মলয় দে, নদীয়া :-গতকাল দুপুর একটা থেকে সন্ধ্যে সাতটা পর্যন্ত, একটি ক্ষ্যাপা শূকর মোট আট জন কে কামড়ে আক্রান্ত করে। প্রথম ঘটনাটি ঘটে শান্তিপুর রামনগর বেজপাড়া মাঠের পাশে বাড়ি নিরঞ্জন বিশ্বাসের মেয়ে কালো রঙের জন্তু দেখে আঁতকে ওঠেন! ক্ষণিকের মধ্যে নিরঞ্জন বাবুকে মাথা দিয়ে গুঁতো দিয়ে ফেলে, বাঁ পাশের বুকের পাঁজরের উপরের বিরাটার দুটি দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে। এলাকার সকলে রে রে করে তেড়ে আসলে, সাময়িক ভাবে সেই স্থান ত্যাগ করে শুয়োর টি। এরপর রক্তাক্ত নিরঞ্জন বাবু কে শান্তিপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে আসলে, কৃষ্ণনগর স্থানান্তরিত করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কিছুটা দূরে অ্যাথলেটিক মাঠের পাশে কৃষি কাজ করছিলেন, ক্ষিতীশ বিশ্বাস তার দিকে ধেয়ে আসলে, কোদাল উঁচু করতেই পালিয়ে যায় , কিন্তু পনেরো-কুড়ি মিনিটের মধ্যে ঘুরে এসে তাকে গুঁতো মেরে ফেলে দিয়ে, উরু এবং অন্ডকোষের একাংশে কামড় বসায়। কিছুটা দূরে শান্তিপুর শ্মশান এর পাশে এক ১২ বছর বয়সী শিশুকে কামড়ায়, এভাবেই একের পর এক অর্থাৎ মোট আট জনকে দংশন করেছে বলেই এলাকায় সূত্রে জানা যায়।
যার মধ্যে দুজন এখনো কৃষ্ণনগর এবং কল্যাণী হাসপাতালে ভর্তি। বাকিরা প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়িতে চলে আসলেও গুরুতর জখম হয়েছেন তারা। গঙ্গার তীরবর্তী গবারচর এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কৃষ্ণ রাহা জানান, বিকাল পাঁচটা নাগাদ ওই এলাকা দিয়ে প্রচন্ড দ্রুতগতিতে আসা ওই শূকরটিকে শেষবারের মতো গঙ্গায় জলে ঝাঁপ দিতে দেখে স্থানীয়রা, নৌকা এবং জাল নিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করলেও বিফলে যায় সমস্ত চেষ্টা! শূকরটি ভেসে যেতে দেখে অনেক দূর পর্যন্ত, তারপর সন্ধ্যা নেমে আসায়, তা গতিপ্রকৃতি জানা যায় না। ঘটনাস্থলে চাঞ্চল্য এবং দুশ্চিন্তা কাটাতে শান্তিপুর থানার প্রশাসন পৌঁছায় বিকাল চারটে নাগাদ, সেই থেকে ওই গঙ্গার তীরবর্তী এলাকায় নিয়মিত নজরদারি চালান তারা। এরপর কৃষ্ণনগর বনদপ্তর থেকে আধিকারিক এবং একটি রেস্কিউ টিম এসে তন্ন তন্ন করে রাত দশটা পর্যন্ত খুঁজেও পাননি ওই জন্তুর দেখা। তবে তাদের কাছে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অনুমান করা হয় গঙ্গার ওপারে হুগলি জেলার শক্তিনগরে শুয়োর চাষ করা দু একটি ফার্ম আছে, দলছুট হয়ে নদী সাঁতরে এসেছে বলেই আপাতত অনুমান করেন তারা। তবে বুনো শুয়োর নয় বলেই অনুমান করছেন তারা। সাধারণের উদ্দেশ্যে দুশ্চিন্তা মুক্ত করে সাবধান থাকার বার্তা দিয়ে যান। আহত প্রত্যেকের বাড়ি ঘুরে দেখেন বনদপ্তর এর আগত প্রতিনিধি দল। এমনকি হাসপাতালেও কারা এখনো কি অবস্থায় ভর্তি আছে তার তদারকি করছেন বলে জানা গেছে। এলাকার মানুষ দুচোখের পাতা এক করতে পারিনি সারারাত! তবে গত কালকের পর থেকে আজ পর্যন্ত এখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। এলাকার প্রবীণরা জানান, শুকরের দাঁত নির্দিষ্ট সময়ে কেটে দিতে হয়, এই শুকরটি দাঁতের জন্যই ক্ষেপে গিয়েছে!