মলয় দে, নদীয়া :-সংস্কৃত বা আরবি যে শব্দ থেকে উৎপত্তি হোক না কেন বাউলের মূল অর্থ জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সংগীতে সাধনার মাধ্যমে মানুষের চেতনা বৃদ্ধি। অন্য গানের সাথে এর মূল পার্থক্য হলো এই বিশেষ ধরনের গানের ক্ষেত্রে গায়ক-গায়িকাদের জীবনযাত্রায় সাধনা পরিলক্ষিত হয় এবং একসাথে আঁখড়ায় সাধন ভজন করেন। ২০০৫ সালে ইউনেস্কো বিশ্বের মৌখিক এবং দৃশ্যমান ঐতিহ্যের মাঝে বাউল গানকে অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ ঘোষণা করে তবে সপ্তদশ শতকে, শ্রীচৈতন্যামৃত গ্রন্থের আদিলীলা অংশের এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। বাউল কুল শিরোমণি লালন সাঁইয়ের গানের মধ্য দিয়ে বাউল মত অর্থাৎ লোকাচার ও ধর্মমত পরিচিতি লাভ করে। টপ্পা ঝুমুর কবিগানের পরবর্তীতে পল্লীগীতিরও পর আধুনিক প্রজন্ম পর্যন্ত এ প্রজন্মের কাছেও সমান জনপ্রিয়।
পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া ,মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, বাঁকুড়া, দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব বাংলার বেশ কিছু অঞ্চল শুধু নয় সুদূর পাকিস্তানে পর্যন্ত এ ধরনের গানের প্রচলন আছে। সুফি মুসলমান এবং হিন্দু সাহজিয়া বাউল উভয়ই একই সাথে গলা মেলাতেন! কোরানে পুরানে কোনদিনই বিরোধ বাধে নি!
সনজিৎ মন্ডল, গোষ্ঠ গোপাল, পূর্ণদাস বাউল, মমতাজ বেগম, শাহ আলম সরকার, লক্ষণ বাউল, বিজয় সরকার, গৌড় ক্ষ্যাপা, গোলাম ফকির ,মুক্তা সরকার, মনির খান, আরো বহু শিল্পীরা সারা পৃথিবীব্যাপী এই গানের প্রচারক হিসেবে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আর গ্রামবাংলার পুরনো পরিবেশ ধরে রাখতে আজও বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে শ্রোতা দর্শকরা অপেক্ষায় থাকেন বাউল গানের। তবে এই শিল্পীদের প্রধান জীবিকায় গত লকডাউনে থাবা বসিয়েছিল করোনা পরিস্থিতি। তা কিছুটা কাটতেই আবারো দিশাহীন তারা।
আমাদের ক্যামেরায় ধরা পড়লো এইরকমই এক এ প্রজন্মের বিখ্যাত শিল্পী স্মৃতি কণা রায়। মালদা জেলার অধিবাসী বাবা পরিদাস বাউলের মুখ থেকে শুনে শুনেই শিখেছিলেন তিনি, তাল লয় সুর স্বরলিপি কিছুই শেখেননি কোন গুরুর কাছ থেকে তবুও ঈশ্বর প্রদত্ত ভাবেই হয়তো অনেকটাই রপ্ত করেছেন তিনি, আর যার ফলে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা ইউটিউবে সমর্থনের মাধ্যমে বিখ্যাত বানিয়েছে তাকে।
নদীয়ার শান্তিপুর নৃসিংহপুর বড়ডাঙ্গাপাড়া গতকাল দোল উৎসব উপলক্ষ্যে তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা। স্বাস্থ্যবিধি কথা জানিয়ে , দর্শক এবং শ্রোতাদের সাহস জোগালেন গান গেয়ে। বললেন, বেঁচে থাকার রসদ হল গান, কর্মের অনুপ্রেরণা হলো গান, একাকীত্ব, সুখ দুঃখের ভাগীদার এই গান।