছে বাঁশ ঝার । উক্ত অনুষ্ঠানের কর্মকর্তা মিঠু সাহা আমাদের জানাচ্ছেন তিনি কয়েক বছর আগে পাঁচ হাজার টাকা রাস্তায় কুড়িয়ে পেয়েছিলেন , সেই টাকা দিয়ে প্রথম বছর এই মাঘী পূর্ণিমা র দিনে উক্ত অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন । তারপরের বছর থেকেই ভক্তবৃন্দ এই অনুষ্ঠানে আর্থিক সহযোগিতার হস্ত সম্প্রসারণ করেন এবং মাঘী পূর্ণিমা র উলাবিবী বা ওলাই চণ্ডী মাতার অনুষ্ঠান পূর্ণ মর্যাদার সাথে পালিত হয় ।

Leave a Reply