অঞ্জন শুকুল, নদীয়া: কথায় বলে যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে। আজ এমন একজন মহিলার জীবন কাহিনী তুলে ধরব যা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের শিবনিবাস হালদারপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা কুমকুম বিশ্বাস পেশায় টোটো চালক। স্বামী অমল বিশ্বাস,স্ত্রী কুমকুম ও দুই মেয়ে পায়েল ও কোয়েল কে নিয়ে ছোট সংসার। স্বামী দিনমজুরের কাজ করতেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাস স্বামী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হলেন। স্বামীর চিকিৎসার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেন কুমকুম বিশ্বাস। শেষ পর্যন্ত নিয়তির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় কুমকুম। অমর বাবু মারা গেলেন । স্বামী মারা যাবার পর কিভাবে সংসার চালাবেন সে নিয়ে চিন্তায় পড়েন কুমকুম। চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে কঠিন সংগ্রামের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েন কুমকুম। প্রথমে এক জায়গায় আয়ার কাজ শুরু করেন। মেয়ে দুটোকে কষ্টের মধ্যে বড় করে বিবাহ দিয়েছেন। এখন সংসারের তিনি একা। দীর্ঘ লকডাউনের ফলে আয়ার কাজ ও হাতছাড়া হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত, ধারদেনা করে একটা টুকটুকি কিনে ফেলেন। বর্তমানে পরিচয় কৃষ্ণগঞ্জ ও কৃষ্ণনগর এক নম্বর ব্লকের মহিলা টোটো চালক।
তার কথায় তার দরিদ্র পরিবারের অসহায় স্বামীকে চিকিৎসা করার জন্য টোটো অথবা অন্যান্য গাড়িতে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য কাউকে অনুরোধ করলেও তারা কর্ণপাত না করেই ফিরে যেত ।কারণ, অভাবী সংসারে যদি তাদের ভাড়া দিতে না পারি সেই অজুহাতে। সেদিনের কথা মনে পড়তেই কুমকুমের চোখের কোনে জল গড়িয়ে পড়ে । সেদিনের কথা ভেবেই কোন অসুস্থ পরিবার চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌছাতে অসুবিধা হলে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পৌছে যান কুমকুম। তার কথাই স্বামীকে বাঁচাতে না পারলেও তার স্মৃতি আঁকড়ে আমি অন্যকে বাঁচাতে চাই। বিনিময়ে সকলে গাড়ি ভাড়া দিতে চান। কুমকুম কোন পয়সা নেন না উপরন্তু অসহায় মানুষকে ঔষধ পর্যন্ত কিনে দেন ।কুমকুমের এহেন কাজের জন্য সকলের কাছেই তিনি প্রিয় ও কুমকুম ম্যাডাম হয়ে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন।
এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত কুমকুম একজন আদর্শ নারী। তাকে দেখে যে সমস্ত নারী নিজেকে অসহায় মনে করে কুমকুমের কাজ তাদের প্রেরনা দেবে বলেই সকলের বিশ্বাস। ইচ্ছে থাকলে সমস্ত কিছু কে জয় করা যায় সম্ভব তার জলজ্যান্ত প্রমাণ কুমকুম । আমরাও দূর্গা পূজার প্রাক্কালে এ যুগের দূর্গা কে কুর্নিশ জানাই ।