মঙ্গলবার থেকেই চালু হচ্ছে বাংলার প্রধান তাঁত কাপড়ের মঙ্গলার হাট ! উচ্ছ্বাসিত নদীয়াবাসী

Social

মলয় দে, নদীয়া :-তাঁতের শাড়ি নিয়ে বাঙালীর আবেগ চিরকালীন। বাংলার বাইরেও এই ঐতিহ্যবাহী তাঁতের শাড়ির চাহিদা বেশ ভালোই। তাই তাঁতের শাড়ি বহু মানুষের রুজি-রোজগারের রাস্তাও বটে। তাঁতের শাড়ির বিপননের ক্ষেত্র হিসেবে হাওড়ার মঙ্গলা হাটের নাম সর্বজনবিদিত, শোনা যায় এশিয়ার মধ্যে সর্ববৃহৎ হাট এটি, পশ্চিমবঙ্গের প্রধান তো বটেই!

শান্তিপুর ও ফুলিয়া থেকে বহু ব্যবসায়ী রাজ্যের বিভিন্ন হাটে যান তাঁতের কাপড় বিক্রির উদ্দেশ্যে। হাওড়ার মঙ্গলা হাট তারমধ্যে একটি অন্যতম বড় এবং পুরোনো হাট। আগামী মঙ্গলবার থেকে খুলে যাচ্ছে এই হাট। মূলত মঙ্গলবার ভোরেই এই হাট বসে। শান্তিপুর ,ফুলিয়া, আশতলা , চাকদহ নবদ্বীপ, ধাত্রীগ্রাম, সমুদ্রগড়, ধনেখালি, বিষ্ণুপুর,থেকে হাজার হাজার ব্যবসায়ী গাড়িতে করে আগের দিন রাতেই কাপড় নিয়ে এই হাটের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। শান্তিপুর ও ফুলিয়ার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই তাঁতশিল্পের ওপর নির্ভর করেই দিন গুজরান করেন। কেউ তাঁত বোনেন, কেউ সুতো পাকান, ড্রাম হাটেন, কাপড়ে মাড় দেন, ভাঁজ ইস্ত্রি করেন। কেউ বা বিক্রিও করেন।

করোনা অতিমারিতে গতবছর থেকেই তাঁতের শাড়ির বিপননে বেশ ভাঁটা পড়েছে। হাটগুলিও বন্ধ রয়েছে দীর্ঘদিন। শান্তিপুরের তিনটি বড় হাট বিধি মেনে খোলার অনুমতি পেয়েছে আগেই। কিন্তু লোকাল ট্রেন বন্ধ থাকায় ক্রেতার দেখা মিলছে না। মঙ্গলা হাট এর আগে কিছুদিনের জন্য খুললেও সংক্রমণের জন্য পুনরায় তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু এই হাটে আবার কাপড় কেনাবেচা শুরু হোক এটাই চাইছিলেন ব্যবসায়ীরা। তাই রাজ্যের কারামন্ত্রী নদীয়ার বাসিন্দা উজ্জ্বল বিশ্বাসের কাছে আবেদন জানান তারা। কারামন্ত্রী কথা বলেন সমবায় মন্ত্রীর সঙ্গে। এর পরেই হাট খোলার উদ্যোগ শুরু হয়। কারামন্ত্রী বলেন, “বহু ব্যবসায়ী সমস্যার মধ্যে আছেন। আাগামী সপ্তাহ থেকেই ওখানে ফের তাদের ব্যবসা শুরু হবে।” সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, “সংক্রমন কিছুটা কমায় ঘেরা জায়গায় থাকা শাড়ির হাট দিয়েই মঙ্গলাহাট খোলা হচ্ছে। আস্তে আস্তে বাকিটাও খোলা হবে। তবে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের কথা মাথায় রেখে সবরকম সতর্কতা বিধি মেনে চলা হবে।”

নদীয়া জেলা চেম্বার অফ কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের যুগ্ম সম্পাদক তারক দাস বলেন, “তাঁতশিল্প বড় সমস্যার মধ্যে পড়েছে। আনরা মন্ত্রীর কাছে আবেদন রেখেছিলাম। এই মঙ্গলবার থেকে ফের মঙ্গলাহাট খোলা হচ্ছে। পূজোর আগে এই উদ্যোগে অনেকটাই স্বস্তি পাবেন তাঁতশিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজন।” শান্তিপুর তাঁতবস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক অরুণ ঘোষ বলেন, “এটা খুবই খুশীর খবর। বিপণনের সমস্যা অনেকটাই মিটবে বলে আশা করা যায়।”

গতকাল এই খবর পাওয়ার পর থেকে তাঁতশিল্পের সাথে যুক্ত পরিবারগুলো আবার পুরোনো ছন্দে ফিরে এসেছে। গনগনে আঁচের আগুনে আবার তারা চাপিয়েছেন ভারী ইস্ত্রি। শুরু হয়েছে তাঁতের শাড়ি ভাঁজ, ইস্ত্রি এবং কাপড়ের গাঁট বাঁধার কাজ। অনেকদিন বাদে ব্যবসায়ীদের বাড়ির সামনে আবার গাড়ি এসে দাঁড়াবে, সেই গাড়িতে কাপড়ের গাঁট তুলে আবার তারা রওনা দেবেন হাটের উদ্দেশ্যে সেই আগের মতোই…. এই আনন্দ কিছুটা হলেও হাসি ফুটিয়েছে ব্যবসায়ীদের মুখে। তাই এ কথা বলাই যায় পুজোর আগে এই হাট খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তে আশায় বুক বাঁধছেন তাঁত শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সকল মানুষেরাই।

Leave a Reply