অঞ্জন শুকুল, নদীয়া :আকাশে বাতাসে শরতের আনাগোনা , মাঠে ঘাটে উঁকি দেয় ঘন কাশফুল ।ভোরে হাল্কা শিশিরের স্পর্শে শিউলির সুগন্ধে বয়ে আনে আগমনি বার্তা বহন করে জানান দিচ্ছে মর্তে দশভুজার আবির্ভাব ।দেশ,কাল, ধর্ম, বর্ন জাতিভেদ ভুলে সকলেই মেতে উঠেছে আনন্দে ।তার মধ্যেও গোটা পৃথিবীকে গ্রাস করে নিচ্ছে কঠিন করোনা ব্যাধী ।আর এই অতিমারি থেকে বাঁচতে সকলে বাড়িয়ে দাও তোমার হাত ।
এবছর নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের মাজদিয়ার নাঘাটা পূর্ব পাড়া গ্রাম বারোয়ারীর এবছরের ভাবনা বাড়িয়ে দাও তোমার হাত । কলকাতা থেকে নাঘাটার দুরত্ব ১১০ কিমি । কৃষ্ণনগর থেকে ৩০ কিমি , বাঙলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া এই পূজা মন্ডপের প্রবেশের পথের ধারে শোভা পেয়েছে ক্ষুদার্ত শিশুর আর্তনাদ ।খিদের জ্বালায় শিশু বেছে নিয়েছে ভিক্ষাবৃত্তি , যদিও পথচলতি মানুষ শিশুর করুন আর্তনাদে বাড়িয়ে দিচ্ছে সাহায্যের হাত ।এদৃশ্য যেমন সকলকে মুগ্ধ করেছে পাশাপাশি দুই বছর লকডাউনের স্কুল বন্ধ গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যাহত। ছাএ, ছাএী দের ভবিষ্যতের কথা ভেবে মানবিক শিক্ষক গ্রামের গাছ তলায় পড়াশোনা করাচ্ছেন এমন ছবিও ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । করোনা পরিস্থিতিতে করোনা রোগীকে এবং তাদের পরিবারকে সাহায্য করতে নীজেদের জীবনের ঝুকি নিয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে রেড় ভলেন্টিয়ার্স । সেই প্রতিচ্ছবি তুলে ধরা হয়েছে । রক্ত দান মহৎ দান, রক্ত দিয়ে প্রান বাঁচান এছবি যেমন ধরা পড়েছে,পাশাপাশি সাধারণ মানুষের জীবনে দুয়ারে সরকার, কিভাবে খ্যাতি লাভ করেছে সেটাও তুলে ধরা হয়েছে । এছাড়াও কন্যাশ্রী ,এস সি এস,টি ওবিসি সার্টিফিকেট, দুয়ারে রেশন, স্বাস্হ্য সাথী, সর্বশেষ নিদর্শন লক্ষী ভান্ডার পূজা মন্ডপের মাঠ কে আলোকিত করে রয়েছে । হাসপাতালে চিকিৎসকের উপর খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে, তার প্রতিবাদ স্বরুপ নিন্দা ও চিকিৎসকের সাথে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে ।এছাড়াও ভারতবর্ষ ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ তার ছবি স্পষ্ট ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । এখানে হিন্দু, মুসলমান,জৈন, খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের ঐক্য , একসঙ্গে বসবাস ও কোলাকুলির ভাবনা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে । পাশাপাশি তালিবানি শাসন শিরোনামে মেয়েদের উপর অত্যাচারের মর্মান্তিক ঘটনার জলজ্যান্ত প্রমাণ তুলে ধরা হয়েছে । বিশ্বের মানবাধিকার কমিশনকে নির্মম নির্যাতনের প্রতিবাদের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে ।একের পর এক সমসাময়িক ঘটনা দেখতে দেখতে মুল পূজা মন্ডপের সামনে প্রবেশ করবে । মন্ডপ তৈরি করা হয়েছে পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার দোতলার মাটির বাড়ির আদলে । তবে অবশ্যই মাক্মপড়ে ,নিজ দৃরত্ব বজায় রেখে ।
কমিটির পক্ষ থেকে সদা সর্বদা মাইকিং প্রচার হচ্ছে নীজে সুস্থ থাকুন, অপর কে সুস্থ রাখতে বাড়িয়ে দাও হাত ।মা দূর্গার এক হাতে তিরশুল অন্য হাতে করোনা ওসুর বধ। একহাতে আম্রপল্লব , অন্য হাতে গঙ্গা জল ।দেখলে মনে হবে করোনা কে দূর করতে শান্তি র জলে করোনা দূরিকরনে।প্রতিবছর নাঘাটা পূর্ব পাড়া গ্রাম বারোয়ারী অভিনবত্বে নজর কাড়ে । বাজারে , চায়ের দোকানে, মাঠে ঘাটে আলোচনায় তাদের চিন্তা ভাবনা নিয়ে । তবে পূজা কমিটির সভাপতি তিতাস বিশ্বাস বলেন আমরা নিজেরাই পরিশ্রম করে এই থিম তৈরি করেছি ।এরমধ্যেই প্রচুর পুরস্কার তাদের ঝুলিতে চলে এসেছে । তাদের আরো দাবি এবছরও অন্যান্য বছরের ন্যায় বিশ্ববাঙলার শ্রেষ্ঠ পুরস্কার তাদের ঝুলিতেই আসবে । তাদের দাবি এই জন্যই তাদের থিমের সার্থক নাম বাড়িয়ে দাও তোমার হাত । আমরাও তাদের নিজেদের হাতে তৈরি থিমের প্রয়াস কে অভিনন্দন জানাই । সমস্ত লিষ্ট দিলাম ।নাঘাটা পূর্বপাড়া গ্রাম বারোয়ারির পক্ষ থেকে এ বছর দুর্গা পুজোর ভাবনা “বাড়িয়ে দাও তোমার হাত”,
পূজামণ্ডপে তারা যে যে ভাবনাগুলি তুলে ধরেছেন তা নিম্নরূপঃ
*পথচলতি অফিস যাত্রীদের দিকে হাত বাড়িয়ে ক্ষুধার্ত শিশু বলছে আমায় কিছু দান করো (বাবু দান করতে উদ্যত)।
*রক্তদান শ্রেষ্ঠ দান, রক্ত দিয়ে প্রাণ বাঁচান। মুমূর্ষ রোগীর পাশে দাঁড়ান।
*করণা মহামারীর ফলে স্কুল বন্ধ, প্রত্যন্ত গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা না থাকার কারণে শিক্ষাদানে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন শিক্ষক।
**দুয়ারের সরকার প্রকল্পঃ
*লক্ষ্মীর ভান্ডার/স্বাস্থ্য সাথী ফর্ম ফিলাপ চলছে সরকারের সহযোগিতায়।
*ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আয় আরো বেঁধে বেঁধে থাকি। ভয় নেই ডবল ডোস হয়ে গেছে)
*আফগান মহিলার পাশে দাঁড়াক বিশ্ব মানবাধিকার কমিশন। নির্মমতার হোক অবসান।
*হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে স্বাস্থ্য কর্মীর উপর আঘাত হানবেন না। বিশাল কর্মযজ্ঞে সহযোগিতা করুন। বাড়িয়ে দিন আপনার হাত।
*করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবায় রেড ভলেন্টিয়ার্স।