সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে ঐতিহ্যবাহী লাচ্ছা -সিমুই উৎসব – ২০২৫

Social

অভিজিৎ হাজরা , হাওড়া :- ‌ সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে পবিত্র ঈদ মিলন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী লাচ্ছা -সিমুই উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত হল গ্ৰামীণ হাওড়া জেলার জগৎবল্লভপুর বিধানসভার গাববেড়িয়া চাইল্ড হুড কে জি স্কুলে।এই বছর লাচ্ছা -সিমুই উৎসব চতুর্থ বর্ষে পদার্পণ করলো।সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মুজিবুর রহমান মল্লিক এই উৎসব প্রসঙ্গে ‌দাবি করে বলেন, আম উৎসব,ইলিশ উৎসব, পিঠে পুলি উৎসব ,নবান্ন উৎসব বিভিন্ন জায়গায় অনুষ্ঠিত হলে ও এই প্রথম লাচ্ছা -সিমুই উৎসব পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম ” ।

এই উৎসবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের প্রশাসনিক আধিকারিকবৃন্দ, লেখক – সাহিত্যিক – কবি,বাচিক শিল্পী, সংগীত শিল্পী, নাট্যব্যক্তিত্ব, অভিনেতা, শিক্ষক। উপস্থিত ছিলেন হিন্দু -মুসলিম – খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষজন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সেবা দল এর আধিকারিক সহ সদস্য -সদস্যা সহ কর্মী – সমর্থকবৃন্দ।

উপস্থিত ছিলেন সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির ব্যক্তিত্ব , কর্মী – সমর্থকবৃন্দ। এই বছর লাচ্ছা -সিমুই উৎসবে বিভিন্ন রকমের লাচ্ছা -সিমুই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল। প্রদশর্নীতে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে ২৩ জন তাদের নিজেদের হাতে তৈরি লাচ্ছা -সিমুই প্রদশর্ন করেন এবং উপস্থিত অতিথি- অভ্যাগতদের এবং দর্শকদের প্রত্যেককে তা খাওয়ার জন্য পরিবেশন করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ লাচ্ছা ইউনিক রেসিপি ‘ , ‘ নবাবী লাচ্ছা ‘ , ‘ জর্দা সিমুই ‘ , ‘ মোটা সিমুই ‘ , ‘ সুজির সিমুই ‘ , ‘ দুধ সিমুই ‘ , ‘ বাদশাহী সিমুই ‘ , ‘ সরু সগমুই ‘ , ‘ সুরো সিমুই ‘ , ‘ জবদানা সিমুই ‘ , ‘ গড়গড়া সিমুই ‘ , ‘ পায়েস সিমুই ‘ , ‘ পোলাও বিস্কুট । এই উৎসবের মূল উদ্যোক্তা সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মুজিবুর রহমান মল্লিক বলেন,” সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে পবিত্র ঈদ মিলন উপলক্ষে ঐতিহ্যবাহী লাচ্ছা -সিমুই উৎসব ২০২২ সালে সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতি সূচনা করেছে। ঈদের পর বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে সংস্কৃতির মিলন উৎসব। সম্প্রীতির ভারতবর্ষে আমরা সকলে হাজার হাজার বছর ধরে একসাথে বসবাস করি,যে যার মত ধর্ম পালন করি, উৎসবে সকলে একসাথে মিলিত হই ।সে হোক বসন্ত উৎসব,রাখি বন্ধন উৎসব বা বিভিন্ন পূজো পার্বন বা ঈদ,খ্রীস্ট মাস। ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক উৎসব, সাংস্কৃতিক উৎসব সাথে সাথে সূচনা হয়েছে।যেমন ইলিশ উৎসব,আমি উৎসব,পলাশ উৎসব, মাটি উৎসব,খাল – বিল উৎসব প্রভৃতি।এক একটি মনীষী বা সমাজ সংস্কারক এক একটি উৎসবের সূচনা করেছে।সবাই মিলনের কথা বা একে অপরের মধ্যে মিলন বা মেলবন্ধন ঘটানোর জন্যই বিভিন্ন উৎসবের সূচনা করেছে। সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে ঐতিহ্যবাহী লাচ্ছা -সিমুই উৎসব ২০২২ সাল থেকে সারা ভারত জরি শিল্পী কল্যাণ সমিতি সূচনা করেছে। ঈদের পর হিন্দু -মুসলিম – খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে সংস্কৃতি মিলন উৎসব।এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের লাচ্ছা -সিমুই রন্ধন করা হয়। এবং সমবেত অতিথি বন্ধু – বান্ধব বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ভাগ করে খাওয়া হয় এই উৎসবে বিভিন্ন ধরনের লাচ্ছা -সিমুই রন্ধন করা হয়। এবং সমবেত অতিথি, বন্ধু – বান্ধব, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে ভাগ করে খাওয়া হয়।এর সাথে চলতে থাকে বাংলা সংস্কৃতি অঙ্গনে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি। এই উৎসবে যেমন থাকে পুরাতন দিনের হাতে তৈরী জব দানা সিমুই, গড়গড়া সিমুই, তেমনি থাকে আধুনিক মেশিনে তৈরী বিভিন্ন সিমুই। বাংলার সিমুই ছাড়া, বিহার,উত্তরপ্রদেশ, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন ধরনের সিমুই এর আয়োজন করা হয়। সম্প্রীতির ভারতবর্ষে, কবিগুরুর কথায় ” নানা ভাষা,নানা মত, নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখো মিলন ও মহান “। কাজী নজরুল ইসলামের ” মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু মুসলমান, মুসলিম তার নয়ন মনি হিন্দু তাহার প্রাণ ” ।কবি গুরু এবং নজরুল ইসলামের এই বাণী কে পাথেয় করেই সৌভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতির বন্ধনে আমাদের ঐতিহ্যবাহী লাচ্ছা -সিমুই উৎসব। উপস্থিত অতিথিবৃন্দ বর্তমান পরিস্থিতিতে এই উৎসব এর প্রাসঙ্গিকতা প্রসঙ্গে সুচিন্তিত ও বাস্তবিক বক্তব্য রাখেন।এই উৎসব উপলক্ষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত,গীতিআলেখ্য, আবৃত্তি, শ্রুতি নাটক পরিবেশিত হয়।এই লাচ্ছা -সিমুই উৎসবে হিন্দু -মুসলিম – খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষের জনজোয়ার প্রামান করল এই উৎসবের সফলতা।

Leave a Reply