চুপি চুপি “চুপির চরে”

Social

শুভ্রাংশু দাশগুপ্ত: শীতের শুরুতে একদিনের আউটিংয়ে, চট করে একটু বেরিয়ে এলাম চুপির চর থেকে, আরেকবার। কলকাতা থেকে কাটোয়া লোকাল ধরে প্রায় ৩ ঘন্টার যাত্রায় পূর্বস্থলী ও সেখান থেকে টোটোতে চেপে মিনিট কুড়ির মধ্যেই ‘চুপির চর’ (Chupi)।

গঙ্গার এক অশ্বক্ষুরাকৃতি হ্রদ ও তাতে নানান জলজ পাখির আনাগোনা। ইদানিং অনেকেই পরিচিত এই জায়গার সাথে, বিশেষত বার্ড ফোটোগ্রাফাররা। যারা প্রকৃতি ও পাখি ভালবাসে, তাদের কাছে কলকাতা থেকে শীতকালীন আউটিংয়ের এক দারুণ ঠিকানা চুপির চর। এবছর দেরিতে শীত পড়ায় এখনও পরিযায়ী পাখির সংখ্যা একটু কম, তবে ধীরে ধীরে চুপিতে আসতে শুরু করেছে বিদেশি অতিথিরা। ট্রেনে উঠে ফোন করে দিয়েছিলাম পূর্ব পরিচিত মাঝি শ্যামল দা কে। একটা মোড়ের মাথায় অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য।

এখানকার মানুষগুলো বেশ ভাল, মাঝি থেকে দোকানদার, টোটোচালক সবার ব্যবহার মুগ্ধ করে। শীতের মিঠে রোদ গায়ে মেখে ১১কিমি দীর্ঘ জলধারার নীল জলে নৌকায় চড়ে ভেসে বেড়ানোর মজাই আলাদা। কয়েকঘন্টার নৌকা বিহারে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি দেখা ও তাদের কলরব শোনা। জলের পাড়ে কোথাও হলুদ সর্ষের খেত। অজস্র পানকৌরি, ফিঙে, ইগ্রেট, হেরন, কখনও বা মাছরাঙা – এসব দেখতে দেখতে পানার পাশ দিয়ে নৌকা এগিয়ে চলে।

এরপরেই দেখা মিলল শীতে এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ‘রেড ক্রেস্টেড পোচার্ড’এর (Red Crested Pochard) ঝাঁকের। মাত্র দু-একদিন আগেই একটা দল ভিন দেশ থেকে পাড়ি দিয়ে প্রতি বছরের মত এবারেও এসেছে চুপিতে। একসাথে ত্রিশ চল্লিশটার একটা দল জলে সাঁতার কাটছে। পুরুষ পাখিগুলোর মাথা লাল রঙের ও চ্যাপ্টা মত। সবে এসেছে বলে এখনও তারা একটু ভিত। নৌকা একটু তাদের দিকে এগোতেই সবকটা একসাথে উড়ে গেল ও আবার জলে নামল একটু দূরে গিয়ে। নৌকা আবার তাদের পিছু নিয়ে কাছে চলল, তবে এবার সন্তর্পণে। তাদের ছবি তোলার পর দেখা মিলল একজোড়া ‘কমন কুট’এর (Eurasian coot)।

আরেক জায়গায় অগভীর জলে ‘লেসার হুইসলিং টিল’এর (Lesser Whistling Teal) একটা বিশাল ঝাঁক। সংখ্যায় তারা শতাধিক হবে। একসাথে কলরব তুলেছে। তাদের সাথেই ভিড়েছে হেরন ও ইগ্রেট। জলের পাশের ডাঙায় ও পানার মধ্যে দেখা মিলল কয়েকটি পার্পেল মূরহেন (Purple Moorhen)। এরাও এসেছে নাকি দূর দেশ থেকে। এছাড়াও অন্য সময় চুপির চরে দেখা মেলে জাকানা, নর্দার্ন পিনটেল, লিটল গ্রিব, স্যান্ডপাইপার প্রভৃতি বিভিন্ন প্রজাতির দেশি বিদেশি পাখির। চুপির এই জলধারায় ভাসতে ভাসতে দূরে চোখে পড়ে ইস্কনের নির্মিয়মাণ বিশাল মন্দিরটি, যদিও সেটি গঙ্গার ওপারে। নৌকাবিহার ও পাখি দেখা সেরে যখন পাড়ে আসছি, তখন সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছে। এবার টোটো ধরে ফিরতি পথে পূর্বস্থলী স্টেশন পৌঁছে ফেরার ট্রেন ধরা। কোনো প্ল্যানিং ছাড়া হুট করে শহরের গন্ডি ছাড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে একটা আউটিং ও কোলাহল মুক্ত পরিবেশে পাখিদের সান্নিধ্যে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ঘরে ফেরা।

  কীভাবে যাবেন: হাওড়া/শিয়ালদহ থেকে কাটোয়া লাইনের ট্রেনে পূর্বস্থলী স্টেশন। সেখান থেকে চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয়ে, টোটোতে। অথবা কলকাতা থেকে সরাসরি গাড়িতে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে ধরে সরস্বতী ব্রিজ পার করে কালনা হয়ে সমুদ্রগড়ের পর পূর্বস্থলী স্টেশন, সেখান থেকে কাষ্টশালি বাজার…তারপর পাখিরালয়।

কখন  যাবেন : নভেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি উপযুক্ত সময়।

কোথায় থাকবেন: চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয়। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ: চুপি কাষ্টশালি পাখিরালয় (পূর্বস্থলী), ফোন: ৯০৭৩৫৬৫৭২৩ (সোম-শনি: সকাল ১১টা থেকে সন্ধে ৬টা), ইমেল: booking@purbasthali.com, ওয়েবসাইট: www.purbasthali.com

ছবি: লেখক

Facebook : News Social Barta 24×7

WhatsApp : 9434158779