গৃহস্থে সন্তানরুপে পূজিত হন গোপীনাথ

Social

প্রীতম ভট্টাচার্য্য: জলঙ্গীর ধার ধরে গড়ে উঠেছে শম্ভুনগর গ্রাম। এখানে সাধারনত বাস করে হালদার সম্প্রদায়ের মানুষজন।এখানে শম্ভুনগর চারটি – চড় শম্ভুনগর, পুরাতন শম্ভুনগর, শ্যাম শম্ভুনগর আর নতুন শম্ভুনগর। আর এই নতুন শম্ভুনগরের বাসিন্দা কল্যান হালদারের বাড়ীতে পূজিত হন গোপীনাথ ও রাধিকা।জলঙ্গীর জল তখন খরস্রোতা, আকাশে গ্রীস্মের মেঘ ক্রমশ ঘনীভূত, হরিনারায়ন হালদার স্নান করতে নেমেছিলেন ঘাটে।সুটাম দেহ অদম্য সাহসী শান্ত স্বভাবের হরিনারায়ন শুনতে পেলেন ওপার থেকে ভেসে আসছে কে কোথায় আছেন আমাদের বাঁচান। হরিনারায়ন দেখতে পান তিনজন লোক ওপারে একটি নৌকা থেকে চিৎকার করছে।কোনোদিকে না তাকিয়ে খরস্রোতা জলঙ্গী পেরিয়ে হরিনারায়ন বহু কষ্টে পৌঁছে যান তাদের কাছে। জিজ্ঞেস করেন কি হয়েছে? লোকগুলি বলেন নৌকায় গুপিনাথ কে নিয়ে তারা অগ্রদ্বীপে যাচ্ছিলেন, পথে চোরাবালিতে তাদের নৌকা আটকে যায় কিছুতেই নৌকা এগোচ্ছে না। ইশ্বর ভক্তি ছিলো খুব হরিনারায়নের। হরিনারায়ন কি করবে ভেবে না পেয়ে ঠাকুর কে দুহাত তুলে প্রণাম করে নৌকা সরাতেই নৌকা আপনা আপনি আবার জলে ভাসতে থাকে। দুপুর পেরিয়ে প্রায় সন্ধ্যা, হরিনারায়ন ওই লোকগুলিকে বলেন ওপারে আমার বাড়ি আজকের দিনটা আমার ওখানে আহার ও বিশ্রাম করে কাল সকালে রওনা হবেন, পথে এরপর অন্ধকার হয়ে যাবে আপনাদের নৌকা নিয়ে যেতে অসুবিধা হবে। তারপর তারা নৌকা ঘাটে লাগিয়ে হরিনারায়নের বাড়িতে এসে ওঠেন।সেখানেই ঠাকুরদালানে রাখা হয় গুপিনাথকে। এরপর থেকে কৃষ্ণনগর রাজবাড়ীতে বছরে দুবার গোপীনাথ যখন আসতেন তখন এই হালদারবাড়ীতে তিনি বিশ্রাম নিতেন। তারপর কিছু কারণবশতঃগোপীনাথ কৃষ্ণনগরে

আসা বন্ধ করে দিলেন।সেইসময় ২০০২ সালে গ্রামবাসীদের অনুরোধে হালদারবাড়ীর আর এক বংশধর ধীরেন্দ্রনাথ হালদার বাড়ীতে গোপীনাথ ও রাধারাণীর (রেপ্লিকা) প্রতিষ্ঠা করে নিত্যপুজা করতে থাকেন।এভাবেই চলে আসছিলো কৃষ্ণনগরের পাশ্ববর্তী গ্রাম পঞ্চায়েতের রুইপুকুর নতুন শম্ভুনগরে হালদারবাড়ীতে গোপীনাথের পুজো।প্রতি জন্মাষ্টমীতে গ্রামবাসীদের উদ্যোগে নদীর ধারে বসে মেলা তখন ভক্তদের দর্শনের জন্য গোপীনাথ ঘরের বাইরে ঠাকুরদালানে আসেন।ধীরেন্দ্রনাথের দুই মেয়ের বিবাহ হয়ে যায়। ধীরেন্দ্রনাথ ও তার স্ত্রী মারা যান।গোপীনাথের ভার এসে পড়ে বাড়ীর আর এক সদস্য কল্যানহালদারের ওপর। পেশায় চাকুরীজীবি কল্যানবাবু ছিলেন চরম নাস্তিক। গ্রামবাসীদের অনুরোধে তিনি ও তার স্ত্রী রত্না হালদার এই গোপীনাথের দায়িত্ব নেন। এক ছেলে ও মেয়ে, মেয়ের বিবাহ দিয়েছেন।এখন নিজে পুজোকরেন গোপীনাথের। তিনিবলেন আমাদের বাড়ীর ছেলে গোপীনাথ। তিনি নিজের জোগার নিজেই করেন, স্ত্রীর সহযোগীতায় ও গ্রামবসীদের উদ্যোগে আমি নিত্যসেবা করি, তার অলকৌকিক ঘটনা আমার সাথে নিত্যদিন ঘটে। গোপীনাথ এখন এই বাড়ীর সদস্য।আমার পরে আমার প্রজন্ম হয়তো এগিয়ে আসবে। এই একটুকরো অগ্রদ্বীপে পরম্পরাগতভাবে কৃষ্ণনগরের পাশেই নতুনশম্ভুনগরের হালদারবাড়ীতে সত্বান রুপে পুজিত হন গুপিনাথ।

Leave a Reply