মলয় দে, নদীয়া:- আর পাঁচটা সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতা শিবিরের মতন নদীয়ার শান্তিপুর সুত্রাগড় অঞ্চলে সুত্রাগড় ব্যায়াম সমিতি ক্লাবের পরিচালনায় শান্তিপুর মরমী সহযোগিতায় চলছিলো থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় কর্মসূচি। অপরিচিতা মাঝ বয়সী এক ভদ্রমহিলার আবেদন, তিনি কিছু বলতে চান! অনুমতি সাপেক্ষ মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে অঝোরে কেঁদে ফেললেন তিনি! শোনালেন তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ ভুলের কথা।
শান্তিপুর বাগআঁচড়া অঞ্চলের ইতি মালাকার ১৯৯১ সালের শান্তিপুর কলেজের বি এ তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী, ওই কলেজেরই বি কম পাঠরত দশরথ পাটোয়ারীর বন্ধুত্ব দাবিতে বিবাহের আবেদনে সাড়া দিয়ে রাজি হন তিনি । মেয়ের সুখের কথা ভেবে, তার ইচ্ছা কে মান্যতা দিয়ে পাশের গ্রামের রঘুনাথপুরের সম্ভ্রান্ত ব্যবসায়ী পরিবারের পাত্রী দেওয়ার বিষয়ে জাতপাত , থ্যালাসেমিয়া দেখেননি ইতি দেবীর পরিবার। ওই বছরই মেয়ে বিবাহ হয় তাদের। ব্যবসার ফাঁকে ফুরসত পেলেই নিজস্ব গাড়িতে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তেন দম্পতি। ১৯৯২ সালে একটি কন্যা সন্তান জন্মায় , ওই শিশুর যখন দেড় বছর বয়স এক অসুস্থতার কারণে মারা যায় তাদের সন্তান, জানতে পারেন থ্যালাসেমিয়ার আক্রান্ত তাদের সন্তান, তারা দুজনেই থ্যালাসেমিয়া ক্যারিয়ার। প্রগাঢ় ভালোবাসায় আঁচ লেগেছিলো না এত টুকু! সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পরবর্তীতে কোন এক অভিভাবকহীন শিশুর দত্তক নেবেন তারা। ইচ্ছা না থাকলেও কলকাতার বিখ্যাত হোমিওপ্যাথি ডাক্তারের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় এর কারনে গিনিপিক হন তারা। ডাক্তারের দাবি বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতি সাধনের ফলে কোনো পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াহীন ভাবেই দম্পতিদ্বয় ক্যারিয়ার হওয়া সত্ত্বেও সুস্থদীর্ঘায়ু শিশুর জন্ম সম্ভব। সন্তান লালসায় রাজি হয়ে গেলেন ডাক্তারের কথায়। ১৯৯৮ সালে দ্বিতীয় কণ্যা সন্তানের জন্ম দেন, আনন্দে মাতোয়ারা হয়ে ভুললেন রক্ত পরীক্ষার যাচাই করার প্রয়োজন। সেই সন্তানও মারা যায় ২০০৩ সালে। শোকে তাপে ইতিদেবী পাথর হয়ে গেলেন! দু-দুবার সন্তান সান্নিধ্যে এসে স্বামী দশরথ বাবুর সন্তান লালসা বাড়লো। স্ত্রীকে কিছু না বলেই ব্যবসায়িক কারণে বাইরে থাকার অজুহাতে, বাদকুল্লার এক নিঃসন্তান বিধবা মহিলার গর্ভে জন্ম দিলেন আর এক কন্যা। কোনো এক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতি দেবী জানতে পারেন স্বামীর অবৈধ সম্পর্কের কথা, এরপর থেকে শুরু হয় তিক্ততা ক্রমাগত হিংসায় পরিণত হয়, সুখের সংসার ভেঙে ছারখার, দুজনে বাস করা বাড়ি টুকু বাদে প্রায় সকল সম্পত্তি বেচে দিয়েছেন দশরথ বাবু! গ্রামের কিছু মানুষের চাপে শেষ আশ্রয়টুকু কেড়ে নিতে পারেননি দশরথ বাবু। আজও সুখের স্মৃতি বয়ে নিয়ে তিনি ক্লান্ত! থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় না করার মতো জীবনের চরম এই উপলব্ধি এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের বোঝাতেই তিনি পৌঁছে যান এ ধরণের অনুষ্ঠানে। একঘেয়ে টিউশনি পড়ানোর থেকে অব্যাহতি চেয়ে , থ্যালাসিমিয়া কাজের সাথে যুক্ত হতে চান তিনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রক্ত এবং থ্যালাসিমিয়া বিষয়ক সেমিনারে উপস্থিত গুণীজনের সান্নিধ্যে হয়ত পূরণ হতে পারে তার এই ইচ্ছা!