অঞ্জন শুকুল, নদীয়া: নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জের ভজন ঘাট টুঙ্গী গ্রাম পঞ্চায়েতের সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম নোনা গঞ্জ। গ্রামটিতে মূলত আদিবাসী সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষের বসবাস। এই গ্রামে বাস করেন জগন্নাথ মল্লিক (৬২)পেশায় দিনমজুর। লকডাউনের ফলে তেমনভাবে কাজ নেই। সংসারে চার মেয়ে,স্বামী স্ত্রী । গতবছর লকডাউন এর সময় বড়ো মেয়ে মারা যান অসুখে।বর্তমানে তিন মেয়ে স্বামী স্ত্রী নিয়ে বসবাস করেন । ঠিকভাবে কাজ না থাকায় পরিবারে দু বেলা খাবার জোটে না তাদের।অভাবী সংসার তার ওপর মেজো মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে। ঔষুধ কেনার টাকা না থাকায় চিকিৎসক দেখানো সম্ভব হয়নি।প্রতিবেশীদের কাছে ছুটে গেলেও কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি।হতাশা বুকে বেধে নিয়ে ফিরতে হয়েছে।
অসুস্থ মেয়ে অচৈতন্য হয়ে পড়েন। বাবা হয়ে মেয়ের মুখে কষ্ট সহ্য করতে না পেরে চোখের জলে বুক ভাসান।অসহায় বাবা মায়ের কান্না শুনে চুপ থাকতে পারেননি পাহারারত বিএসএফ জওয়ান। ছুটে এসে কোম্পানির কমান্ডারকে ঘটনা জানান পুরো ঘটনাটি। সঙ্গে সঙ্গে কমান্ডার এর সহযোগীতায় অসুস্থত মেয়েকে নিজেদের গাড়ি করে কৃষ্ণগঞ্জে গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। সাথে ঔষধ খাবার চিকিৎসার খরচ নগদ সহ এম্বুলেন্স ভাড়া পর্যন্ত দিয়ে দেয় বিএসএফ। ফলে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে পায় মেয়েকে অসহায় বাবা।
চার দিন জেলা হাসপাতালে ভর্তি থাকার পর মেয়ে কে বাড়ি নিয়ে আসেন জগন্নাথ বাবু। চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে।আর রোগীর যাতে গরম না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে। সমস্ত খরচ, খাবার বিএসএফ করলেও গরমে কতদিন কিভাবে থাকবেন মেয়ে ? চিন্তায় পড়ে যায় কর্মীরা।
শেষ পর্যন্ত জগন্নাথ বাবুর মেয়েকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন নোনা গঞ্জ বিএসএফ এর 8নম্বর ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার। তড়িঘড়ি বিদ্যুৎ দপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে জগন্নাথ বাবুর বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিলেন।বাড়িতে জ্বললো আলো সাথে সাথে নতুন পাখা কিনে বাড়িতে হাওয়ার ব্যাবস্থা করলো বিএসএফ। মানবতার আরেক নজির গড়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিলো বিএসএফ। সবাই বিএসএফ এর এই কাজকে কুর্নিশ জানিয়েছেন।