মলয় দে, নদীয়া :-তাঁর আত্ম বিবরণ অনুযায়ী আনুমানিক ১৩৮১ খ্রিস্টাব্দে, মাঘ মাসের আজকের দিনে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তিনি অর্থাৎ বাল্মিকী মুনির সংস্কৃত রামায়ণের পদ্যাকারে সহজ সরল ভাষায় বঙ্গানুবাদ করেন বিশ্ব বরেণ্য কবি কৃত্তিবাস ওঝা।
১৮৯৫ সালে কবি নবীনচন্দ্র সেন রানাঘাটের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর থাকার সুবাদে কৃত্তিবাসের বাড়ি ও দোলমঞ্চ স্থান দুটি কিনে নিয়ে কলকাতার হাইকোর্টের এটর্নি হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ও বঙ্গবাসী পত্রিকার সম্পাদক যোগেন্দ্রনাথ বসুর কাছে চিঠি লেখেন কবির স্মৃতি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য। ১৯১৫ সালে গঠিত হয় “কৃত্তিবাস সেবা সমিতি”। ইতিপূর্বে নবীনচন্দ্র সেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ১৩২২ বঙ্গাব্দের ২৭শে চৈত্র কৃত্তিবাস স্মৃতি রক্ষা কমিটি আয়োজন করেন স্মৃতি উৎসবের।
কবি কৃত্তিবাস এর স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের উদ্দেশ্যে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আশুতোষ মুখোপাধ্যায় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আমন্ত্রণ করেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে বোলপুর থেকে ফুলিয়া আসার অসুবিধার কথা জানিয়ে তিনি একটি চিঠি লেখেন সমিতির সম্পাদক নগেন্দ্র নাথ মুখোপাধ্যায় কে যা আজও সংগ্রহীত লাইব্রেরীতে। সেদিনের উৎসবে ফুলিয়ার জনমানবহীন প্রাঙ্গণে উপস্থিত হয়েছিলেন কাশিমবাজারের মহারাজা মনীন্দ্র নাথ নন্দী, নাটোরের মহারাজা জগদিন্দ্রনাথ রায়, নগেন্দ্র নাথ বসু, প্রাচ্যবিদ্যা মহার্ণব,চন্দ্র রায়, কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায়, ঢাকার ঐতিহাসিক যতীন্দ্র নাথ রায়, কবি যতীন্দ্র মোহন বাগচী প্রমূখ দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব।এই উৎসবের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট সতীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় মহকুমা শাসক নিরোদ চন্দ্র রায় রেল কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে তৎকালীন বৈঁচি স্টেশন এর পরবর্তী খানিক দূরে রাস্তার ধারে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করেন, শুধু তাই নয় মেঠো পথের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার জন্য কৃত্তিবাস রোড তৈরি করেন অতি তৎপরতার সাথে।আরো একবার ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করা হয়। 1967 সালে তৎকালীন শান্তিপুরের উন্নয়ন আধিকারিক বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য উদ্যোগে সরকারি অর্থানুকূল্যে তৈরি হয় কৃত্তিবাস মেমোরিয়াল লাইব্রেরী কাম মিউজিয়াম। ভারত ফ্রান্স চুক্তি অনুযায়ী কবি কৃত্তিবাস অনুলিপিত সপ্তকাণ্ড কৃত্তিবাসী রামায়ণের মাইক্রোফিল্ম সংগৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। ৫০১ পৃষ্ঠার এই পান্ডুলিপির মাইক্রোফিল্ম টি সংরক্ষিত আছে সংগ্রহশালায়। তেরোটিরও বেশি ভাষায় রামায়ণ এবং রামায়ণ ও মহাভারত বিষয়ক দুই হাজারের বেশি সংগ্রহীত বই সম্ভবত পৃথিবীর আর কোথাও নেই বলেই দাবি করেন বর্তমান লাইবেরিয়ান তরুণ সরকার।
আজকের এই বিখ্যাত দিনে, গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালার পক্ষ থেকে ফুলিয়ার বয়রায় কবির অস্থি ভস্ম সমাধিস্থ করার বেদীতে মাল্যদান করেন গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালার পক্ষ থেকে। এরপর তিনি যে বটবৃক্ষের তলায় পুঁথি লিখতেন সেখানে মাল্যদান করেন। প্রাক্তন লাইব্রেরিয়ান কেশবলাল চক্রবর্তীর কথার মধ্যে দিয়ে, বোঝা যায় দুপুর তিনটে পর্যন্ত কোন সরকারি আধিকারিক এসে পৌঁছান নি।
গত বছরেও তিন দিনব্যাপী নাচ ,গান ,আবৃত্তি, নাটক, স্মৃতিকথা, ম্যারাথন দৌড় , মাঠ ভর্তি মেলা সবটাই হয়েছিলো , এবছর এলাকাবাসীর উদ্যোগে শুধুই পুজো!
তবে স্থানীয় পঞ্চায়েত মেম্বার অনুপ ঘোষ করোনার দোহাই দিয়ে পঞ্চায়েতের উদ্যোগে দু-একটি ব্যবস্থা করেছেন বলে জানান! রামায়ণ পাঠের সময় অত বড় মাঠে শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত শুধু মাত্র চারজন। গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকায় কৃত্তিবাস গ্রন্থাগার সংগ্রহশালার সভাপতি ও সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বে থাকা সরকারি আধিকারিকদেরও উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। নদীয়া জেলা সভাধিপতি জানান সময় অভাবে দায়িত্বপূর্ণ পদে ছেড়েছি গত বছর, স্থানীয় বিধায়ককে ফোনে পাওয়া যায়নি, সাংসদ বলেন আমি জানতাম না! ।
স্থানীয় শিল্পী নিলয় কুমার বসাক আন্তরিকতার টানে তার নিজে হাতে তৈরি মাটির কৃত্তিবাস তুলে দিলেন গ্রন্থাগারের হাতে।
এলাকাবাসীরা আক্ষেপের সুরে বলেন, রাম নিয়ে কাড়াকাড়ি মারামারি! আর সেই রামায়ণ বঙ্গানুবাদের বিশ্ববরেণ্য কবি কৃত্তিবাস তবে কি ব্রাত্য হচ্ছে ক্রমশ?