জানেন কি লোকনাথ ব্রহ্মচারী সম্পর্কে বৃত্তান্ত ! করোনা পরিস্থিতিতে তাঁর তিরোধান দিবসে ম্লান হলো উৎসব

Social

মলয় দে, নদীয়া : গত বছরের মতো এবারও লোকনাথ পুজো সেই অনারম্বরেই । নদীয়ার শান্তিপুর শহরে বর্তমানে বিক্ষিপ্ত ভাবে বিভিন্ন এলাকাতে লোকনাথ পুজো হলেও শান্তিপুরে প্রধানত দুইটি অঞ্চলে যথেষ্ট আরম্বরের সাথে এই পুজো অনুষ্ঠিত হতো বেশ কয়েক বছর ধরে । শান্তিপুর সর্ব্বানন্দী পাড়া লোকনাথের মন্দির এবং অপরটি শান্তিপুর কলেজ নিকটস্থ বাইগাছি মোড়ের লোকনাথ মন্দিরে । এছাড়াও বেশ কয়েক বছর ধরে যথেষ্ট সমারোহের সাথেই লোকনাথের পুজো অনুষ্ঠিত হবার চিত্র ধরা পড়েছে অনেক মানুষের বাড়িতেই । বাংলায়

বাবা লোকনাথের মহিমার প্রচার এমন কিছু বেশি দিনের নয় । তথ্য বলছে আটের দশকের শেষ দিকে ক্রমশ গ্রাম বাংলায় ক্রমশ লোকনাথের পুজোর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে । কিন্তু ইতিহাস সূত্রে জানতে পারা যায় এই মহা যোগীর জন্ম হয়েছিলো আজ থেকে প্রায় তিনশ বছর আগে । কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো যদি তাই হয় তাহলে কেনো এত পরে লোকনাথের পুজোর সমারোহ ? উত্তরে ভক্তদের দাবি স্বয়ং লোকনাথ ব্রহ্মচারী তার ভক্তদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছিলেন তার প্রয়াণের একশ বছর পর তাঁর কথা সবার সামনে তুলে ধরতে । আর সেটাই আজ করে চলেছেন তার ভক্তরা ।

জানা যায়, ১৭৩০ সালের ৩১ শে আগস্ট ভগবান শ্রী কৃষ্ণের জন্মাষ্টমী তিথিতে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন লোকনাথ । ঘোষাল পরিবারের সন্তান লোকনাথের জন্মস্থান নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে । অনেকেই বলেন উত্তর চব্বিশ পরগনার চাকলা গ্রামে লোকনাথের জন্মস্থান আবার অনেকের মতে কচুয়া গ্রামে লোকনাথের জন্ম । ইতিহাস সূত্রে জানা যায় লোকনাথের পিতা রামনারায়ণ ঘোষাল হলেন একজন নিষ্ঠাবান সৎ ব্রাহ্মণ অন্যদিকে তার মা কমলাবতীও ছিলেন একজন ধর্ম পরায়ণ মহিলা । তাদের মোট চার সন্তানের মধ্যে প্রথম তিনজনকে সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ করা গেলেও চতুর্থ পুত্র লোকনাথ কে সাংসারিক বন্ধনে আবদ্ধ করতে অসমর্থ হন তার পিতামাতা ।

তাইতো মাত্র ১১ বছর বয়সেই তার গুরু ভগবান গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত ধরে গৃহ ত্যাগ করে কালীঘাট থেকে বেরিয়ে পড়েন দেশ বিদেশে । আবার বাবা লোকনাথ কে দেবাদিদেব মহাদেব ও বলা হয় । নানান ব্রত উদযাপন করে কঠোর তপস্যার জন্য চলে গিয়েছিলেন সুদূর হিমালয়ে । সেখানে গিয়ে চারিদিকে বরফের স্তূপের মধ্যে লোকনাথের গুরু ভগবান গঙ্গোপাধ্যায় সাধনায় বসেন ।
কিন্তু সেই গুহা ছেড়ে মুক্ত আকাশের নিচে বরফের আসনে ধ্যানে মগ্ন হন বাবা লোকনাথ । দিন , সপ্তাহ , মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও সেটা কেউ বুঝতে পারিনি । বরফের মধ্যেই ধ্যানমগ্ন লোকনাথের শরীর ঢেকে যেত । সেটা তার গুরুদেব বরফের গুহার ভিতর থেকেই লক্ষ্য করতেন । কোনো দিন গণনার হিসাব ছিল না । তবে কথিত আছে লোকনাথ বাবার শরীরের জমা বরফ নব্ববই বার গলে জল হয়ে গিয়েছিল বলে দাবি করেন তার অনুগামীরা । এভাবেই তার গুরুদেব বুঝিয়ে ছিলেন তারা নব্বই টি বছর পার করে দিয়েছিলেন ।
এরপরেই ঘটে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা । পাহাড়ের গা বেয়ে ভোরের কাঁচা রোদ এসে পড়ছে বাবা লোকনাথের সিদ্ধাসনে । সেই সময় বরফের গুহার ভিতর থেকে তার গুরু ভগবান গঙ্গোপাধ্যায় উঁকি দিয়ে দেখলেন সিদ্ধাসনে লোকনাথ বাবা নেই । সেখানে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব । গুরুদেব ভাবলেন তাহলে কি ভুল দেখলাম ? এরপরেই তিনি বরফের গুহা থেকে বেরিয়ে দেখেন সেখানে বাবা লোকনাথ বসে আছেন । আবার তার পরো মুহূর্তেই দেখেন সেখানে দেবাদিদেব মহাদেব । গুরুদেব বুজলেন বাবা লোকনাথ আজ সিদ্ধি লাভ করেছেন । গুরু হয়েও তিনি প্রণাম করলেন শিবকল্প মহা যোগী বাবা লোকনাথ কে ।

তথ্য বলছে বাংলার ১২৯৭ সালের ১৯শে জৈষ্ঠ্যর দিনে পরলোক গমন করেছিলেন লোকনাথ সেটা ছিল ইংরেজির ১৮৯০ সালের ১ লা জুন ; ১৬০ বছর বেঁচে ছিলেন লোকনাথ ব্রহ্মচারী । অর্থাৎ এই দিনেই লোকনাথ ব্রহ্মচারী র পুজো অর্চনা সবটাই তার তিরোধান দিবস উপলক্ষ্যে তার আত্মার উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য ।

Leave a Reply