সত্যিই কি ভূত আছে ? নদীয়ার নবদ্বীপে ভূত রহস্য উন্মোচনে যুক্তিবাদী সমিতি

Social

মলয় দে নদীয়া:- সত্যিই কি ভূত আছে ? নাকি মানুষের দীর্ঘদিনের মননে প্রোথিত অন্ধবিশ্বাসের ফল এই ভূত নামক আজব ধারনা ও গুজব। হ্যাঁ এমনই ঘটনা ঘটে গেলো নবদ্বীপ শহরের মহাপ্রভু কলোনীর বিষ্ণু দাস লেনে ( প্রতাপনগর বাজারের পিছনে )

ভূতের উৎপাতের খবর শুনে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখার পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে তিন সদস্যের একটি টিম গণেশ দেবনাথ, সোমনাথ রায় এবং প্রতাপ চন্দ্র দাস তদন্তের জন্য বা বলতে পারেন ভূত রহস্য উন্মোচনের জন্য ছুটে যান। পাড়ার প্রতিবেশিদের কাছে গিয়ে খোঁজ খবর নিতেই উঠে আসে বিভিন্ন রকমের তথ্য মানে ভূত রহস্যের গালগল্প। স্থানীয় একজন, নাম জয়দেব দেবনাথ জানান, ঐ পাড়ায় দু’জন কিছুদিন আগে মারা যায়, একজনকে খুন করা হয় এবং আরেকজন গৃহবধূ আত্মহত্যা করে। পাড়ার প্রায় সকলের বিশ্বাস ঐ দুই মৃতদেহের আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে ভূত হয়ে। অনেকের বাড়িতে নাকি ঐ ভূত বা আত্মা রাতে বাড়ির দরজায় ঠকঠক করে আওয়াজ করছে ইত্যাদি ইত্যাদি। এতে এলাকার লোকজনেরা আতঙ্কে আছে, ভয়ে সন্ধ্যার পরে ঘর থেকে বেরোতে চায়ছে না। বাচ্চারাও আতংকিত, ভীত। বেশ কয়েকজন ভূতের ভয় কাটাতে ওঝা গুনীনের কাছে গিয়ে জল পড়া খেয়েছে, তাবিজও নিয়েছে।
ভূতের দোষ কাটাতে, পাড়ায় অপছায়া তথা আত্মার শান্তির জন্য আজ ভগবৎ গীতা পাঠের আয়োজন ও ধর্মীয় নাম সংকীর্তনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উচ্চস্বরে মাইক (প্রায় ১৫ টা মাইক) বাজিয়ে সকাল থেকেই চলছে ভগবানের গান, সন্ধ্যা হলে গীতা পাঠ। এতে নাকি ভূত পালাবে। আগামীকাল ভূত তাড়ানোর জন্য আয়োজন করা হয়েছে মহা-যজ্ঞের। সেই ভূত বা আত্মাকে এভাবে তাড়ানোর জন্য এমন কুসংস্কারময় অনুষ্ঠান করা হচ্ছে। এই অনুষ্ঠানের জন্য পাড়ার লোকেরা কেউ পাঁচশো, কেউ সাতশো, কেউবা হাজার টাকা দিয়েছে। এভাবেই চলছে ভূত তাড়ানোর অভিনব কৌশল।

উক্ত খবর পেয়ে যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা সেখানে ছুটে যান। আজ সন্ধ্যায় স্থানীয় মানুষদের নিযে সচেতনমূলক অনুষ্ঠান করা হয়, পারার দেওয়ালে পোস্টারিং করা হয় এবং সমিতির লিফলেটও বিলি করা হয়। মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হয় ভূত বলে কিছু হয় না।

ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির নবদ্বীপ শাখার সম্পাদক প্রতাপ চন্দ্র দাস বলেন, ” ভূতের ধারণাটাই ভ্রান্ত ও গুজব। মানুষ মারা গেলে তার আত্না বলে কিছু থাকে না। মন, চিন্তা, চেতনা সবই মস্তিষ্ক-কোষের ক্রিয়া কলাপের ফল। মস্তিষ্কের মৃত্যুর সাথে সাথে তথাকথিত আত্মাও উধাও হয়ে যায়। মৃত্যুর পর আত্মা, ভূত, প্রেত নিয়ে মানুষের মধ্যে যে অন্ধবিশ্বাস রয়েছে তা সমাজের পক্ষে ক্ষতিকারক। তাই ভূতের ভয় কাটাতে বা ভূত তাড়াতে যজ্ঞ, ভাগবৎ গীতা পাঠ বা কীর্তন করাটা অজ্ঞতার পরিচায়ক, অর্থের অপচয় এবং একশ্রেণির ধান্দাবাজ মানুষের সুবিধা করে দেওয়া। ভূতে ধরা বলে পরিচিত ঘটনাগুলি আসলে এক ধরনের মানসিক রোগ বা সমস্যা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে কনভার্সন ডিসঅর্ডার (conversion disorder) । সঠিক বৈজ্ঞানিক চিকিৎসায় ভূতেধরা রোগীরা সুস্থ হয়ে ওঠেন। এ ছাড়া ভৌতিক উপদ্রব বলে যে সব ঘটনার কথা শোনা যায়, তার পিছনেও মানুষেরই ভূমিকা থাকে। আমাদের সমিতি এরকম অজস্র ভৌতিক ঘটনার অনুসন্ধান করে তার রহস্যভেদ করেছে। আবার ভূতে ধরা মানুষকে বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পাইয়ে দিয়ে তাদের সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে দিয়েছে। নবদ্বীপবাসীর কাছে আমাদের আবেদন, আপনারা গুজবে কান দেবেন না। গুজব ব্যাপারীদের প্ররোচনার শিকার হবেন না। এরকম কোনও ঘটনার কথা শুনলে আমাদের সমিতির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাদের সমস্যা সমাধানে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করব। মনে রাখবেন, ভূত তাড়ানোর নামে কেউ যদি মন্ত্র-তন্ত্র, দোয়া-তাবিজ, কবচ-মাদুলি বা কোনও প্রলোভনের সাহায্যে মানুষের রোগ সারানোর দাবি করে বা দাবিসহ বিজ্ঞাপন দেয় তাহলে তা হবে আইনের চোখে অপরাধ। দ্য ড্রাগস্ এ্যাণ্ড ম্যাজিক রেমিডিস ( অবজেকশনাবল্ এ্যাডভারটাইজমেন্ট ) এ্যাক্ট, ১৯৫৪ অনুযায়ী এ ধরনের ক্রিয়াকলাপ শাস্তিযোগ্য। ”

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সমিতির সদস্যরা – অর্পন রায়, সোমনাথ রায়, সমীর রঞ্জন সাহা, গনেশ দেবনাথ, তপন ভট্টাচার্য, সোমনাথ ব্যানার্জি ও প্রতাপ চন্দ্র দাস। এলাকার মানুষজন খুব উৎসাহের সহিত যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যদের বক্তব্য শোনেন। এলাকায় ভীতির পরিবেশ অনেকটাই এখন নিয়ন্ত্রণে।

Leave a Reply